সহকারী অধ্যাপক
০৪ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:৫৭ অপরাহ্ণ
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা- শিক্ষক পরিবারের ৩য় প্রজম্মের।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা-শিক্ষক
পরিবারের ৩য় প্রজম্মের
শিক্ষক পরিবারের ৩য় প্রজম্ম
আমি।
শিক্ষকের নাতনী, শিক্ষকের মেয়ে ও
নিজে শিক্ষক হয়ে বিশ্বের সকল শিক্ষক-ছাত্রকে জানাই শুভেচ্ছা।
দাদা ছিলেন দিঘলি উচ্চ বিদ্যালয় , সদর, লক্ষীপুর এর
শিক্ষক। বাবা ছিলেন রূপাচরা সফিউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, লক্ষীপুর এর
শিক্ষক।
"আসছ মাষ্টরের(শিক্ষক) ঘরে, দেখবা টেকা(টাকা) না থাকলে কি
হইব,
হাড়া(খাটুনি)আছে৷"
আমার
মায়ের কাছ থেকে শুনেছি মা যখন নতুন বউ হয়ে সংসারে আসে একদিন আমার দাদি মাকে এ কথা বলেছেন ৷
আমার দাদা ছিলেন বেসরকারি
হাইস্কুলের শিক্ষক৷ প্রথমে নোয়াখালীর চাটখিল হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন৷ পরে
লক্ষ্মীপুরের দিঘলী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন৷
শুনেছি ,দাদার বাবা ছিলেন মূলতঃ কৃষক৷ সেই সাথে
সিজনাল জিনিসপত্রের ব্যবসা করতেন৷ সাত মেয়ে ,এক ছেলে ছিল তাঁর৷ তিনি চেয়েছিলেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে
দাদা তাঁর ব্যবসাটা ধরুক৷
কিন্তু দাদা চেয়েছিলেন
পড়ালেখা করতে- শিক্ষক হতে৷ তাই একদিন ঘরে থাকা পাট বিক্রি করে বেরিয়ে পড়লেন৷
পরিবারের কাছে বেশ কয়েকবছর কোন খবর ছিলনা কোথায় ছিলেন৷
চাটখিল এক বাড়িতে লজিং থেকে
পড়ালেখা করে BN
পাস করে , বাড়িতে আসলেন৷ এরপর শিক্ষকতায় ঢুকলেন৷
তাই সবাই ডাকত BN স্যার৷ নাম ছিল সৈয়দ আহমেদ৷
বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক
অবস্থা ভেতরে জর্জরিত হলেও বাহিরে ঠাট আর নাম - সুনাম আছে৷
দাদা-দাদির সংসারেও সেই অবস্থা
ছিল৷ শিক্ষিত মানুষ,
স্যার! সেই সুনামে দূরের দূরের
আত্মীয়-স্বজনও বেড়াতে আসত৷ পাড়া - প্রতিবেশি আবদার নিয়ে আসত৷ আর এসবের
বেশিরভাগ সামলাতে হত দাদীকে৷
স্কুল ছিল বাড়ি হতে দূরে, তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে
রান্না-বান্না করার খাটুনিটা করতে হত৷ ফজর নামায পড়েই চুলা ধরাত৷ আবার বিকালে
স্কুল থেকে আসার আগেই খাবার রেডি রাখা৷ শিক্ষিত হেতু যে সে খাবার তো নয়!
দাদার বাবার অনেক সম্পত্তি
ছিল৷ কোন ভাই না থাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে দাদাই সব পেয়েছেন৷
ফসল ঘরের খাবার রেখে উদ্ধৃত
বিক্রি করতেন৷ তবুও তিন ছেলে চার মেয়ের সংসারে খুব জৌলস ছিল না৷ টানাটানির ঘানি
ছিল৷
দাদার বাবা নাকি তাই মাঝে তিরষ্কার
করত৷
শিক্ষক হিসাবে আমার দাদা বড়
কাজ করেছেন সমাজের অন্যদের মাঝে শিক্ষার সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন৷ অনেককে নিজের খরচে
পড়িয়েছেন৷
নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে
তুলেছেন৷ সামাজিক দায়িত্ব,
কুসংস্কারমুক্ত করে গড়ে তুলেছেন৷
এখনও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া দাদার
কোন ছাত্রের সাথে দেখা হলে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন দাদাকে৷
দাদার নাতনী হিসাবে সমীহ করেন
আমাকে৷ তখন এক সুখ পাই৷
স্বাধীনতার যুদ্ধের ঝড়ে
ভেঙ্গে যায় দাদার অনেক স্বপ্ন৷ বড় ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে শহীদ হয়৷ ছেলের কথা শুনে তিনিও স্টোক করেন৷(তখন শুনেছি
কলিজা ধরেছে)৷ মারা যান এক মাসের ব্যবধানে৷
মেঝ ছেলে(আমার বাবা) তখন
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন। ছোট ছেলে কুমিল্লা বোর্ডে মেট্রিকে সপ্তম স্ট্যান্ড
করেন৷ ছোট ছেলে -মেয়েদের রেখে কোন ব্যাংক ব্যালেন্স ছাড়াই দাদা চলে গেলেন
পারাপারে৷অন্য সন্তানদের নিয়ে জীবন সাঁতরিয়ে কূলে উঠেছেন আমার দাদী৷