Loading..

খবর-দার

০৮ মে, ২০২১ ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

তাকওয়ার গুণে আলোকিত করি নিজেকে

কুরআনের প্রথম আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, এ কুরআন মুত্তাকির পথপ্রদর্শক। রমজানের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পার’।

রমজান ও রোজার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে তাকওয়া বা খোদাভীতির যোগ্যতা অর্জন করানো। সুতরাং তাকওয়ার গুণ আমাদের আবশ্যকীয়ভাবে অর্জন করতে হবে। তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকি হলে কী পাওয়া যাবে? আল্লাহ বলছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। অনেকেই মনে করেন, তাকওয়া অর্থ যিনি নামাজ পড়তে থাকলেন আর সারা রাত চোখে ঘুম লাগল না, তিনিই মুত্তাকি।

অথচ তাকওয়ার অর্থ হলো, যেসব জিনিস থেকে, যেসব কাজকর্ম থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন, সেসব থেকে বেঁচে থাকা। এসব জিনিসের কল্পনাও যদি চলে আসে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে। পক্ষান্তরে যেসব হকুম ইসলাম দিয়েছে, সেসব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে। ‘তাকওয়া’ একটি বিশেষ গুণের নাম। তাকওয়া ইবাদতের নাম নয়, ভয়-ভীতির নাম নয়, তিলাওয়াত বা তাসবিহ পাঠের নাম নয়; তাকওয়া একটি বিশেষ গুণ, একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, একটি স্বভাব-প্রকৃতি, একটি চরিত্রগুণ।

ইবাদত এক জিনিস আর তাকওয়া অন্য জিনিস। তাকওয়া মানসিকতার নাম। মানুষ ইবাদত তো করছেই, কিন্তু আচার-অনুষ্ঠানে, ক্রোধের মুহূর্তে এবং জাগতিক বিষয়াবলিতে মানুষের কর্ম ও জীবনাচার অবিশ্বাসপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। তাই এর নাম তাকওয়া নয়। অনুরূপভাবে কেবল অনুসরণ-আনুগত্যে লেগে যাওয়া, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা তাকওয়া নয় বরং তাকওয়া হলো এ সবের মানসিকতা ও অভ্যাস তৈরি হয়ে যাওয়া। তাই রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে আমাদের মধ্যে ‘তাকওয়া’-এর গুণটি চলে আসে।

এ জন্য আল্লাহ ইবাদত বা অন্য কিছুর কথা না বলে তাকওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ ইবাদতে লিপ্ততা যেন কোনো স্বার্থপরতা কিংবা প্রবৃত্তিপূজার কারণে না হয় বরং আল্লাহকে লজ্জা করে হয়। এটা যেন মানসিকতা ও স্বভাবে পরিণত হয়। সুতরাং তাকওয়া অর্থ লজ্জা-শরম এবং ভদ্রতা-শিষ্টাচারের অভ্যাস হয়ে যাওয়া। যদ্দরুন কোনো কাজ করার আগেই মানুষ চিন্তা করবে, এ কাজটি কেমন? একি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে, না অসন্তুষ্ট করবে?

কাজেই আমরা যেভাবে রমজান মাসে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে দিনের বেলা হালাল এবং পবিত্র জিনিসগুলো বর্জন করেছি, তা হলে ওই আল্লাহর হুকুম অমান্য করে রমজানের বাইরের দিনগুলোতে কীভাবে গুনাহে লিপ্ত হব? আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াব? কেন আমরা মিথ্যা বলব? কেন আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেব? কেন আমরা মুসলমান ভাইয়ের মনে কষ্ট দেব? কেন অপরের হক নষ্ট করব? কেন মানুষের অধিকার হরণ করব? কেন জুলুম করব? কেন আমরা অন্যের রক্ত ঝরাব? মোট কথা, এরূপ যত বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়- এটিই তাকওয়া।

ইসলাম বাহ্যিক আচারসর্বস্ব ধর্ম নয়। প্রশিক্ষণের ইসলামি পদ্ধতি হচ্ছে অন্তরে ইবাদত ও এবং তার তাৎপর্যকে পুনরুজ্জীবিত করে রাখা। বিবেককে জাগিয়ে তোলা এবং জীবনের গতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার প্রেরণা দেয় ইসলাম।

মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব হলো, একটি কাজ বারবার করার মাধ্যমে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। রমজানে কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো মান্য করার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয়। যাতে বাকি এগারো মাস মানুষ দ্বীনের ওপর সহজভাবে চলতে পারে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমগুলো পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।

আফসোসের বিষয় হলো, রমজানের প্রশিক্ষণের এ বিষয়টি আমাদের বোধ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ মাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমাদের জীবনাচার উন্নত ও সুন্দর করার মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে রমজান আসে রমজান যায় কিন্তু আমরা আগের মতোই থেকে যাই। রোজার কোনো প্রতিক্রিয়া আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজানের প্রশিক্ষণ পূর্ণভাবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।