Loading..

ম্যাগাজিন

১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:২৪ অপরাহ্ণ

রমজান মাসের ফজিলত ও মর্যাদা

রমজান মাসের ফজিলত ও মর্যাদা

রমজান মাস। আরবি মাসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। দুনিয়ার কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এভাবে ঘোষণা দিতেন বিশ্বনবি সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
أتاكم رمضان شهر مبارك
‘তোমাদের দরজায় বরকতময় মাস রমজান এসেছে।’
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের ঘোষণা দিয়ে এ মাসের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করতেন। আর তা ছিল এমন-
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের (নবি-রাসুলের উম্মতের) ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রমজান মাসের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা
১. ফরজ রোজা পালন
২. কুরআন নাজিল
৩. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার মাস
৪. জাহান্নামের দরজা বন্ধ
৫. শয়তানকে শৃঙ্খাবদ্ধ করা
৬. লাইলাতুল কদর পাওয়া
৭. দোয়া কবুল হওয়া
৮. জাহান্নাম থেকে মুক্তি
৯. ক্ষমা পাওয়া
১০. সৎ কাজের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যাওয়া
১১. হজের সাওয়াব পাওয়া
১২. রোজাদারের বিশেষ সম্মান

> রোজা পালন ফরজ
রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এ মাসজুড়ে রোজা পালন করা ফরজ। কুরআনুল কারিমের রোজা পালনের নির্দেশ এসেছে এভাবে-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

> কুরআন নাজিলের মাস
রহমতের বার্তাবাহী মাস রমজানের অরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি কুরআন নাজিলের মাস। রমজানের এক সম্মানিত রাতে (লাইলাতুল কদরে) আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জীবন পরিচালনার গাইড হিসেবে মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। একাধিক আয়াতে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
রমজান মাস-ই হল সেই মাস; যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

- وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ - إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
শপথ সুস্পষ্ট (কুরআনের) কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৩)
-
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি শবে-কদরে।’ (সুরা কদর : আয়াত ১)

> জান্নাতের দরজা খুলে দেয়ার মাস
রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। রমজানের সম্মানে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসর বরকত লাভে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)
এ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম ফলাফল হলো- রমজান মাসে মানুষ ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে বেশি তৎপর হয় এবং নতুন-পুরাতন সব মানুষকেই মসজিদমুখী হতে দেখা যায়।

> লাইলাতুল কদরের মাস
এ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ‘লাইলাতুল কদর’। রাতটি হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে কুরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় যে কোনো একটি রাতই ‘লাইলাতুল কদর’। আল্লাহ তাআলা বলেন-
-
وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ - إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
শপথ সুস্পষ্ট (কুরআনের) কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৩)
-
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ- وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ - تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ - سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন কি লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সুরা কদর : আয়াত ১-৫)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে রমজান মাস আগমন করেছে। … এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।’ (নাসাঈ)

> দোয়া কবুল হওয়ার মাস
রমজান মাসের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন বলে জানিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
‘রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে দোয়া করে। আর তা কবুল হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহামদ)

> জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস
এ মাসকে তিন দশকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহ তাআলা (রমজান মাসের) প্রতি রাত ও দিনে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা করেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া ‘মোনাজাত’ কবুল হয়ে থাকে।’ (মুসনাদে আহামদ)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাত আগমন করে, তখন শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের আবদ্ধ করা হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর একটি দরজাও খোলা হয় না। (এ মাসের) প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ডাকতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী! তুমি আরও অগ্রসরহও। হে অসৎ কাজের পথিক! তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জানো?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন?’ (তিরমিজি)

> ক্ষমা পাওয়ার মাস
ক্ষমার মাস রমজান। রমজান পাওয়ার পরও যারা নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত করতে পারল না; তাদের ধিক্কার জানিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৩ ব্যক্তির ব্যাপারে) বলেছেন-
- ‘ওই ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক, যার সামনে আমার আলোচনা হলো; কিন্তু সে আমার প্রতি দরূপ পড়লো না।
- ওই ব্যক্তির নাম ধূলায় ধুসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল; অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না।
- ওই ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক, যে তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে পেল; কিন্তু তাদের মধ্যমে জান্নাত উপার্জন করতে পারল না।’ (তিরমিজি)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি