সিনিয়র শিক্ষক
১৬ জুলাই, ২০২০ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
ডালিম রোগীর উপকারি ফল হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ডালিমকে স্বর্গীয় ফল বলা হয়। কারণ এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জাদুকরী গুনাগুন। ডালিম বা বেদানা ফল মোটামুটি সারা বছর পাওয়া যায় । গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলোই খেতে হয়। এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ডালিম ফল ডালিমগাছের পাতা, ছাল, মূল, মূলের ছাল সবই ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভিতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপী ও সাদা হয়। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ। নিয়মিত পরিচর্যা নিলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায়।
পুষ্টিমান:
ডালিমের পুষ্টিমান, ওষুধি গুণ ও বহুবিদ ব্যবহার অনেক ধর্মীয় বই থেকে অনেক স্থানে লেখা আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ জল, ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিত্সা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার সব জায়গায় পরিচিত।
ঔষধিগুণ:
ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিত্সায় পৈথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক।
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা:
রক্তচাপ কমাতে: ডালিম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাহলে নিয়মিত ডালিম খাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহেই আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ডালিমে খেলে শরীর থাকবে সুস্থ ও সতেজ।
হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে:
মাংস পেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে এই ডালিমের রস। নিয়মিত বেদানার রস খেলে তা ধমনীর আবরণে জমে থাকা চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। বেদানায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটা করে ডালিম খেতে পারলে হৃদরোগের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আথ্রাইটিস ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম:
ডালিম আথ্রাইটিসে উপকার করে। এছাড়া এটি হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়:
ডালিম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে:
আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধী:
ডালিম বা বেদানার রস ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক উপকারি খাদ্য। গবেষণায় দেখা গেছে স্কিন ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে বেদানার রস সাহায্য করে।
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী:
দেহে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে ডালিম। এছাড়া এটি ফাংগাস ইনফেকশনের বিরুদ্ধেই ভূমিকা রাখে।
সর্দি-কাশি দূর করে:
ডালিমে রয়েছে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তাই সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে ডালিমের রস ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আমাশয় নিরাময়ে:
আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভল ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভাল।
গর্ভপাত নিরাময়ে:
ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দুর হয়।
ক্রিমি দূর করতে:
ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১–৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
ডালিমের বিচি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী:
ডালিমের বিচি থেকে তৈরি তেলে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান। ##
মোঃ মিজানুর রহমান মিজান
ICT4E অ্যাম্বাসেডর দিনাজপুর
ও
সিনিয়র শিক্ষক(কম্পিউটার)
মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়
বিরামপুর, দিনাজপুর।
মোবাঃ ০১৭৪০৯৭৯৩৯৭
সুত্রঃ অনলাইন ডেক্স