Loading..

খবর-দার

০৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:০০ অপরাহ্ণ

সব পরীক্ষার্থীই এইচএসসিতে পাস করবে

করোনাভাইরাসের কারণে এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা হবে না, সেই ঘোষণা আজ বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে পরীক্ষার্থীর ফলাফল কী হবে সেটি ঠিক হবে তার জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে।  আগামী ডিসেম্বর এই মূল্যায়নের কাজটি করা হবে। আর এ পরীক্ষায় পাস করানো হবে সকল শিক্ষার্থীকেই।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের  চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘অবশ্যই সবাই পাস করবে। তবে ফল কী হবে সেটা নির্ভর করছে তার জেএসসি ও এসএসসির পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।’

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, যে সিদ্ধান্ত এসেছে তাতে অবশ্যই সবাই পাস করবে। যারাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন তারা সবাই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে সুতরাং তাদের সেই ফলের ভিত্তিতে এখন ফল দিতে হবে। এমন ঘোষণাই তো এসেছে। 

যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। জনস্বাস্থ্যবিদেরা আসলে কী বলছেন, সেটাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু জনস্বাস্থ্যবিদেরা কী পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন? তিনি বলেন, আমার মনে হয় না বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে কেউ মত দিয়েছেন বা পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে। পরীক্ষা নিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু সেই সুযোগ নেই।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান মনে করেন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় করে এইচএসসির ফল (জিপিএ) নির্ধারণ ভালো হবে। এতে ফল মূল্যায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু সমস্যা হবে বিষয়ভিত্তিক (জিপি) ফল মূল্যায়ন নিয়ে। এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে। সেটা কারিগরি এবং পরামর্শক কমিটিকে একটি নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে।

অভিভাবকদের মতে, একজন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পায়। সেই রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করেই সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই কলেজে ভর্তির সুযোগ মেলে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।

প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। আগের বছরগুলোতে অকৃতকার্য হওয়া এরকম আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থীর চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। এদের মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক বিষয়ে ফেল করেছিল। ৫৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে এবং ৫১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী তিন বা ততোধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। যারা সবাই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। 

যদি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয় তাহলে কোন শিক্ষার্থী ফেল করার ভয় থাকবে না। কারণ তারা ইতোমধ্যে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আগের দুইটি ফল গড় করে এসব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হলে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেই বোধগম্য হয়। এতে করেছি শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব?- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

আবার আগের বছরগুলোতে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যারা ফেল করেছেন তাদের যদি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ করে দেয়া হয়- তা কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে? প্রশ্ন আছে এখানেও। 

আবার অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে কম জিপিএ পেলেও এইচএসসির জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাদের যদি জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়-তা কতটা যৌক্তিক হবে? 

হাবিবুর রহমান নামের একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাকে জানান,  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি পরামর্শক কমিটি গঠনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এ পরামর্শক কমিটি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন এর বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশ করবেন। কমিটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান, এই দুইটি বিষয় মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুপারিশ করে শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জন সফল করবেন। সেইকামনাই রইল।