Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৯ মার্চ, ২০২১ ১১:২৮ অপরাহ্ণ

উল্কা

মেঘমুক্ত রাতের আকাশে অনেক সময় নক্ষত্রের মতো ছোট উজ্জ্বল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায়। এই বস্তুগুলোকে উল্কা বলা হয়। গ্রাম বাংলায় একে বলা হয় তারা খসা। আগে সাধারণ মানুষ মনে করতো, আকাশের তারাই কোনো কারণে খসে পড়লে, তখন আকাশে এই ‘তারা খসা’ দেখা যায়। অনেকে ধর্মীয় বিশ্বাসে মনে করেন, ফেরেস্তারা শয়তানকে যখন চাবুক মারে, তখন এই আলো দেখা যায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে নানা ধরণের ছোটো ছোটো মহাকাশীয় বস্তু ভেসে বেড়ায়। এই বস্তুগুলো যখন কোন গ্রহ-নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে, তখন এদের আকর্ষণে বস্তুগুলো এদের দিকে চলে আসে। এই ঘটনা মহাকাশের সকল গ্রহ-নক্ষত্র এমন কি চাঁদের মতো উপগ্রহেও ঘটে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অধিকাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎস ধূমকেতু। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময়, বিভিন্ন ধূমকেতুর কক্ষপথের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখন ওই সকল ধূমকেতুর ছোটো ছোটো অংশ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা এই বস্তুগুলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলের সাথে এদের সংঘর্ষে এরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং একসময় তাতে আগুন ধরে যায়। রাতের আকাশে এই জ্বলন্তু বস্তুগুলোকেই উল্কা নামে অভিহিত করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি থেকে ১১৫ কিমি এর মধ্যে যে সকল উল্কা জ্বলতে জ্বলতে নিচে নেমে আসে, সেই উল্কাগুলোই ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়।

বেশীরভাগ উল্কাই আকাশেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু কিন্তু উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। প্রতি বছরই পৃথিবীতে উল্কাপাত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ভূপৃষ্ঠ যে সকল উল্কাপণ্ডের অবশেষ পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগের রঙ থাকে কালো। প্রচণ্ড উত্তাপে এদের বহির্ভাগ পুড়ে যাওয়ার কারণে এগুলোর রঙ কালো হয়।

উল্কাপাতের ঘটনা যে কোনো সময়ই হতে পারে। সারাবছর ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত দুই একটি উল্কা দেখা যায়। তবে উল্কাপাতের কিছু সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এই সময় ঝাঁক বেধে উল্কাপতন ঘটে। এই উল্কাপাত যে নক্ষত্রমণ্ডল বরাবর হয়, তার নামেই উল্কাপাতের নামকরণ করা হয়। নিচে নিয়মিত উল্কাপাতের নাম ও সময়ের তালিকা দেওয়া হলো।
কোয়াড্রানটিডস্ (Quadrantids)। জানুয়ারি মাসে ৩-৪ তারিখে বুটিস (Bootes) নক্ষত্র মণ্ডলে এই উল্কা বৃষ্টি দেখা যায়। প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৪০টির বেশি বড় এবং উজ্জল ধূমকেতু দেখা যায়। এই উল্কা পিণ্ডগুলো সেকেন্ডে ২৫.৫ মাইল বেগে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এর মধ্যে কিছু উল্কা এতটাই উজ্জ্বল থাকে যে এগুলো নিভে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত আলোর রেখা আকাশে দেখা যায়।
লাইরিডস্ (Lyrids)। এপ্রিল মাসের ১৬ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে দেখা যায়। এই উল্কাপাত বীণা নক্ষত্রমণ্ডলের (Lyra) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র Alpha Lyrae (অভিজিৎ) বরাবর দেখা যায়। এই উল্কার উৎস হিসেবে ধরা হয় C/1861 G1 Thatcher নামক ধূমকেতুকে।
পাই পাপিডস (Pi Puppids)। এই উল্কাপাত এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখের দিকে দেখা যায়। তবে এটি নিয়মিতভাবে প্রতি বৎসরই দেখা যায় না। এর উৎস হলো 26P/Grigg-Skjellerup.নামক ধূমকেতু।
ইটা কুম্ভ (Eta Aquarids)। এপ্রিল মাসের ২১ থেকে মে মাসের ২০ তারিখের ভিতরে দেখা যায়। এর উৎস হ্যালির ধূমকেতু (Halley’s Comet)।
আরিয়েটিড্‌স্ (Arietids)। মে মাসের ২২ থেকে জুলাই মাসের ২ তারিখের ভিতরে দেখা যায়। এর উৎসস্থান গ্রহাণু 1566 Icarus।
জুন বুটিস (June Bootids)। জুন মাসের ২৬ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ২ তারিখের ভিতরে এই উল্কাবৃষ্টি হয়। পৃথিবী যখন Comet Pons-Winnecke নামক ধূমকেতুর কক্ষপথে প্রবেশ করে, তখন এই উল্কাপাত ঘটে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় ডেল্টা কুম্ভ (Southern Delta Aquariids)। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ আগষ্টের প্রথম সপ্তাহের ভিতরে এই উল্কাপাত ঘটে। 96P/Machholz, Marsden এবং Kracht ধূমকেতুসমূহের এলাকা থেকে এই উল্কাপাত ঘটে।
আলফা মকর (Alpha Capricornids)। ১৫ জুলাই থেকে ১০ আগষ্ট পর্যন্ত এই উল্কাপাত হয়। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে এই উল্কাপাত আবিষ্কার করেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Miklos von Konkoly। এর উৎস নামক 169P/NEAT ধূমকেতু।
পারসিড্‌স (Perseids)। জুলাই মাসের ২৩ তারিখ থেকে আগষ্ট মাসের ২০ তারিখের ভিতরে এই উল্কাপাত হয়। এর উৎস 109P/Swift-Tuttle নামক ধূমকেতু।
কাপ্পা সিগনিড্‌স (Kappa Cygnids)। জুলাই মাসের ৩ তারিখ থেকে ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত এই উল্কাপাত হয়। 2008 ED69 নামক গ্রহ এই উল্কাপাতের উৎস। উল্লেখ্য এটি সিগন্যাস নক্ষত্র মণ্ডলের কাপ্পা সিগনি ((
κ Cyg) নামক নক্ষত্রের একটি ক্ষুদ্রাকার গ্রহ।
অরিগিড্‌স্ (Aurigids)। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এই উল্কাপাত ঘটে। Kiess (C/1911 N1) নামক ধূমকেতু থেকে এই উল্কাপাতের উৎস।

সূত্র: বিকাশপিডিয়া 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি