Loading..

খবর-দার

২২ মে, ২০২১ ১১:২২ অপরাহ্ণ

হজরত লোকমান ও আজকের বাবারা হজরত লোকমান ও আজকের বাবারা

লোকমান আ: একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। সর্বদা চিন্তামগ্ন থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১২)। লোকমান আ: সামান্য কাঠমিস্ত্রি হয়েও মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন। একজন আদর্শ বাবা হিসেবে অনুকরণীয় প্রতীক হয়ে আছেন। একজন সন্তানের কাছে তার বাবা হলো প্রথম অনুসরণীয় ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘সন্তানের জন্য পিতার রেখে যাওয়া উত্তম চরিত্র থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো মিরাসি (উত্তরাধিকার) সম্পত্তি হতে পারে না’ (তিরমিজি)। সুন্দর মানুষ তৈরির বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার।
যেই বিশেষ গুণের জন্য আল্লাহ তায়ালা মহাত্মা লোকমান আ:কে প্রজ্ঞা দান করেছিলেন, সেই অনিন্দ্য সুন্দর গুণাবলি হলো- অনর্থক কথা ও কাজে সময় ব্যয় করেনি। বেহুদা কথা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে কথা না বলা অর্থাৎ জ্ঞানহীন অসাড় কথা না বলা’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩৬)। কখনো আমানতের খিয়ানত করেনি। আমানত রক্ষাকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে সতর্ক থাকে তারাই প্রকৃত মুমিন’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত-৮)। সব সময় সত্য কথা বলতেন। সত্যই সুন্দর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে সংমিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না’ (সূরা বাকারা : ৪২)।
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে লোকমান আ:-এর স্নেহধন্য পুত্রের প্রতি উপদেশ মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত রাখতেই পবিত্র কুরআনে সূরা লোকমান নাজিল করেছেন। লোকমান আ: কথা বলার সময় নিচু আওয়াজে কথা বলতে বলেছেন। উঁচু আওয়াজে কথা বলাই শক্তির পরিচয় নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কথা বলার আওয়াজ আর কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১৯)। ‘স্মরণ করো, যখন লোকমান আ: ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন, সে বলল- ‘হে পুত্র, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১৩)। ছোটো ছোটো গুনাহ দিনে দিনে ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। লোকমান আ: ছেলেকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হে পুত্র, কোনো জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে, আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও, তাহলে আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন। তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১৬)। তিনি বলেন, ‘হে পুত্র! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের হুকুম দাও আর খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটি দৃঢ় সঙ্কল্পের কাজ’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১৭)। এ ছাড়া পুত্রকে বলেন, বিচক্ষণ এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করবে। মাতা-পিতাকে সর্বাধিক সম্মান করবে। আয়ের প্রতি লক্ষ রেখে ব্যয় করবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব দেবে। কম কথা বলা, কম খাওয়া এবং কম ঘুমানোর অভ্যাস করবে। নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তা অন্যের জন্য পছন্দ করবে। আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবে না। তোমার প্রতি যারা আশা রাখে তাদের নিরাশ করো না। এক কথা বারবার বলবে না। কোনো কাজেই তাড়াহুড়ো করবে না। রাগান্বিত অবস্থায়ও ধীর শান্তভাবে কথা বলবে। কথার মধ্যে বাধা দিয়ে কথা বলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকবে। আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহঙ্কারীকে’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১৮)।
আমার আমি কে চিনতে পারলেই মানুষ সত্যিকার অর্থে প্রজ্ঞাবান হয়ে ওঠে। লোকমান আ: আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি নিয়ে ভাবতেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর তাকওয়াপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন যাপনে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কর্মময় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তার স্মরণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার ঈমানদার বান্দারা, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই ইবাদত করো। জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৫৬-৫৭)।
আজকের দিনে মনমগজে অর্থ ভাইরাস আক্রমণ করেছে। সৃষ্টিকর্তার কথা ভুলেও স্মরণে আসে না। রিজিক সংগ্রহ করতেই জীবনের সব সময় ব্যয় করে। রিজিকের মালিকের স্মরণ করার ফুরসত নেই। নিজে নিজে, পরিবার কিংবা সমাজের সৃষ্ট আদালত রিজিকের জন্য তাড়া করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর ন্যস্ত’ (সূরা হুদ, আয়াত- ৬)। রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রিজিক দান করেন এবং তিনি প্রবল পরাক্রান্ত’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৫৮)।
বাবা সন্তানকে বলেন, দেখ পাশের বাড়ির ছেলে ডাক্তার হয়েছে। কত টাকা বেতন জানিস? আল্লাহ বলেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিজিক সম্প্রসারিত করেন এবং যাকে চান সঙ্কুুচিত রিজিক দান করেন, কিন্তু এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র’ (সূরা রাদ :২৬)।
লোকমান আ:-এর জীবন থেকে আমাদের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে কতটা সতর্ক হওয়া উচিত তা শিখতে পারি। প্রত্যেক মানুষ যদি দায়িত্ব পাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করত তবে কখনোই পৃথিবীতে এই অরাজকতা দেখতে হতো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের চোখের চোরা চাহনি এবং তাদের অন্তরে যা কিছু লুকিয়ে থাকে, সবই তিনি জানেন’ (সূরা মুমিন, আয়াত-১৯)।
প্রত্যেক মানুষের জন্য পরিবার হলো প্রথম শিক্ষালয়। বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তার সন্তানকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। ইবরাহিম আ: আল্লাহর কাছে বলছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে ও আমার সন্তানদের সালাত প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করো এবং আমাদের দোয়া কবুল করো’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৪০)। এমন সন্তান করিও লালন যেন দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণকামী হয়।