সিনিয়র শিক্ষক
১৮ এপ্রিল, ২০২১ ১২:২৭ অপরাহ্ণ
মনোদৈহিক সংকটে ঘরবন্দি শিশু
মনোদৈহিক সংকটে ঘরবন্দি
শিশু
করোনাকালে শিশুর বেড়ে ওঠা : বিশেষজ্ঞ অভিমত
প্রাক-প্রাথমিক
স্তর থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী। এছাড়া উচ্চ
মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়া করছে প্রায় ৪৪ লাখ। করোনায় অধিকাংশই ঘরবন্দি। ১৩ মাস ধরে
যেতে পারছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অনেক অভিভাবক সন্তানকে খেলার মাঠেও যেতে দিচ্ছেন
না।
এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে; পাশাপাশি তার সামাজিক,
সাংস্কৃতিক ও নৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের বিকাশ থমকে যাওয়ার উপক্রম। এর
প্রভাবে দেখা দিতে পারে মনোদৈহিক সংকট। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্থ রাখতে
প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা শারীরিক ও মানসিক সুস্থ রাখাই অগ্রাধিকার:
অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড.
মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ধরুন বাইরে ঝড় চলছে। তাহলে কী শিশুরা
বাইরে যাবে? নিশ্চয়ই না। এমনকি বড়দেরও এমন পরিস্থিতিতে
সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তাই এই দুর্যোগকালীন
সময়ে ছেলেমেয়েরা ঘরে থাকবে এটা স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড়
অগ্রাধিকার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা হবে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, চলমান এই পরিস্থিতিতে শিশুদের মনোজগতে নানা ধরনের
প্রভাব পড়তে পারে। তাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা তৈরি হতে পারে। আচরণগত ও মানিয়ে
চলার সমস্যার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। রুটিনে না থাকলে নিয়মানুবর্তিতার সংকটে পড়তে
পারে। এসব সমস্যা থেকে ব্যক্তিত্বের সমস্যাও হতে পারে। বাস্তবতা মেনে না নিয়ে সে
যেটা চায় সেটা হচ্ছে না কেন-এমন মনোভাব থেকেই হতাশার মধ্যে পড়তে পারে। সেটা থেকে
কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতাও তৈরি হতে পারে। কেউ কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে
পারে। করোনা সংক্রমণের বাস্তবতা আমলে না নিয়ে এলোমেলোভাবে বাইরে চলাচল করতে পারে।
অধ্যাপক রহমান বলেন, এগুলো যেন না হয় সেই শিক্ষাটা দেওয়াই এই
মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন। শিশুরা বাইরে যেতে চাইতেই পারে। এমনকি
ঘরে থাকতে থাকতে তার আর ভালো লাগবে না। সে স্কুলেও যেতে চাইতে পারে। এই চাওয়াটা
তাকে অসুখী করে তুলতে পারে। মানসিক চাপে ফেলতে পারে। এটা থেকে তাদের শান্ত করার
ব্যবস্থা থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকাই মুখ্য। তাদের জন্য ঘরের ভেতরে
খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শহরে একই ভবনে পাশের ফ্ল্যাটে যদি সমবয়সী সুস্থ
শিশু থাকে, তাদের সঙ্গে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ
ছাড়া অনলাইনে ও টেলিভিশনে শিশুতোষ নানা কর্মসূচি থাকে। যেমন : গল্প বলা, ফান প্রোগ্রাম, প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান, ছবি আঁকা, সংগীতানুষ্ঠান ইত্যাদি। ঘরে গল্পের বই
পড়ানো যেতে পারে। আগের চেয়ে বড় একটা সুবিধা হচ্ছে, লকডাউনের
কারণে বাবা-মা ঘরে বেশি সময় দিতে পারছেন। এটা ইতিবাচকভাবে সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ
করতে পারেন। এভাবে ঘরের ভেতরেই সক্রিয় রাখা যায়-এমন কাজে শিশুদের জড়িত রাখার চেষ্ট
করা। এতে তাদের সাধারণ জ্ঞান বাড়ল। অপর দিকে তারা কিছুটা মনের খোরাকও পেল।
আরেকটি দিক হচ্ছে, শিশুদের একটি রুটিনের মধ্যে রাখতে হবে।
অনেকে আছে সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করে না ও ঘুমায় না। আবার পড়তে বসার সূচির ঠিক নেই।
যদি দুনিয়া থেকে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া উঠে যায় তাহলে কি মানুষ শিখবে না। যখন
লেখাপড়া ছিল না, তখন কী মানুষ শিখেনি কিংবা দক্ষতা অর্জন
করেনি! আমাদের সময়টা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, বিশেষ সময়ে আচরণগত যে সমস্যা শুধু শিশুদের নয়,
বড়দেরও হতে পারে। কিন্তু করোনার বাস্তবতাটা মানতে হবে, বুঝতে হবে। এর ভেতরেই জীবনটা সুন্দর করে চালানোর অভ্যাস করতে হবে।
অভিভাবকরা নিজেরা কিভাবে মানসিকভাবে প্রশান্ত ও সুস্থ থাকবেন সেটা যেমন বের করে
নেবেন; পাশাপাশি শিশুদেরও উৎফুল্ল রাখার পন্থা বের করবেন।
বাসায় শিশুদের পড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে ‘সেকেন্ডারি প্রায়োরিটি’
হতে পারে। পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসের যাঁতাকলে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রধান অগ্রাধিকার
হবে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখা। শেখাতে হলে সেটা হতে হবে খেলাচ্ছলে।
চাপ না দিয়েই এটা করতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন টেলিভিশন কিংবা মোবাইল ফোনে আসক্ত
হয়ে না যায়। অস্বাস্থ্যকরভাবে না চলে। সর্বোপরি, জ্ঞান ও
সংস্কৃতি চর্চা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরিচালনাই হবে শিশুদের এই সময়কার
দিনলিপি।
পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা করা জরুরি: অধ্যাপক এম তারিক আহসান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী
ড. এম তারিক আহসান বলেন, করোনার যে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি সেখান থেকে কবে
বের হতে পারব তা বলা মুশকিল। এমনকি এমন অবস্থা আর কতদিন চলবে তা-ও আমরা কেউই
নিশ্চিত নই। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা নিয়ে, বিশেষ করে শিশুদের
ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী একটি পরিকল্পনা নেওয়া খুবই জরুরি। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন
পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা করা। পারিবারিক ও অন্যান্য অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দেশের
সব শিশুর গ্রুপ তৈরি করা। কার ইন্টারনেট অ্যাক্সেস আছে; কোন
শিশুর দূরশিক্ষণের আওতায় আসার পরিস্থিতি আছে; কারা দুটিই
পারবে। এভাবে চিহ্নিত করা গেলে শিশুকে পাঠ পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসা সহজ হবে।
কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা পারা যায়নি।
তিনি বলেন, শিশুরা স্কুলের আঙিনা, খেলার
মাঠ, বৃহত্তর সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রতিনিয়ত শেখার মধ্যদিয়ে
বেড়ে ওঠে। ঘরবন্দি জীবন শিশুদের ওপর শারীরিক, মানসিক,
আবেগিক দিকগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সহপাঠী ও সমবয়সিদের
সঙ্গে সে মিশতে পারছে না। এজন্য তার ভেতরে একধরনের হতাশা তৈরি হতে পারে। খেলার
মাঠে যেতে না-পারায় তার শারীরিক সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দিনের-পর-দিন
ঘরবন্দি থাকায় স্থূলতার শিকার হতে পারে। একইভাবে পুষ্টিহীনতা ও ক্ষুধামন্দার শিকার
হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের নৈতিকতা
উন্নতি লাভ করে। এই জায়গাটিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এসব মিলে শিশুর মধ্যে
অস্থিরতা, মনোযোগ বিচ্যুতি, ধৈর্যহীনতা
ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকায় তার ভেতরে
‘যৌক্তিক’ মন তৈরি বিঘ্নিত হতে পারে। সঠিকভাবে তৈরি হবে না চিন্তা করার প্রক্রিয়া।
এর ফলে বয়সভিত্তিক ‘ম্যাচিউরিটি’ তৈরির প্রক্রিয়া তৈরি হবে না। সব মিলিয়ে এই
বন্দিদশা শিশুর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অবাঞ্ছিত প্রভাব তৈরি করতে পারে। তাই এমন সময়ে যদি
শিশু-মনস্তত্ত্ব সঠিকভাবে বিবেচনায় না-নিয়ে তার জন্য সময়োপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা
করা না-যায়, তাহলে বৌদ্ধিক বিকাশও থমকে যাবে। তিনি বলেন,
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিশুদের স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে বা ফিরিয়ে
আনতে শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ কাঠামো এবং পরিবার-এই তিনটির ‘ইনটারভেনশন’
(সমন্বয়) জরুরি। এই তিনটি দিকেই আমাদেরকে পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিশুদের শিখন প্রক্রিয়া
থেমে থাকে না। প্রতিনিয়ত সে শিখছে। এই কোভিডকালীনও নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাদের।
আক্রান্ত, মৃত্যু, চিকিৎসাসহ করোনা সংক্রান্ত
বিভিন্ন তথ্য জানছে সে। এই পরিস্থিতি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাটা কীভাবে কাজে লাগানো
যায়, সেটা বিবেচনা করতে হবে। আত্মরক্ষা ও সুস্থ থাকার
কৌশলগুলো শিশুদের পরিবারেই শিখিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, বিদ্যমান
পরিস্থিতির মধ্যেই সে কীভাবে বেঁচে থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেকে মনে করি, বইয়ের
ভেতরে যেটা আছে বা পুথিগত শিক্ষাটাই প্রধান। এজন্য এই দুর্যোগকালে পাঠ্যবইয়ের পাঠ
কমিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব আসে। একটি জামার একটি হাতা কিংবা পেছনের অংশ
যদি কেটে ফেলা হয়, তাহলে তার প্রকৃত রূপ যেমন থাকে না,
শিক্ষাব্যবস্থায়ও তেমনি কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের পাঠ সাজানো।
উভয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আছে। সেটা আমলে না-নিয়ে সিলেবাস কমিয়ে দিলে যে দক্ষতা
অর্জিত হবে, তা নয়। এটা না-করে বরং আমরা যেটা শেখাতে চাই,
সেটা বিকল্প উপায়ে শেখানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, করোনাকালে যেহেতু সরাসরি পাঠদান করা যাচ্ছে না,
স্কুলে আনা যাচ্ছে না, তাই বিশ্বব্যাপী বিকল্প
শিক্ষাপদ্ধতি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি বেশি আলোচিত। এগুলো হচ্ছে :
দূরশিক্ষণ, অনলাইনে পাঠদান এবং ব্লেন্ডেড এডুকেশন
(অনলাইন-দূরশিক্ষণ ও সনাতনী পদ্ধতির সংমিশ্রণ)। দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পারলে সেটা
করতে হবে। সবার কাছে ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস নেই। বাড়িতে পরিবার ও প্রতিবেশীর মধ্যে
থেকে সে যে কাজগুলো করে, তা কীভাবে কারিকুলামে কনভার্ট করা
যায়, সে ধরনের সৃজনশীল ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এ ছাড়া প্রজেক্টভিত্তিক
ও সমস্যাকেন্দ্রিক শিখন আছে। এগুলোও কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা। ইতোমধ্যে আমাদের
এক বছর চলে গেছে। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানি না। তাই এই
‘ইন্ট্রা-ডিসিপ্লিনারি’ শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। কবে করোনা চলে যাবে আর আমরা
সরাসরি পাঠদানে শিশুদের যুক্ত করব-এমন সমাধানের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা কয়েকটি
প্রজন্মের ক্ষতি করে ফেলব।
তিনি বলেন, পরিবার ও সমাজ কাঠামোর জায়গায়ও শিশুদের জন্য শেখার
পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ আছে। করোনার ফলে সমাজে শিশুর যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে
সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে খেলাধুলার স্থানের কথা উল্লেখ
করা যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা বড়। এ ছাড়া পরিবারের সঙ্গে স্কুলের একটা
সম্পর্ক তৈরি খুব জরুরি। পরিবার ও স্কুল মিলে বিকল্প কারিকুলাম তৈরির ক্ষেত্রে
ভূমিকা রাখতে পারে। অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে শিশুর সারা দিনের কাজ নির্ধারণ করা যেতে
পারে। সেইসঙ্গে তার বিনোদন ও অন্যান্য কাজ কীভাবে করা যেতে পারে, সেই পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অভিভাবক এখন
ঘরে বেশি সময় দেন।
ফলে শিশু-অভিভাবক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ বেশি হচ্ছে। এই সুযোগটা কাজে
লাগাতে হবে। এসব কাজে লাগাতে পারলে চলে যাওয়া এক বছরেই অনেক কিছু করা সম্ভব ছিল।
তবে এখনো সময় চলে যায়নি। উদ্যোগ নিলে শিশুকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ঘরে রেখেই শেখানো
সম্ভব। এসব না-করলে আমরা পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারব না। কেননা, এমনও
হতে পারে, এই লকডাউন যাওয়ার পর আরেকটা লকডাউনে পড়ে যেতে পারি।
শিক্ষকদের শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাতে হবে: অধ্যক্ষ জহুরা বেগম
রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জহুরা
বেগম বলেন,
আমাদের মতো স্কুল বা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এই
সমাজের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অংশ। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের
স্কুলকে সামনে রেখে চিন্তা করা যাবে না। আমার শিক্ষকেরা প্রতিদিন জুম প্ল্যাটফর্মে
ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু সারা দেশের অবস্থা এমন নয়। তিনি বলেন, অনলাইনে ক্লাস নিতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আমরা এক ধরনের পরিবর্তন
দেখতে পাচ্ছি। কেউ অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চায় না। আবার কেউ যুক্ত হয়ে ক্লাসে
থাকে না। ক্যামেরা বন্ধ করে সে হয়তো অন্য ডিভাইসে আছে। কিংবা অন্য কাজ করছে। এভাবে
করোনাকালে শিশুদের মধ্যে নানা পরিবর্তন এসেছে। কোনো কোনো অভিভাবক বলছেন, তার সন্তান পড়তে চায় না। বাসায় আর থাকতে চায় না। স্কুলে যেতে চায়। খেলার
মাঠে যেতে চায়। বাইরে বের হতে চায়। একটা অস্থির পরিস্থিতি কাজ করছে। আবার কেউ কেউ
বলছেন, বাসায় থেকে তার সন্তান মোটা হয়ে যাচ্ছে। তবে এই
সমস্যা শহর কেন্দ্রিকই বেশি।
তিনি বলেন, তবুও জীবন তো আর থেমে থাকে না। থামিয়ে রাখা যায় না।
ছেলেমেয়েরা বাসায় আছে। এই সময়ে যদি তাদের অন্যান্য উপাদানের (ঘরে খেলাধুলাসহ নানা
শিক্ষামূলক বিনোদন) পাশাপাশি লেখাপড়ার মধ্যে রাখা যায় তাহলে সেটাও একটা মানসিকভাবে
হালকা করার উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে। এজন্যই লেখাপড়া অব্যাহত রাখার ধারণা
এসেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন এসেছে। আমি মনে করি, যেখানে ইন্টারনেট আর অনলাইন সামগ্রীর ঘাটতি আছে সেখানে বিকল্প পন্থা নেওয়া
যায়। ধরুন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ জন শিক্ষক আছেন। তাদের
২০ ভাগে ভাগ করে দেওয়া যায়। এরপর শিক্ষককে তার প্রতিশ্রুতি ও মানবিক বোধের জায়গা
থেকে উদ্বুদ্ধ করে দায়িত্বে নিবেদিত করতে হবে। শিক্ষকদের এক একটা অঞ্চল ভাগ করে
দেওয়া যায়। তারা ওই অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের খোঁজখবর রাখবেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি
মেনে শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাবেন। কথা বলবেন। প্রয়োজনে হোমওয়ার্ক দেবেন। ২-৩ দিন
পরপর তিনি এভাবে নিজের অঞ্চলের শিক্ষার্থীর কাছে যেতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায়
শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের সংস্পর্শে আনা গেলে সেটা মানসিকভাবে সাপোর্ট হিসাবে কাজ
করতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি একটা বিষয়ের প্রয়োজন খুব বেশি করে
সামনে নিয়ে এসেছে। সেটা হচ্ছে, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
একজন করে শিশু মনোবিজ্ঞানী নিয়োজিত করা। আমি মনে করি, শারীরিক
শিক্ষাকে যেভাবে বাধ্যতামূলক করে পদ সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে,
তেমনি একজন করে মনোবিজ্ঞানীও নিয়োগ করা জরুরি। করোনা পরবর্তী
নিউ-নরম্যাল সময়ে এর প্রয়োজন বোঝা যাবে। আমরা ইতোমধ্যে একজন মনোবিজ্ঞানীর পদ
সৃষ্টি করেছি। দ্রুতই তা নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
(মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান)
সিনিয়র শিক্ষক (গণিত)
আহমেদ বাওয়ানী একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা।
ই-মেইল আইডি: mathmagicbymostafiz@gmail.com
মোবাইল নংঃ ০১৯১৬১৫৯৯২২।