Loading..

খবর-দার

০৯ জুলাই, ২০২০ ০২:২৭ অপরাহ্ণ

মোস্তাফিজের চোখও সাউদাম্পটনে

বিকেল চারটা বাজার অনেক আগেই মোস্তাফিজুর রহমান কাল বসে গেছেন টেলিভিশনের সামনে। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না খেলার চ্যানেলটা। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট বাংলাদেশ সময়ে শুরু হবে কটায়? খেলাটা কোন চ্যানেলে দেখাবে? মোস্তাফিজের কৌতূহলী প্রশ্ন। ১১৭ দিনের বিরতির পর কাল মাঠে গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। অনেকের মতো তাঁরও আগ্রহী দৃষ্টি এই সাউদাম্পটন টেস্টে।

করোনাভাইরাসের মধ্যেই নতুন স্বাভাবিকতায় মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট। ক্রিকেটকে করোনামুক্ত রাখতে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে আইসিসি। বাস্তবে পরিবর্তিত এই নিয়মগুলোর ব্যবহার কেমন হয়, সেটিই সূক্ষ্মভাবে দেখতে চান মোস্তাফিজ। মুঠোফোনে বলছিলেন, 'নতুন নিয়মগুলোর সঙ্গে সবাই কীভাবে মানিয়ে নেয়, সেটি বুঝতেই টেস্টটা দেখতে চাচ্ছি।' নতুন নিয়মগুলোর মধ্যে বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত। সব পেসারের মতো এটি ভাবিয়ে তুলেছে মোস্তাফিজকেও, 'এতে রিভার্স সুইং করানো কঠিন হয়ে যাবে। ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে গেলে পুরোনো বলে রিভার্স সুইং খুব দরকার। ওরা (ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ) সম্ভবত ডিউক বলে খেলবে। ওদের কন্ডিশনে এই বল এমনিই সুইং করে বেশি। দেখি এবার কী হয়।'

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ বছর হয়ে গেছে মোস্তাফিজের। আবির্ভাবেই একের পর এক বিস্ময় উপহার দেওয়া এই বাঁহাতি পেসারের আগের ছন্দটা কোথায়, এ প্রশ্ন তাঁকে শুনতে হয় প্রায়ই। যদিও পরিসংখ্যান উজ্জ্বলই আছে। এখন পর্যন্ত খেলা ১১২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মোস্তাফিজ উইকেট পেয়েছেন ১৯৫টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের তিন সেরা উইকেটশিকারি সাকিব আল হাসানের ১১২ ম্যাচে উইকেট ছিল ১৮০টি, সমান ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজার উইকেট ১৬৮টি আর আবদুর রাজ্জাকের ছিল ১৬৪টি। সর্বশেষ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও মোস্তাফিজ ভালো বোলিংয়ের ছাপ রেখে নিয়েছেন ২০ উইকেট, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় ছিলেন চতুর্থ স্থানে। ৫ উইকেট নিয়েছেন দুই উপমহাদেশীয় প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেই।

মোস্তাফিজের কথা শুনে অবশ্য মনে হতে বাধ্য, সমালোচনায় খুব একটা মাথাব্যথা নেই তাঁর, 'এসব ভাবি না। এখন ব্যাটসম্যানরা আমাকে খুব ভালো চেনে, শুরুর সঙ্গে তুলনা করলে তো হবে না। আমি ম্যাচে কখন বোলিং করি, সেটিও দেখতে হবে। এখন বেশির ভাগ সময় শেষের ৫ ওভারে আসতে হয়। তখন ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে যায়, আক্রমণাত্মক থাকে, ফিল্ডিং থাকে রক্ষণাত্মক।'

লাল বলেও মোস্তাফিজ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারতেন। কিন্তু টেস্টে নিজেকে এখনো অপরিহার্য করে তুলতে পারেননি। সেটি হতে পারে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অনীহার কারণেও। তবে এখন অভিজাত সংস্করণেও নিয়মিত হতে চান মোস্তাফিজ। গত ফেব্রুয়ারিতে বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে বল ভেতরে ঢোকানোর কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সে লক্ষ্যেই, 'ফেব্রুয়ারিতে দুটো সিরিজ খেলিনি, তবে কাজ করেছি। আমার খেলা সর্বশেষ সিরিজে (মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ) দেখবেন বল বেশির ভাগ সময় ভেতরে ঢুকেছেন। এটা নিয়মিত হলে টেস্ট খেলাটা আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। সিমে পড়ে বল যদি সোজাও যায়, সেটাও অনেক ভালো। ব্যাটসম্যানরা সহজে আমাকে অনুমান করতে পারবে না।'

করোনায় এই হতাশাই বেশি মোস্তাফিজের—অনুশীলনটা থামিয়ে দিতে হলো! শুধু মোস্তাফিজের অনুশীলন কেন, থেমে গেছে পুরো দেশের ক্রিকেটই। সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে মোস্তাফিজের সব সময়ই ভালো লাগে। কিন্তু এবারের অনির্দিষ্ট ছুটিটা আর উপভোগ করতে পারছেন না। ছাদে কবুতর পোষা, মাছের ঘের কিংবা মহিষের খামারে আর কতই-বা সময় কাটানো যায়! আসল কাজ তো ক্রিকেট খেলা, সেটাই হচ্ছে না। কবে আবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে ফিরবেন, সে অপেক্ষায় দিন গুনছেন মোস্তাফিজ।