Loading..

খবর-দার

২৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০৬:১৬ অপরাহ্ণ

‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের জন্য ইতিবাচক’


জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাওয়া, মুসলিম দেশগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।

ফলে ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো বাতিল হলো। প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতায় বাইডেনের এমন আদেশকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, প্রথমত ট্রাম্প বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তার যেসব সিদ্ধান্তে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল; সেগুলো বাতিল করার প্রতিশ্রুতি বাইডেন নির্বাচনের আগেই দেন। ফলে এসব নির্বাহী আদেশ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন।

বাইডেনের প্রথম ১০০ দিনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রথম পদক্ষেপ এ নির্বাহী আদেশ। এসব আদেশ বিশ্বের জন্যে ভালো। বাংলাদেশের জন্যও ভালো। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের একটা বিশেষ দিক হলো, তার প্রশাসন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি বাতিল আগের প্রশাসনই করেছিল। তবে ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপ বৈশ্বিক ব্যবস্থার জন্যে ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও সুফল আনেনি।

বিশেষ করে বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এখন বাইডেন চুক্তিতে ফিরে যাওয়ায় জলবায়ু চুক্তি অধিক কার্যকর হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে অর্থও বাড়বে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ। ফলে বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি সক্রিয় হলে বাংলাদেশের জন্য লাভ হবে।

জলবায়ু তহবিল বাড়লে আর্থিক দিক থেকেও বাংলাদেশ লাভবান হবে। তৌহিদ হোসেন বলেন, কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।

ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশ ছিল না। তবুও ট্রাম্পের বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল করার মাধ্যমে সার্বিকভাবে মুসলমানদের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবের বিষয়টি এর মাধ্যমে স্পষ্ট।

বাইডেন প্রশাসন অভিবাসীদের প্রতি নমনীয় হবে বলে ধারণা করা যায়। আশা করি, বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে বাইডেন প্রশাসন বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করবে। ট্রাম্প অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে যেতে বাধা দিয়েছিলেন। ফলে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল।

সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ট্রাম্প ভালো কাজগুলোকেও বাধা দিয়েছিলেন। অভিবাসী যাওয়ায় বাধা দেয়া এমন একটি হঠকারী কাজ ছিল। এর আগে অভিবাসীদের জন্যে আমেরিকার দরজা খোলা থাকায় ইউরোপে মন্দা দেখা দিলেও আমেরিকায় মন্দার দেখা মেলেনি। যুব সমাজ যুক্তরাষ্ট্রকে মন্দার কবল থেকে রক্ষা করেছিল।

ট্রাম্প সেটাও বিনষ্ট করেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দৌলা বলেছেন, বাইডেন নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের যেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন; তার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা লাভবান হবেন। কারণ বাইডেন যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন; তার মধ্যে একটি আদেশের ফলে পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দেবেন।

ফলে যেসব অবৈধ বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তারা লাভবান হবেন। এছাড়া, অবশিষ্ট নির্বাহী আদেশের বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বের ইস্যু। এগুলো বাংলাদেশের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করবে না। ট্রাম্প অনেক কিছু ভেঙেচুরে গেছেন। সেগুলো মেরামত করা তাদের প্রথম অগ্রাধিকার।

তিনি আরও বলেন, বাইডেনের কাছে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দু নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিবেচ্য বিষয়ের বাইরের বিষয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্রনীতির রুটিন সম্পর্ক বাইডেনের আমলেও চলমান থাকবে।

বাইডেনের দলের পূর্ববর্তী ওবামা ও ক্লিনটন প্রশাসনে কর্মরতদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ভালো ছিল। সেই কারণে এবারও ভালো কিছু হতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে বাইডেনের সই করার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়; গোটা বিশ্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশ্বকে ভালোর দিকে নিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি খুব ভালো চুক্তি ছিল। ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন।

এখন আবার সেই চুক্তিতে ফিরে যাচ্ছে। এটা একটা ভালো পদক্ষেপ। এছাড়াও, ছয়টা মুসলিম দেশের ওপর ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। বাইডেন সেটা প্রত্যাহার করলেন।

মহামারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন আবার ওই সংস্থায় ফিরে গেল বাইডেনের নির্বাহী আদেশে। এভাবে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ইতিবাচক। এগুলো পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের জন্যও সহায়ক।