Loading..

খবর-দার

১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০২:৫৪ অপরাহ্ণ

ই_লার্নিং_এর_ধারণা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য অস্থায়ীভাবে স্তব্ধ হয়ে গেলেও শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারকে থেমে থাকতে দেওয়া যায় না। এইরকম সময়েই ঘরে ঘরে বিশ্বমানের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে উঠে এসেছে ই-লার্নিং এর ধারণা।

শিক্ষা এবং জ্ঞান হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই মহামূল্যবান সম্পদ ভিন্ন কোনো মানুষই জীবনে সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। শিক্ষা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় কিংবা চার দেওয়ালের বন্ধনীতে আবদ্ধ নয়। শিক্ষার প্রকৃত রূপ হল ব্যাপক। কিন্তু সাবেকি শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার এই ব্যাপক রূপের উন্মেষ ঘটতে পারে না।


সেই কারণেই আধুনিক যুগের সূচনা কাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাবিদরা শিক্ষার পাঠ্যক্রমগত এবং পদ্ধতিগত উন্নয়নের কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে আরও জোরদার হয়েছে সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এর প্রয়োজনীয়তার দাবী। এমতাবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটেছে ই লার্নিং পদ্ধতির।


এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অভিনব উপায়ে সৃজনশীল পদ্ধতির দ্বারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে অন্য যেকোন প্রান্তে বিশ্বমানের শিক্ষার প্রচার ও প্রসার সম্ভব। এই ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে একদিকে শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক প্রতিভার যেমন বিকাশ ঘটে, আবার অন্যদিকে শিক্ষার পথে সকল বাধাকে অতিক্রম করে অত্যন্ত সহজে যেকোনো জায়গায়, যে কোন সময়ে, যেকোনো মানুষের কাছে শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া যায়। সেকারণে একবিংশ শতকে শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারের আধুনিকতম মাধ্যম হিসেবে সংযোজিত হয়েছে ই লার্নিং পদ্ধতি।


করোনাকালে স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম চালু না রাখার যৌক্তিকতা:

পৃথিবীর ইতিহাসে ২০২০ একটি চিরস্মরণীয় বছর হয়ে থাকবে। এই বছর করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের থাবা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের। এই ভাইরাস এতটাই সংক্রামক যে মুহুর্তের মধ্যে মানুষ থেকে মানুষে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সেজন্যেই বিশ্বব্যাপী ঘোষিত হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন।


সামাজিক দূরত্ববিধি না মেনে এই ভাইরাসঘটিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার আপাতত আর কোন উপায় নেই। পৃথিবীজুড়ে সমস্ত প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ খানিকটা কমলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে আবার আগের মতন করে চালানোর ঝুঁকি নেওয়া যায় নি। কারণ এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি পূর্বের মতন চালু থাকলে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা আদৌ সম্ভবপর হবে না। আর ছাত্র-ছাত্রীরা হল পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।


এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে পুনরায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম চালু রাখার ঝুঁকি নেওয়ার অর্থ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য তথা ভবিষ্যতকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া। সে কারণে এমতাবস্থায় স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম পুনর্বহাল করার মতন ঝুঁকি নেওয়া একেবারেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।

ই লার্নিং এর ধারণা:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য অস্থায়ীভাবে স্তব্ধ হয়ে গেলেও শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারকে থেমে থাকতে দেওয়া যায় না। এইরকম সময়েই ঘরে ঘরে বিশ্বমানের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে উঠে এসেছে ই-লার্নিং এর ধারণা। তবে ই লার্নিং এর এই ধারণা পুরোপুরি মহামারী পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত ফল নয়।


এই মহামারীর বহু আগে থেকেই দূরবর্তী শিক্ষা, মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা, সৃজনমূলক শিক্ষা তথা শ্রেণী কার্যক্রমের সমান্তরাল কোচিং ক্লাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ই-লার্নিং এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এই মহামারীর কালে ই লার্নিং এর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপকতা অনুভূত হয়েছে মাত্র। যে ই লার্নিং এতদিন অত্যন্ত সামান্য কিছু ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা আজ বহুমুখী রূপ লাভ করেছে।


আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগান্তকারী ফসল ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে একসাথে সামাজিকভাবে সমবেত না হয়েও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চালু রাখার নামই হলো ই লার্নিং। মহামারীর সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই অধিকাংশ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাঠ্যক্রম চালু রাখার বিকল্প উপায় হিসেবে ই লার্নিং পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছে।

ই লার্নিং এর সুবিধাসমূহ:

ই-লার্নিং পদ্ধতির অসংখ্য সুবিধাগত দিক রয়েছে। সেইসব দিকগুলির কথা ইতিপূর্বে প্রচলিত থাকলেও তা অত্যন্ত সীমিত পরিসরে আবদ্ধ ছিল। বর্তমানে ই লার্নিং বা ইলেকট্রনিক লার্নিং ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের ফলে সমাজের সর্বস্তরে এর সুবিধাগুলি বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে। তেমনি বিশেষ কয়েকটি সুবিধার কথা নিম্নে উল্লেখ করা হলো। 


ই লার্নিং পদ্ধতিতে যেকোনো স্থানে বসে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে পাঠ গ্রহণ করা যায়। অর্থাৎ দূরত্ব শিক্ষা গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

এই পদ্ধতিতে একজন দক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে কোন বিষয়কে অডিওভিজুয়াল-এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারেন।

একসাথে সামাজিকভাবে সমবেত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা না থাকায় বয়সও শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

ই লার্নিং পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করবার খরচ তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় সমাজের সর্বস্তরে এই পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে শিক্ষাবিস্তার সম্ভব।

এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে সামাজিকভাবে সমবেত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরানোর ফলে কোভিড-১৯ এর মতন যে কোনো সংক্রামক ব্যাধি এড়ানো সম্ভব।

ই লার্নিং এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সমূহ:

যেকোনো নতুন ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা কাজ করে। ই-লার্নিং পদ্ধতিও তার ব্যাতিক্রম নয়।

ইতিপূর্বে সীমিত কিছু স্তরে এই পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এই পদ্ধতির প্রয়োগ বর্তমান মহামারীর কালেই প্রথম। সুবিধাজনক এই পদ্ধতিটিকে বাস্তবে রূপদান করতে গিয়ে সমাজকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। তেমনি কয়েকটি হলো:-

ই লার্নিং পদ্ধতি সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছেই একেবারে নতুন ধরনের হবার ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই এই পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

এখনো অবধি তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সর্বস্তরে ইন্টারনেট সংযোগ না পৌঁছনোয় প্রান্তিক অঞ্চলের সেইসব মানুষের পক্ষে ই-লার্নিং এর সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাছাড়া বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের বহু মানুষ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ার কারণে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ এখনো তাদের কাছে বিলাসিতাস্বরূপ।

ই-লার্নিং ব্যবস্থায় যথাযথভাবে শিক্ষণ-এর জন্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়কেই প্রযুক্তিগত ব্যাপারে দক্ষ হতে হয়। ই লার্নিং পদ্ধতি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এই প্রযুক্তিগত দক্ষতার বিশেষ অভাব লক্ষ্য করা গেছে। 

ই লার্নিং এর মাধ্যমে কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জন:

বর্তমানে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্ধারিত পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করা যা একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ-এর পথকে প্রশস্ত ও মসৃণ করবে। ই লার্নিং পদ্ধতির প্রয়োগের প্রথম দিকে মনে করা হতো শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়া না হওয়ার দরুণ এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

তবে এই ব্যবস্থা যত প্রসারিত হয়েছে ততই ই লার্নিং সম্বন্ধে ভুল ধারণা মানুষের মন থেকে অপসারিত হয়েছে। বর্তমানে প্রমাণ হয়ে গেছে মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ার না হওয়া সত্ত্বেও ই লার্নিং পদ্ধতিতে অডিও-ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতির থেকে আরো ভালো ভাবে কোন বিষয়কে উপস্থাপন করা যায়।

ফলে ই লার্নিং পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ব্যক্তির কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বরং সুবিধা অনুযায়ী রেকর্ডেড ক্লাস, শিক্ষাগত উপাদান-এর সহজলভ্যতা, শিক্ষার বহুমুখী রূপের প্রসার ইত্যাদির দ্বারা এই পদ্ধতিতে মানুষের ব্যক্তিগত দক্ষতায় পূর্বের তুলনায় আরও বেশি বৃদ্ধি ঘটানো যায়।

স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষায় সহায়তা হিসেবে ই-লার্নিং এর সম্ভাবনা:

ই লার্নিং পদ্ধতিকে এই করোনা মহামারী কালে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হলেও এই পদ্ধতি স্বাভাবিক সময়েও শিক্ষার প্রসারে এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে ফলপ্রসূ হতে পারে। এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলি স্বল্প খরচে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলেও শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে পারে।

তাছাড়া এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষাগত বিষয়বস্তুর আকর্ষণীয় উপস্থাপনা শিক্ষার্থীদের কাছেও কোন কঠিন বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপিত করতে সাহায্য করছে। এছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ই-লার্নিং পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে দূরবর্তী স্থানে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করতে পারে। বর্তমানকালে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপক প্রসার ভবিষ্যতে ই লার্নিং পদ্ধতির সম্ভাবনাময় বিস্তারের ইঙ্গিতই বহন করে।

উপসংহার:

ই-লার্নিং বা ইলেকট্রনিক লার্নিং পদ্ধতি হলো ভবিষ্যতের জন্য অনন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। একথা সত্য যে এই ব্যবস্থাকে বাস্তবায়নের পথে অসংখ্য বাধা এবং বিপত্তি রয়েছে এবং আরো উদ্ভূত হবে। কিন্তু সেই বাধা-বিপত্তিগুলিকে দূর করে ই-লার্নিং-এর চূড়ান্ত সুবিধাগত দিকগুলি সকলের মধ্যে প্রসারিত হলে তবেই সমাজ শিক্ষা বিস্তারের সার্থক আলোয় আলোকিত হবে

(তথ্য সূত্র গুগুলঃ)