Loading..

ম্যাগাজিন

২৮ জুলাই, ২০২০ ০৮:৩২ অপরাহ্ণ

বৃক্ষরোপন অভিযান

বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বর্ধন করে না, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আওহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাই বৃক্ষকে বলা হয় প্রাণের অগ্রদূত।


বৃক্ষের অবদানঃ ” বৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই, বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।” অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। এই পৃথিবীকে সবুজে শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রানদায়ী বৃক্ষরাজি। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। আবার মানুষের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ। তাই মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ” দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর” – কবির এ আরতি আজ অরণ্যে রোদন এ পরিণত হয়েছে। কেননা অরণ্য দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কুঠারের আঘাতে। এ হচ্ছে মানুষের আত্মঘাতী কর্ম। 


বৃক্ষরোপণ: গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা ব্যতীত পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন। তবে গাছপালা লাগানো নয়, গাছ কাটার দিকেই আমাদের ভ্রুক্ষেপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই গাছ লাগানোর উদ্যোগ ব্যবস্থাকেই বলা হয় বৃক্ষরোপণ।


বনায়ন: বন বলতে আমরা বুঝি বৃক্ষ বা গাছপালার সমাহার. বৃক্ষরোপণ বা গাছ লাগানোর সাথে বনায়নের রয়েছে সুন্দর সম্পর্ক। কারণ, একটি থেকে দুটি করে গাছ লাগাতে লাগাতেই কিন্তু এক সময় অনেক গাছ লাগানো হয়ে যাবে। আর এভাবে গাছ লাগাতে লাগাতেই সৃষ্টি হয় বনায়নের। আর এ পদ্ধতিকেই বলা হয় বনায়ন।


বাংলাদেশের বনাঞ্চল: প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্রের এ দেশে বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে বিচিত্র রূপে। বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ ১। ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি ২। শালবন বনভূমি ও ৩। স্রোতজ বনভূমি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ ও সিলেট অঞ্চলে ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি। ভাওয়াল ও মধুপুরের এক হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শালবন। আর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিরাজমান সুন্দরবন-ই হচ্ছে স্রোতজ বনভূমি।


বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ: একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের দেশে মোট ভূমির মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে যা দেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তবে এটি সরকারি হিসেবে, প্রকৃত- প্রস্তাবে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৯%। আর World Research Institute এর মতে ৫%। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩.৫%। এরই রেশ ধরে ৪৩৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের খুলনাতেও রয়েছে বনভূমির প্রচন্ড অভাব। তা ইতোমধ্যেই খুলনাসহ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে । দেশের সময়মত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব পরিবেশ দেখা দিয়েছে গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া।


বনায়ন বা বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: World Research Institute এর মতে, বিষের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেক এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্ব পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ ও প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের ব্যাপক আবশ্যকতা রয়েছে। তাই বৃক্ষকে মানা জীবনের ছায়া স্বরূপ বলা হয়। বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু, সে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কত যে উপকার করছে তা একবার ভেবে দেখলে অনুধাবন করা যায়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃক্ষই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের ছাড়া এ পৃথিবীতে আমাদের জীবন যাপন অসম্ভব। জীবনের প্রায় প্রতিটি ধাপেই আমাদের রয়েছে গাছপালার প্রয়োজনীয়তা। তাই বনায়ন ও বৃক্ষ রোপন আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরী।


জীবন ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: বৃক্ষ জীবজগৎ কে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বৃক্ষের ছায়া মাটির পানি কে সহজে বাষ্পে পরিণত হতে দেয় না। বিস্তৃত বনাঞ্চলের বৃক্ষ জলীয় বাষ্প কোন বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে বৃক্ষ অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয়, মানুষ ও অন্য প্রাণীকুল শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য গ্রহণ করে গাছপালা দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। গাছপালার জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে। গাছপালা নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানি-স্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে।


মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই মানবজীবনের ছায়া স্বরূপ বলা হয়। মানুষ ও পশু পাখি বৃক্ষের ফুল ফল এবং লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। বৃক্ষ সকল প্রাণীকূলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর দেয় জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন। ফলে মানুষ এ জগতে বেঁচে থাকতে পারে। আমরা তাপ উৎপাদন, রন্ধন এবং অন্যান্য জ্বালানি কাঠ বৃক্ষ হতে পেয়ে থাকি। আসবাবপত্র, গৃহ, নৌকা, জাহাজ, বাধ,সেতু ইত্যাদি নির্মাণে বৃক্ষ আমাদের কাঠ দেয়। বৃক্ষ থেকে কাগজের মন্ড এবং রিয়ন শিল্পের কাঁচামাল ও দিয়াশলাই তৈরি হয়। বনভূমি থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। বৃক্ষ আমাদের জীবন রক্ষায় নানা ওষুধও দান করে। 

এককথায়, মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

তাই আসুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ নিজেদের বাড়িতেও বেশি বেশি গাছ লাগাই।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি