Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৫:৪১ অপরাহ্ণ

আমি বাচতে চেয়েছিলাম------

আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম....., "আমাকে মেরো না! আমি তো কোন অন্যায় করিনি। তোমরা আমাকে মেরো না। '' শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে কন্ঠে এনে আমি চিৎকার করে বলেছিলাম --"আমাকে মেরো না ''। আমি জানি আমার সে কচি কন্ঠের তীক্ষ্ণ তীব্র আর্তনাদ বাংলার শহর নগর বন্দর পেরিয়ে, মাঠে ঘাট নদী প্রান্তর অতিক্রম করে প্রতিধ্বনি হয়ে দিগন্তে মিশে গিয়েছিলো। হায়! আমার সে মর্মভেদী আর্তনাদ কেউ সাড়া দিলো না, সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না কেউ। দু'দিন আগেও তো আমার মুখে একটু হাসি ফোটাবার জন্যে লোকের চেষ্টার অন্ত ছিলো না! অথচ আজ তারাই আমার দিকে রাইফেলের নল তাক করে ধরেছে। আমার সে করুন আর্তনাদ শুনলে বুঝি পাষাণও গলে যেতো। কিন্তুু মানুষকে যখন পশুশক্তি আশ্রয় করে, তার কাছে আবেদন নিবেদন তখন বৃথা। আমি কিশোর হলেও পৃথিবীর নিষ্ঠুর রূপ দেখেছি, দেখেছি ঘাতকদের হাতে প্রাণের সংহার। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমার বোধশক্তি ছিলো প্রখর। আমি জানতাম, ওদের কাছে প্রানভিক্ষা চেয়ে লাভ হবে না। ওদের চোখে তখন খুনের নেশা দপদপ করো জ্বলছে। তবুও আত্মরক্ষার স্বাভাবিক প্রবণতায় সে সময় আমার কন্ঠ দিয়ে বেরিয়ে এলো - বাঁচাও, বাঁচাও। কিন্তুু আমার কথা কেউ শুনলো না। একটা গুলি এসে আমার ডান হাতটি উড়িয়ে নিয়ে গেলো। দরদর ধারে আমার শরীর থেকে তখন রক্ত ঝরে পড়ছে। জানি না, তখন কথা বলার এতো শক্তি কোথায় পেয়েছিলাম। বললাম, তোমরা সকলকেই তো মেরেছো, আমাকে মেরো না। আমি এক শিশু। আমার একটা হাত নিয়েছো । তবু বাকি হাতটা নিয়ে আমাকে বাঁচতে দাও। এই বাংলার এক কোণে আমি পড়ে থাকবো। অখ্যাত, অজ্ঞাত অবস্থায় জীবন কাটিয়ে দেবো। আমাকে বাঁচতে দাও।ঘাতকদের একজনের প্রাণে বুঝি একটু দয়া হলো। সে তার রাইফেল নামিয়ে নিলো। আর একজন বলে উঠলো, ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ও যে কেউটের বাচ্চা! রে ঘাতক! সেদিন তুই এ কথা বলেই আমার মস্তক লক্ষ্য করে গুলী ছুড়লি। সে মুহুর্তেই আমার প্রাণপাখিটি খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেলো। কিন্তুু কেন? হে বাংলার মানুষ --আমি তো একটা শিশু। এ পৃথিবীর রূপ রঙ রসে আমার অধিকার ছিলো। কোন দোষে আমাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো? আমি তো বাঁচতে চেয়েছিলাম। বাঁচতে চাওয়া কি অন্যায়? তোমরা কি সেদিন দেখোনি এই ঢাকা শহরের বুকে আর এক 'কারবালা' ঘটে গেলো? আমার কচি বুকে গুলী ছুঁড়ে ঝাঁঝরা করে দিলো ঘাতকেরা। তোমরা কি কেউ কোনদিন শুনছো যে, অন্য কোনো দেশে রাস্ট্রনায়ককে স্ববংশে হত্যা করা হয়েছে? না, হয়নি। একদিন রাতের অন্ধকারে বর্বর ইয়াহিয়া খানের আদেশে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘুমন্ত বাঙালী জাতির বুকের ওপর দিয়ে ট্যাঙ্ক চালিয়ে দিয়েছিলো। তারই প্রতিবাদে আমার বাবা বাংলার নয়নমণি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন। আর আততায়ীরা সেদিন জাতির জনকের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি করে তাঁকে শেষ করে দিলো, তবুও একটি প্রতিবাদের ক্ষীণ কণ্ঠ ও শোনা গেলো না। আশ্চর্য!! জানি আমার বাবা বেঁচে থাকতে পারেন না। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে ও সাড়ে তিন বছর তিনি জীবিত ছিলেন , এটাও একটা আশ্চর্য ব্যাপার! গান্ধীজী তো আততায়ীর হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতার কয়েক মাস পরেই।বার্মার আওংসান তাঁর সমস্ত মন্ত্রীদের নিয়ে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন বার্মা স্বাধীন হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে লিয়াকত আলী খান পাকিস্তান হবার সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই নিহত হয়েছেন আততায়ীর গুলিতে। ভারত এবং বার্মায় আততায়ীদের বিচার হয়েছে, দোষী ব্যক্তিরা ফাঁশি কাষ্ঠে ঝুলছে। বিচার হয়নি লিয়াকত আলী হত্যার, বিচার হয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের হত্যাকরীদের। যদিও আমার বড় আপা সরকার গঠন করে বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কিন্তুু এর পূর্বে কেউ বিচার করেনি! আমার বাবা বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে জড়িত ছিলো আন্তর্জাতিক ষরযন্ত্র। গান্ধীজী, লিয়াকত আলী খান, আওংসান, বন্দরনায়েক--এদের কাউকে স্ববংশে হত্যা করা হয়নি। কিন্তুু হত্যাকারীর নির্মম হাত আমার বাবা, মা দুই ভাই চাচা, ভাবী এমনকি আমার মতো মাসুম বাচ্চাকেও রেহাই দেয়নি। তোমরা কি আমার কান্না শুনতে পাও না? নিশিথের বুক চিরে আমার দীর্ঘশ্বাস যে বাংলার আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কে দেবে আমাকে সান্ত্বনা কে শোনাবে আমাকে মিষ্টি মধুর ভাষায় দেশের কথা? আমার বাবা যে আমাকে বলতেন, দেশের জন্যে বড়ো হতে হবে। সেই যে কবিতাটা রয়েছে বাবা আমাকে প্রায়ই শুনাতেন ---আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? আমি তো বড় হতে চেয়েছিলাম। তোমরা আমাকে মুকুলেই ঝরিয়ে দিলে। ফুল না ফুটতেই ধরণীতে ঝরে গেলো। আজ বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। আমার বিদেহী আত্মা কেঁদে কেঁদে বাতাস ভারী করে তোলে।। লেখাটি শেখ রাসেলের ছবি দেখে চিন্তা এবং চেতনার বহিঃপ্রকাশে-----(Copied).

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি