Loading..

খবর-দার

২৩ এপ্রিল, ২০২১ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

স্বীকৃতি পাচ্ছেন আরও ৯৭১ বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রজ্ঞাপন শিগগিরই

বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের আরও ৯৭১ জন। এরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও এতদিন তাদের নামে কোনো গেজেট জারি বা সনদ ইস্যু করা হয়নি। ফলে এরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের পর পুনঃযাচাই শেষে তাদের গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। ১৪ মার্চ জামুকার ৭৩তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরই সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবেন তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জামুকার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।’

সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্তির জন্য ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪ জন এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০ জন আবেদন করেন জামুকায়। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা/ জেলা/ মহানগর কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হয়। এর মধ্যে ৩৮৫টি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেও ৮৫টি কমিটি কাজ করতে পারেনি সদস্যদের দ্বন্দ্ব এবং কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায়। প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে উপজেলা, জেলা কিংবা মহানগর কমিটি তিন ধরনের খসড়া তালিকা তৈরি করে। ‘ক’ তালিকা হচ্ছে যাচাই-বাছাই কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত তালিকা। ‘খ’ হচ্ছে কমিটির দ্বিধাবিভক্ত মতের ভিত্তিতে করা তালিকা। ‘গ’ হচ্ছে কমিটির নামঞ্জুর করা তালিকা। যাচাই ‘ক’ তালিকার ২৬ হাজার ৯৪২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। বাকি আবেদনগুলো নামঞ্জুর করা হয়। সেখান থেকে ৩৫ হাজার ৫৯৯ ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে জামুকায় আপিল আবেদন করেন। আবেদন অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে প্রতি বিভাগে একটি করে ৮টি কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের কমিটির প্রতিবেদনে ৯৭১ জনের বিষয়ে গেজেট জারির সুপারিশ করা হয়। 

১৪ মার্চ জামুকার ৭৩তম সভায় উপজেলা ও মহানগর কমিটির সুপারিশকৃত ‘ক’ তালিকা পুনঃযাচাই করে ঢাকার টাঙ্গাইলের এক উপজেলা ও মাদারীপুরের দুই উপজেলা, চট্টগ্রামের ১০ উপজেলা, রাজশাহীর ২৪ উপজেলার এক হাজার ২৫৬ জনের সুপারিশ পাঠানো হয়। জামুকার পুনঃযাচাই শেষে মাত্র ৯৭১ জনের গেজেট জারির সুপারিশ বহাল রাখে কমিটি। বাকিদের মধ্যে ৮০ জনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয় এবং ২০৫ জনের প্রতিনিধি শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ‘ক’ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের জামুকা সদস্য কর্তৃক যাচাই শেষে ঢাকা এলাকার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা থেকে ২৫ জনের বিষয়ে সুপারিশ করে উপজেলা যাচাই কমিটি। পুনঃযাচাই শেষে মাত্র ১৪ জনের গেজেট জারি করার সুপারিশ করে জামুকা। একইভাবে ঢাকার মাদারীপুর সদর ও কালকিনি উপজেলা থেকে ১৩৪ জনকে সুপারিশ করে কমিটি। পুনঃযাচাই শেষে সবার জন্য গেজেট জারির সুপারিশ করে জামুকা। 

চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা ও চাঁদপুরের ১০ উপজেলার ২৭৭ জনের আবেদন যাচাই শেষে ১০১ জনের গেজেট জারির সুপারিশ করা হয়। একইভাবে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২৪ উপজেলার ‘ক’ তালিকার ৮২০ জনের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। পুনঃযাচাই শেষে ৭২২ জনের গেজেট জারির সুপারিশ করে জামুকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জামুকার সুপারিশের ভিত্তিতে এখন মন্ত্রণালয় তাদের নামে গেজেট ইস্যু করবে। তাদের নামও বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর তারা সব ধরনের সুবিধার আওতায় আসবেন। তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন।

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। তবে বর্তমানে তারা মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাচ্ছে। এর বাইরে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের ২০ হাজার টাকা, বীর প্রতীকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিু ২৫ হাজার টাকা এবং শহিদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেয়া হচ্ছে।