Loading..

প্রকাশনা

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৮:৩৩ অপরাহ্ণ

আগামী প্রজন্মের শিক্ষা_অজয় কৃষ্ণ পাল

অজয় কৃষ্ণ পাল.

জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, শিশুদের হাতেই জাতির ভবিষ্যৎ। তিনি সব ধরণের মানবীয় গুণাবলি ও ভালো কাজের চর্চা ছোটবেলা থেকেই ধীরে ধীরে রপ্ত করেছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালির জেগে ওঠার প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সামনের কাতারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। তাঁরই দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে,এগিয়ে নিতে হবে শিশুদের। প্রতিটি শিশু হাসিখুশির মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠুক, এটা তিনি সব সময় চাইতেন। শিশুরা মুক্তমনা, সৃজনশীল, দেশপ্রেমিক হয়ে বেড়ে উঠুক এটাই তিনি ভাবতেন। শিশু-কিশোদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুদের মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।‘(বিশেষ ক্রোড়পত্র, তথ্য মন্ত্রণালয়, ১৭মার্চ,২০১৯)। জাতির পিতা শৈশব-কৈশোর থেকেই হেসে খেলে, বাঁধনহারা আনন্দে, মুক্ত বাতাসে ও মুক্তমনে বেড়ে উঠেছেন। আমাদের শিশুরা যাতে এ ধরণের পরিবেশ পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদেরই। শিশু-কিশোরদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। মা-বাবা ও শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের যেন বন্ধুত্বসুলভ আচরণ হয়, এটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। তাহলে তাদের আর বিপথে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

শিক্ষার সংজ্ঞা থেকে জানা যায় আচরণের কাঙ্খিত পরিবর্তণই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা হলো আমাদের মৌলিক অধিকার। শিক্ষাই সর্বোত্তম বিনিয়োগ। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। আমাদের অবশ্যই তৈরী হতে হবে একটি নতুন বাস্তবধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থায় সেখানে শিক্ষার মূল্যায়ন হবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে। আমরা যে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাশ-ফেলের যে মাত্রা নির্ধারণ করি, তা আদতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। আমাদের ভাবতে হবে যেন বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোনা একজন শিক্ষার্থী মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরী হতে পারে। সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের উপলব্ধি জায়গা থেকে অবদান রাখতে পারি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) হলো ভবিষ্যত আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা। এর মেয়াদ ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল। এতে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক UN Sustainable Development Summit এ বিভিন্ন দেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৫সালের আগষ্ট মাসে ১৯৩টি দেশ ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে একমত হয়েছে। ইতিমধ্যে একাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা SDGs লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষা মানুষের মূল চালিকা শক্তি। শিক্ষা মানুষের দিগন্তকে প্রসারিত করে। করোনা ভাইরাস বদলে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বাস্তবতা। চলমান মহামারী শেষে আমাদের শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে পৃথিবীর নতুন একটি গঠন। অনুভব করতে পারবে নতুন পৃথিবীর যাত্রা।বিদ্যালয় থেকে পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে।বর্তমান সৃষ্ট মহামারী করোনা(কোভিড-১৯) নিশ্চয়ই একদিন কেটে যাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণার মুখর হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে আসবে সবার মাঝে। করোনা পরবর্তীতে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে।অবশ্য এরই মধ্যে এ ব্যবস্থা নিয়ে দেশের শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, শিক্ষাবিদ, গবেষকবৃন্দ মাধ্যমিক, প্রাথমিক, কারিগরী ও মাদ্রাসার মহাপরিচালকবৃন্দ বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।

ভয়াল কোভিড-১৯ সর্বক্ষেত্রে নিজের ছাপ রেখেছে। শিক্ষাও এর ব্যতিক্রম নয়। কোভিড-১৯ শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তণ আনতে বাধ্য করেছে। এটা সত্যি যে করোনা ভাইরাস আক্রমণ না করলে হয়ত অনলাইন শিক্ষা একটা অলীক স্বপ্নই হয়ে যেত। অন লাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের উপর আয়ত্ব এনেছে যা পরবর্তীতে সহযোগিতা করবে। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে সামাজিক মাধ্যম শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষক এবং ছাত্র, ফেসবুক, টুইটার, ইনষ্টোগ্রাম এবং লিংডিন, স্লাইডশেয়ার ইত্যাদির সাহায্যে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। করোনা পরবর্তী জগতে শিক্ষা ছাত্রদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা বিকাশে সাহায্যে করবে।

মূল্যভিত্তিক শিক্ষাই হবে করোনা পরবর্তী পৃথিবীর পাথেয়। এই মহাদুর্যোগ মানুষকে নতুন করে মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছে। বাজার কেন্দ্রিক সভ্যতা থেকে মানুষ আবার সহমর্মিতা চালিত সভ্যতার দিকে এগিয়ে চলছে। এই পরিবর্তনের পিছনে শিক্ষা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এর ফলে অনেক কাজ যা এখন শিক্ষকেরা করেন তা স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে। এই মৌলিক সত্যকে মেনে নিয়েই শিক্ষকদের নিজেদের খাপ খাওয়াতে হবে। অনলাইন আলোচনা সভা জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞান বিতরণ একটি প্রাথমিক পন্থা হয়ে উঠবে।

কেউই যদি মনে করে থাকেন যে এইসব পরিবর্তন সাময়িক এবং করোনা মুক্তির সঙ্গে আবার পুরানো শিক্ষাপদ্ধতি অবলম্বণ করতে পারবেন তাহলে ভূল হবে। শিক্ষার্থীরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। তারা এখন অন লাইন ভিত্তিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। আগামী প্রজন্মকে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সাথে সাথে শিক্ষকদেরও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিজেকে পরিবর্তণ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অজয় কৃষ্ণ পাল

সহকারী শিক্ষক

ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

ছাতকসুনামগঞ্জ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি