Loading..

ম্যাগাজিন

২৭ নভেম্বর, ২০২০ ০৯:০৭ অপরাহ্ণ

অপত্যস্নেহ

অপত্যস্নেহ এবং

---

আগের দিনে বলতে গেলে এই দশক আগেও গ্রামের মানুষ হাঁস-মুরগি পালতেন। ফার্মের মুরগ গ্রামের মানুষ খেত না। কিন্তু এখন গ্রামের মানুষ হাঁস-মুরগি পালে না, যারা পালে তারা বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফার্মের হাঁস-মুরগি পালে।

আমার আব্বুর হাঁস-মুরগি পালার শখ ছিল, বাসাবাড়িতে গরুও পালতেন তিনি। অভ্যাসটা আমারও ছিল। প্রচুর হাঁস-মুরগি পালন করেছি আমি। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়েছি। পাকিস্তানি একটা মুরগী ছিল আমার দিনে দুটো ডিম দিত।

মুরগী ১২/১৪টা ডিম পারার পর ডিমে তা দেওয়ার জন্য তৈরী হয়। তখন তাকে ঝিমুনীতে পায়, খিটখিটে হয়ে উঠে, এই অবস্থায় মুরগীকে আমরা বলি কুরচি মুরগী। বাঁশের টুকরি যাকে বলে জুঙ্গা, সেখানে বেশ করে খড় পেতে জুঙ্গা বানিয়ে তাতে ডিম বিছিয়ে দেওয়া হয়, একুশ দিন পর বাচ্চা ফুটে বের হয়ে আসে। মুরগী যদি ডিমে  তা দিতে বসানো না হয়, তবে কুরচি মুরগীর এই ঝিমুনী ছাড়ানোর জন্য পুকুরের জলে চুবাতে হয়। বেশ কয়েকবার চুবানি দিয়ে উড়িয়ে দিলে তার কুরচামো ছেড়ে যায়। আমি হাঁস কখনও তা দিতে বসাইনি, তবে বাচ্চা কিনে পালন করেছি। আমি নই বাচ্চাওয়ালা মুরগী, নয় সদ্য বাচ্চা ছেড়ে দিয়েছে নয় ডেমি মুরগীগুলা আপনা থেকেই মা-মরা মুরগীর বাচ্চা কিংবা হাঁসের বাচ্চাকে পালন করে, চিল শকুনের হাত থেকে বাঁচায়, নিজের ডানার নিচে আশ্রয় দেয়। অনেকে মুরগী দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফুটান। প্রাণীকূলে এই আচরণ দেখা যায়, অনায়াসে মা-মরা ছানাগুলোকে অন্য আরেকটা প্রাণী তার লালন-পালনের দায়িত্ব নয়। মানুষ তো শ্রেষ্ঠ জীব সৃষ্টির, মানুষের কি শেখার আছে কিছু প্রাণীকূলের কাছে!

তা দিলে বা বাচ্চা পালন করলেই এক প্রাণীর বাচ্চা আরেক প্রাণীর হয়ে যায় না, যার যার বৈশিষ্ট্য ঠিকই অক্ষুণ্ণ থাকে।

আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী একজন গর্ভবতী মা। যে নারীকে দেখলে মা মা মনে হয়, শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে হয় তিনিই সম্মানিয়া, একজন গর্ভবতী মা তাই সর্বদিকে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি সৃষ্টিকে বয়ে বেড়ান নয় থেকে দশ মাস। আমরা না খোঁজ করি তার খাবারের, না পুষ্টির, না বিশ্রামের। এ সমাজ, পরিবার সবসময় একজন গর্ভবতী মা-এর থেকে সুস্থ সন্তান আশা করে, কিন্তু তাঁকে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও বিশ্রামের সুযোগ দেয় না।

আমার অভিমত, একজন গর্ভবতী মা যেখানে যখন থাকেন তাঁকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে হবে, তাঁকে সম্মান জানাতে হবে। কখনই কারও আর্থিক লাভের বলি যেন একজন গর্ভবতী মা না হন। অবলা প্রাণী তাদের সন্তানের জন্য যা করে, সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়ে আমরা কেন তা পারি না! আসুন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে পরিবারে গর্ভবতী মায়ের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করি, কর্মক্ষেত্রেও তাই করি। সুস্থ মা-ই পারেন সুস্থ শিশু জন্ম দিতে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি