Loading..

ম্যাগাজিন

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৫:৩৮ অপরাহ্ণ

এইডস কী? এইডস মুক্ত থাকার উপায় কী?





  • আন্তর্জাতিক এইডস দিবস আজ। সময়ের আলোচিত মারাত্মক মরণ ব্যাধি ‘এইডস’। যার পূর্ণ নাম- ‘এইডস’ (AIDS = Acquired Immuno Deficiency Syndrome)। এখনো যে ব্যাধির কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক আবিষ্কার হয়নি। তবে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা এ মরণ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার নসিহত পেশ করেছেন। আর তাহলো শৃঙ্খলিত নিষ্কুলুষ ধর্মীয় জীবন-যাপন ই এইডস থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায়।

    ফিরে দেখা
    এইডস নামক রোগের ভাইরাস সর্বপ্রথম ১৯৮১ সালের ৫ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধরা পড়ে। ১৯৮৪ সালে থাইল্যান্ডে, ১৯৮৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে এ রোগ দেখা দেয়।

    মরণ ব্যাধি এইডস-এর ব্যাপারে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে ১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক এইডস দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শৃঙ্খলিত জীবন-যাপনই এ রোগ থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায়।

    আল্লাহ তাআলা মানুষকে রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। আবার বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্যও রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। আবার মানুষের পাপ ও সীমালংঘনের কারণেও রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে। তবে এইডস-এর মতো মারাত্মক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার জন্য ইসলামি অনুশাসন ও বিধি-বিধান মেনে চলার বিকল্প নেই।

    এইডস কি ও কেন? কিভাবে এ রোগের সৃষ্টি হয় এবং কিভাবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে? এইডস হওয়ার কারণ ও মানুষের করণীয় বিষয়গুলো জানা এবং অন্যকে জানানো একান্ত আবশ্যক। এইডসমুক্ত জীবন যাপনে ইসলামের বিধানই বা কী?

    এ বিষয়গুলো মানুষকে অবহিত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে সমগ্র জাতি মুক্তি লাভ করতে পারবে।

    এইডস-এর পরিচয়
    এ : অ্যাকুয়ার্ড- যা অর্জিত হয়েছে, বংশানুক্রমে বা উত্তরাধিকারসূত্রে সংক্রামিত হয়নি
    আই : ইমিউন- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
    ডি : ডেফিশিয়েন্সি- কম, যথেষ্ট নয়
    এস : সিনড্রোম- বিভিন্ন জটিলতা ও একটি বিশেষ অসুখের লক্ষণ

    (HIV; পূর্ণরূপ: human immunodeficiency virus) তথা "মানব অনাক্রম্য অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস’-এর আক্রমণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। যা মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা তথা অনাক্রম্যতা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

    প্রতিকারে বা প্রতিরোধের উপায়
    বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে ৫০% এইডস রোগীর বয়স ১৫-২৪ বৎসরের মধ্যে। অর্থাৎ যাদের অধিকাংশই যুবক। যুবকদেরকে এইডস এর ব্যাপারে সম্পূর্ণ ধারণা দেয়া যেমন জরুরি। ঠিক তেমনি নেতিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করানোরও কোনো বিকল্প নেই।

    - ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
    যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তুলনামূলকভাবে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। কেননা ২৫ থেকে ২৪ বছরের এ যুবকরা সঠিক শিক্ষা ও সুদপোদেষ থেকে বঞ্চিত। তাই প্রত্যেক বাবা-মার উচিত তাঁর সন্তান কোথায় যায়? কি করছে? তার খোঁজ খবর নেয়া। তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা ও শিক্ষা দেয়া যে, কোন কাজ করলে তাঁদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

    ১৫ বছরের পূর্বে সন্তানরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গেই বেশি থাকে। তাই তাদেরকে ধর্মীয় জীবন-যাপনের প্রতি জোর দেয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
    ‘হে মুমিনগণ!, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)

    যেহেতু উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণীরা এইডস ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত। তাই প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে এইডস বিষয়ে সচেতন করে তোলা। তাদের খোঁজ-খবর নেয়া এবং তারা যেন কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা।

    - জিনা ব্যভিচার না করা
    জিনা-ব্যভিচার ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জিনা’র কাছেও যেও না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা : আয়াত ৩২)

    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (জিহ্বা) আর দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থানের (যৌনাঙ্গের) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’
    অবাধ যৌনাচারের মাধ্যমেও এইডস রোগ হয় তাই অবাধ যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকাই কুরআন ও হাদিসের অকাট্য নির্দেশ।

    - পর্দা মেনে চলা
    নারী-পুরুষ সবার জন্য ইসলাম পর্দাকে ফরজ করেছেন। বেপর্দার কারণে পরনারীর সৌন্দর্য যেন কাউকে জিনা-ব্যভিচারের দিকে প্ররোচিত না করে, সে কারণে ইসলাম পর্দার বিধান আরোপ করেছে। আল্লাহ বলেন-
    ‘হে নবি! আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য পবিত্রতর।’ নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে আর তারা যেন তাদের মাথার ওড়না দ্বারা স্বীয় বক্ষ আবৃত করে রাখে। (সুরা নুর : আয়াত ৩০-৩১)
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুলমানদের পোশাক পরিধানের উদ্দেশ্য হবে দেহকে আবৃত করা এবং পোশাক পরার পর লজ্জাস্থানসমূহ যেন অন্যের সম্মুখে প্রকাশ না পায়। পোশাক হবে ঢিলাঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন। (মুসলিম ও মিশকাত)

    - মদ ও মাদক পরিহার করা
    মদ পান করা ইসলামে হারাম। যে জিনিস পান করলে মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়, সে সব মাদক গ্রহণ ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
    ‘হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়িদা : আয়াত ৯০)

    - সমকামিতা বন্ধ করা
    সমাজে নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য অভ্যাস ও আচার হলো সমকামিতা। নিলজ্জ এ প্রথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হচ্ছে। অথচ ইসলাম এ সমকামিতাকে হারাম ঘোষণা করেছে। কুরআনে এসেছে-
    ‘তোমরা কি তোমাদের যৌন তৃপ্তির জন্য স্ত্রীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের কাছে আসবে? মূলত তোমরা হচ্ছো এক মূর্খ জাতি।’

    কুরআনের অন্য জায়গায় এসেছে-
    ‘তোমরা কামবশত পুরুষদের কাছে গমন করো স্ত্রীদের ছেড়ে, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ আল্লাহর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে পূর্ববর্তী জাতিকে (কাওমে লুত) তাদের জনপদকে উল্টিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত সেই মৃত সাগরে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

    এইডস মুক্ত সমাজ গঠনে করণীয়
    সমাজ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার, পতিতালয়, বহুগামিতা ও পরকীয়াসহ সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শৃংখলাবদ্ধ জীবন-যাপন করার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। সুতরাং এইডসমুক্ত দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো পালন করা একান্ত জরুরি। এইডসমুক্ত জীবন ধারণে এর কোনো বিকল্প নেই। আর তাহলো-
    > ধর্মীয় ও আদর্শ অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
    > এইডসের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বিশেষ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে খ্যাত মসজিদের ইমামদেরকে এইচআইভি/এইডসের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ধর্মীয় যাজকগণকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
    > সব ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বর্জন করা।
    > যৌন কৌতূহল জাগে বা যৌনকর্ম সম্পাদনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, এমন কাজ ও প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা। যেমন যৌন আবেদনময়ী অশ্লীল উপন্যাস, নোংরা যৌন পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নগ্ন দেহ প্রদর্শনীমূলক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।
    > পতিতাপল্লীসহ দেহ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
    > বিবাহে সক্ষম ব্যক্তিদেরকে বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করা। নচেৎ সংযম অবলম্বন করার উপদেশ দেয়া।
    > উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বয়ঃসন্ধিকালে তাদেরকে ধর্মীয় অনুরাগ ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মেনে চলার পরামর্শ ও ব্যবস্থা করা।
    > জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে এইআইভিমুক্ত রক্ত পরীক্ষা করে গ্রহণ করা।
    > অপারেশনের আগে সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া।
    > দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরকে এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখা।

    এইডস আক্রান্তদের প্রতি করণীয়
    যারা এইডস আক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে সদয় ও উত্তম আচরণ করা। কারণ এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। সুতরাং তাদের প্রতি সদয় হওয়া, সুস্থ্য জীবন-যাপনে তাদের সহযোগিতা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই।’

    আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে সুস্থ-সুন্দর-সুনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের জন্য সত্য রাসুলসহ পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। এ কুরআনে রয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণের পথ নির্দেশ আবার অকল্যাণের বিষয়গুলো বিষদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে মানুষ অকল্যাণ ও খারাবি থেকে বিরত থাকতে পারে।

    সুতরাং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে দুনিয়ার শান্তি এবং পরকালে মুক্তি সুনিশ্চিত করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। এইডসমুক্ত সমাজ গঠনে কুরআনের বিধান মেনে চলার মাঝেই রয়েছে উত্তম নসিহত। যা মানুষকে এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

    আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মানবতাকে এইডস মুক্ত থাকার এবং এইডস মুক্ত সমাজ গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

    এমএমএস/জেআইএম

    আরো দেখুন

    কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি