Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০৭ মে, ২০২১ ০৫:৩৪ অপরাহ্ণ

নেপালের পরিণতিতে শঙ্কা বাংলাদেশে ৭ মে, ২০২১ ০২:২০

নেপালের পরিণতিতে শঙ্কা বাংলাদেশে

৭ মে, ২০২১ ০২:২০



নেপালের পরিণতিতে শঙ্কা বাংলাদেশে

নেপালে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল গত বছর অক্টোবর মাসে। সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৪৭৩ জন শনাক্ত ছিল ২১ অক্টোবর। এর পরই পর্বতের ঢালের মতোই নিচে নামতে থাকে নেপালের করোনার প্রথম ঢেউ। এ বছরের মার্চে এসে দৈনিক শনাক্ত ১০০ জনের নিচে নেমে যায়। তবে তা স্থায়ী হতে পারেনি বেশিদিন। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই আবার চূড়ার দিকে উঠতে থাকে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ও হার। এক-দুজন থেকে মৃত্যুও উঠে যায় ৫০ জনের ওপরে। গত ৫ মে শনাক্ত ছিল আট হাজার ৬০৫ জন। মারা যায় ৫৬ জন। শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি, আর মারা গেছে সাড়ে তিন হাজার।

কাছের দেশটিতে শনাক্ত ১০০ জনের নিচে নেমে গিয়েও কেন মাত্র দু-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার তা আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে চূড়ায় উঠছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। ব্যাপক যোগাযোগের কারণে ভারত থেকে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়ার কারণেই নেপাল এই দশায় পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। বাংলাদেশেও ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে নেপালের মতো পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে কারো কারো মধ্যে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা ও বিহারে নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় তা নিয়ে দেশে উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।

ভারত থেকে যাতে দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সে জন্য ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশও ভারতের সঙ্গে স্থলপথে যাতায়াত বন্ধ করেছে। তবে বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহনে আমদানি-রপ্তানি চালু থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে ভারত থেকে দেশে প্রবেশকারীরাও সংক্রমণ ছড়ানোর হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এরই মধ্যে ঢুকেছে বলে ধারণা করলেও সরকারিভাবে বিষয়টি কেউ স্বীকার করছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নেপালে এমন বিপর্যয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংক্রমণের প্রভাব। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট অবাধে নেপালে ছাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বলেই এমন দুরবস্থার কবলে পড়েছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে নেপাল থেকে ভারতে অবাধে যাতায়াত, ভারতে কাজ করা নেপালি শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার বিষয়গুলোও রয়েছে। ড. মুশতাক বলেন, ‘নেপালের বিষয়টি আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। যদিও আমাদের সীমান্ত এখন কড়াকড়িভাবেই বন্ধ করা আছে। যারা ফিরছে তাদের কোয়ারেন্টিনও যথাযথভাবেই হচ্ছে। তাদের কারো মাধ্যমে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেলে তা অবাক করার বিষয় হবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে দেশে ভারতের সঙ্গে ১৮টি স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে কোনোটি পুরোপুরি বন্ধ, কোনোটিতে শুধু পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখা হয়েছে, আবার কোনো কোনোটি দিয়ে জরুরি কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশিরা দেশে আসার সুযোগ পাচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভারত থেকে দেশে ঢুকছে। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ১ মে থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ভারত থেকে স্থলপথে দেশে ঢুকেছে দুই হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৬৯ জন এসেছে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায়। বৈধভাবে আসা এই যাত্রীরা ছাড়াও অবৈধভাবে বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে প্রতিদিনই আরো কিছু মানুষ দেশে ঢুকছে বলে কালের কণ্ঠ’র স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁরা অসতর্কভাবে চলাফেরা করেন, তাঁদের নেপালের পরিস্থিতি দেখা দরকার। ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢুকেছে বলে হয়তো নেপালে করোনার বিস্তার দ্রুত ঘটেছে। এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এসেছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে ভেরিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের বেশি ভাবনার দরকার নেই; এগুলো গবেষকরা ভাবলেই চলবে। সাধারণ মানুষের কেবল তিনটি কাজ করলেই সুরক্ষা মিলবে—সেটা যে ভেরিয়েন্টের করোনাভাইরাসই হোক না কেন। এই কাজ তিনটি হচ্ছে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং টিকা নেওয়া। এই তিনটি যেকোনো ভেরিয়েন্ট থেকেই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সুরক্ষা পদ্ধতি বলে প্রমাণিত।’

ড. আলমগীর বলেন, ‘যেকোনো দেশেই যেকোনো সময় নিত্যনতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হতে পারে। আমাদের দেশেও তো মিউটেশন হচ্ছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় কোনো একটি মিউটেশন হয়তো ভারতীয় বা আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের চেয়ে ভয়ানক হতে পারে। তবে সতর্কতার জন্য অবশ্যই এক দেশ থেকে যাতে অন্য দেশে কোনো ভেরিয়েন্ট না ছড়াতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখতেই হবে; যেমনটা আমাদের দেশে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে আর আকাশপথও সীমিত করা হয়েছে।’

আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা, কূটনীতি, সাংবাদিকতাসহ পেশাভিত্তিক ভিসায় ভারতে গিয়ে যেসব বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন, তাঁরা এখন বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিশেষ অনুমতিপত্র নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। আসার পরই তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনে থাকা কিছু যাত্রী চিকিৎসা ভিসায় চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।

প্রশাসন থেকে কঠোরভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি মনিটর করছে। ভারত থেকে ফেরা যাত্রীদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হচ্ছে, ১৪ দিন পর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এলে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

যশোর জেলা প্রশাসন ও বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ এপ্রিল থেকে স্থলবন্দর সাময়িক বন্ধ করার পর প্রথম দিনে ছয়জন দেশে ফেরে। এরপর এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার যাত্রী দেশে ফিরেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম থাকা যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারবে। কিন্তু যারা দেশে ফিরেছে, তাদের বেশির ভাগের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের বেশি রয়েছে। তাই বেশিসংখ্যক যাত্রীকে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ কঠিন অবস্থায় পড়েছে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল বন্দরের জন্য ১৪ নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার পর এখন পণ্যবাহী ট্রাকের ভারতীয়সহ বিদেশি চালকরা মাস্ক পরে আলাদা শেডে অবস্থান করেন। নির্ধারিত টয়লেট ব্যবহার এবং নির্ধারিত দোকানে মালপত্র ক্রয় করছেন। বন্দর এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্দরের শ্রমিকদের আলাদা পোশাক দেওয়া হয়েছে এবং বন্দরসংশ্লিষ্ট অন্যরা পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন।