Loading..

খবর-দার

১৮ এপ্রিল, ২০২১ ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

সিনেমা ইতিহাসের বাতিঘর ছিলেন কবরী : ববিতা

আমি রোজার মধ্যে রাত ১১টায় ঘুমিয়ে যাই। তারপর একবারেই উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে সাহরি খাই। গতকালও তাই করছিলাম। দেখলাম একটা মেসেজ এসেছে রাজ্জাক ভাইয়ের (প্রয়াত চিত্রনায়ক রাজ্জাক) পুত্রবধূর কাছ থেকে। আমি ভাবলাম, কদিন আগেই ফারুক ভাইয়ের মৃত্যুর গুজব উঠেছে। এটাও হয়তো তেমনই গুজব। পরে কী মনে করে টিভিটা অন করলাম। তখনই দেখি, এবারের খবরটি সত্যি। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না। কবরী আপার সেই বিখ্যাত হাসি চোখে ভেসে আসছিল। অনেকক্ষণ কাঁদলাম। মেনে নিতে পারছি না কবরী আপা নেই।

ভাবতেই পারিনি কবরী আপা এভাবে চলে যাবেন। চলে যাওয়ার মতো স্বাস্থ্যের কন্ডিশন তার ছিল না। ভেবেছিলাম, অনেকেই তো লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে আসছে। তিনি একজন ফাইটার, প্রচন্ড মনোবলের অধিকারী। এ যাত্রায় তিনিও ফিরে আসবেন। কিন্তু তা হলো না। আপাকে পরাজয় মেনে নিতে হলো। করোনা আর কত কাঁদাবে? আর ভালো লাগে না। করোনা নিয়ে আজকাল সত্যি বড্ড ভয় হয়। মনে হয় আকাশ থেকে উড়ে এসে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে। কোনো সিমটম নেই, হুট করেই মানুষকে নাজেহাল করে ফেলছে। এজন্য প্রথমবারের চেয়ে এবারের করোনা বেশি মারাত্মক বলে মনে হচ্ছে। আমাকে তো কাজের মানুষের ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। তাই চিন্তা আরও বেশি থাকে। তারাও যাতে সচেতন থাকে সেটা বলতে থাকি সারাক্ষণ।

কবরী আপার সঙ্গে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি সিনেমায় আসার আগেই তিনি অনেক বড় নায়িকা। তখন আমার বড় বোন সুচন্দাও দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। মূলত বড় আপার বয়সী। তাই আমি তাকে বড় বোনের মতোই দেখেছি। আমার নায়িকা হিসাবে প্রথম মুভি ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’। ওটার শ্যুটিং করতে এফডিসিতে গিয়ে দেখি রাজ্জাক ভাই আর কবরী আপা কী যেন একটা মুভির শ্যুটিং করছেন। তখনই প্রথম দেখেছি। এর আগে তো হলে গিয়ে তার সিনেমা দেখেছি। নায়িকা হওয়ার পর তো যার যার মতো ব্যস্ত জীবন কাটে। অন্যের তো দূরের কথা, নিজের মুভিই ডাবিংয়ের সময় যতটুকু দেখা যায় অতটুকু দেখা হয়। তবে নায়িকা হওয়ার আগে হলে গিয়ে যে মুভি দেখেছি তার মধ্যে রাজ্জাক-কবরী জুটির ‘ময়নামতি’ আমার খুব ভালো লাগে। আসলে তাদের জুটি স্ক্রিনে দেখতে সত্যি খুব ভালো লাগত। সে এক অন্য আবেদন।

শুরুর দিকে যে যার মতো কাজে ব্যস্ত থেকেছি। তাই একসঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ হয়নি। মাঝে কবরী আপা অনেক দিন সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন। পরে আবার নিয়মিত হন। তবে ফাইনালি আমরা কাজ করি ‘রাজা সূর্য খাঁ’ মুভিতে। তখন তিনি নারায়ণগঞ্জের এমপি। সিনেমা করেন না বললেই চলে। পরিচালক গাজী মাহবুব এসে বললেন, ববিতা আপা, এ মুভিতে আপনাকে আর কবরী আপাকে চাই। তা না হলে মুভিটি করব না। তখন আমিই দায়িত্ব নিলাম। কবরী আপাকে ফোনে বললাম, আপা আমি কাজটি করতে চাই। আপনি প্লিজ শিডিউল বের করে দেন। পরে তিনি কাজটি করতে রাজি হন। আমাদের বিপরীতে ছিলেন সোহেল রানা।

কবরী আপা ছিলেন লাইট হাউজ। সিনেমা ইতিহাসের একটি প্রতিষ্ঠান তিনি। তার এই শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবে না। শৈশব থেকে শেষদিন পর্যন্ত সিনেমার মধ্যেই থেকেছেন। তাই কোটি বাঙালির হৃদয়ে তার স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে। প্রকৃত নক্ষত্রের কোনো মৃত্যু নেই। কবরী আপা থেকে যাবেন মানুষের মনে।

ববিতার এই সাক্ষাতকারটি সংগৃহীত।