Loading..

প্রকাশনা

১৯ জুন, ২০২১ ০৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

৮ম_শ্রেনীর বাংলাদেশ ও বিস্বপরিচয় _৮ম -অধ্যায়- বাংলাদেশের দূর্যোগ মোঃমেহেদুল ইসলাম, মাহমুদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ক্ষেতলাল,জয়পুরহাট ,০১৮৫৫৯৩১৭৫৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নিদর্শন। আজও শতবর্ষের গর্ব নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল একটি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজ সৃষ্টি করা। এই মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজই পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।

সূচনা[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, ১৯২১। বাম থেকে ডানে উপবিষ্ট: মি. জি. ডব্লু কোচলার, ডক্টর রাসবিহারী ঘোষ, মি. আর নাথান, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম। বাম থেকে ডানে দন্ডায়মান: ডক্টর এস সি বিদ্যাভূষণ, মিস্টার সি ডব্লু পিক, মি. ডব্লু এ জে ওর্চয়োল্ড, সামসুল ওলেমান এন এ ওয়াহেদ, বাবু লোহিত মোহন চ্যাটার্জী, বাবু আনন্দচন্দ্র রায়, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মি. ডি এস ফ্রেসার। (ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, ২০০৭ উপলক্ষে প্রকাশনা শাশ্বতী থেকে নেয়া।)

১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।[১] বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১লা নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।[১] বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল, তাতে অচিরেই ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১শে জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন। এই সফরকালে ঢাকার কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে তাদের ক্ষতির কথা জানান। এই ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে ঘোষণা দেন যে তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন।[২] ১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রূপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্‌ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহাধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজগুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরূপে গণ্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত এলাকায় গণ্য করার কথাও বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেরোটি সুপারিশ করেছিল, এবং কিছু রদবদল সহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩শে মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১লা ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবের কার্যক্রম শুরু করে।[৩]

প্রতিবন্ধকতা[সম্পাদনা]

ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।[১][৪] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী[৫] হার্ডিঞ্জ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকার মূল্য জানতে চান। মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন।[১][৬] ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন ১৯১৯ সালের নতুন আইন অনুসারে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র শিক্ষকদের বেতন কমানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠার সময় রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ছিল। বাংলা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত সরকারি ভবন বাবদ সেগুলো কেটে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হয়।[৬]

কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক কুলদা রায় বলেন তিন ধরনের লোকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।[২] প্রথম শ্রেণি হল পশ্চিমবঙ্গের একদল মুসলমান, যারা মনে করেছিল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের কোন লাভ নেই, বরং এতে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরাই সুবিধা ভোগ করবে। দ্বিতীয় শ্রেণি হল পশ্চিমবঙ্গের সেই সকল মুসলমান, যারা পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব আরোপ করেন। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাজেটের পরিমাণ কমে যাবে এবং অর্থের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তৃতীয় শ্রেণি ছিল পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়, যারা মনে করেছিল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বাজেট কমে যাবে।[১][২]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতা সম্পর্কে সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণিস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণির মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই"। [৭]

যাই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অন্যান্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আবুল কাশেম ফজলুল হক। পূর্ববঙ্গের হিন্দুরাও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দেন, তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকার বালিয়াটির জমিদার। তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে জগন্নাথ হলের নামকরণ করা হয়।[১][২]

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসন ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পি. জে. হার্টগ তার কার্যভার গ্রহণ করেন। প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে তাকে সাহায্য করেন মি. ডাব্লিউ হোরনেলস্যার নীলরতন সরকারস্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়নবাব স্যার শামসুল হুদা ও নবাবজাদা খান বাহাদুর কে এম আফজাল। ১৯২১ সালে খান বাহাদুর নাজিরুদ্দীন আহমেদ প্রথম রেজিস্টার হিসেবে নিযুক্ত হন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে মোট দশটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা কলেজে সাবেক অধ্যক্ষ মি এফ সি টার্নার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ঢাকা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শামসুল ওলামা আবু নসর ওহীদ অস্থায়ীভাবে ঐ বিভাগের প্রধান হন। তিনি একই সাথে ঢাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদেও বহাল ছিলেন। পরে ঐ পদে ১৯২৪ সালের ১লা জুলাই ড. আবদুস সাত্তার সিদ্দিকী যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বতন্ত্র সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ খোলা হয়। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ছিলো ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের অন্তর্গত। সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘বৌদ্ধ গান ও দোহা’র আবিষ্কারক কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সিআইই)। এ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম কমপারেটিভ ফিললজি বা তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ছাত্র ও এম এ গবেষণা সহকারী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও বিশিষ্ট লিপি বিশারদ শ্রী রাধাগোবিন্দ বসাক। ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেছিলেন ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার ও এ এফ রহমান। পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগে উপমহাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ বসুসুরেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য। রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম প্রধান ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রথম আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ২৮ জন কলা, ১৭ জন বিজ্ঞান এবং ১৫ জন আইনের শিক্ষক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ইংরেজি, সংস্কৃত ও বাংলা, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফার্সি ও উর্দু, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অঙ্ক বা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আইন এবং শিক্ষা এই ১২টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন বিভাগের বিএ, বিএসসি ও অনার্স এবং এমএ ক্লাসে মোট ৮৭৭ জন ছাত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। সকল ছাত্রকে কোন না কোন হলে আবাসিক ভাবে থাকতে হত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন বছরের অনার্স চালু হয় যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল দুই বছরের।

নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমানে সিনেট) প্রথম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের ১৭ আগস্ট অপরাহ্ন ৩.৩০ মিনিটে কোর্ট হাউসে (পুরাতন গভর্নর হাউস বা হাইকোর্ট ভবন)। প্রথম বার্ষিক অধিবেশনের মুলতবি সভা বসে ১৮ আগস্ট ১৯২১ সালে। এ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিবেচনা করা হয়। এই আইনের খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হবার পূর্বেই রচনা করেছিলেন টার্নার, ল্যাংলি এবং জেনকিনস্‌ সাহেব। কোর্টের এক বিশেষ সভায় (১০ সেপ্টেম্বর; ১৯২১) সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় “এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল” (বর্তমানে সিন্ডিকেট) গঠিত হবার কথা ঘোষিত হয়। এর দুই দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর ফিনান্স কমিট গঠন করা হয়। ১৯২১ সালে সেপ্টেম্বরে একাডেমিক কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালের ৭ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে একজন সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়। ১৯২৩ সালের ২৩ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিল তিন বছরের অনার্স কোর্সের প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে। ১৯২৩ সালের ১৭ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় Truth shall prevail অর্থাৎ সত্যের জয় সুনিশ্চিত

ক্যাম্পাস[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অধুনালিপ্ত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানীর জন্য ঐতিহাসিক বাগ-এ-পাতশাহীতে গড়ে উঠেছিলো রমণীয় রমনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মনোলোভা দৃশ্যাবলি একদিকে যেমন ছিলো প্রগতিশীলতার ধারক, তেমনি তারুণ্যের উন্মত্ততাকে যেন হাতছানি দিয়েছিলো এক উদাত্ত আহবানে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তার পূর্ব পাশে অবস্থিত ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), লিটন হল, কার্জন হল, বিজ্ঞান ভবন সমূহ, ঢাকা হল এর পূর্ব পাশে বিরাট দিঘি, অপর পাশে ফজলুল হক মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রধান প্রবেশ পথ ছিলো ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল)- এর দিক থেকে, মাঠে ঢুকতেই ডানে জিমনেসিয়াম আর বামে একটি পুকুর; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি ত্রিকোণাকৃতি এবং তাতে দুটি ফুটবল গ্রাউন্ড ছিলো। মাঠের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব তিনদিক দিয়েই বৃক্ষশোভিত রাজপথ প্রসারিত; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণদিকের রাস্তাটি ইউক্যালিপটাস শোভিত, যে রাস্তাটি মুসলিম হল পর্যন্ত সম্প্রসারিত এবং মুসলিম হলের সামনে শিরিষ বা রেইনট্রি জাতীয় বৃক্ষ শোভিত; পুরাতন রেললাইনের সঙ্গে সমান্তরাল সাবেক পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের সেক্রেটারিয়েট ভবন, সামনে ইউক্যালিপটাসশোভিত প্রশস্ত রাজপথ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান। ঐ সেক্রেটারিয়েট ভবনের দোতলায় প্রথমে মুসলিম হল এবং একতলায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিভাগ বিশেষত কলা অনুষদের বিভাগ এবং ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ বিশাল ভবনটির পূর্বাংশ ব্যতীত সবটুকুই সামরিক হাসপাতালে এবং দেশবিভাগের পূর্বে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তর দিকে প্রবাহিত রাজপথের পাশে ছিলো দুটি কি তিনটি বিরাট লাল ইটের দোতলা বাংলো, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাই বাস করতেন। এ বাংলোগুলোর পেছনে রমনা রেসকোর্সের দিকে মুখ করে বর্ধমান হাউস ও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিবাস। দেশবিভাগের পরে যা হয়েছিলো, পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী প্রথমে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং পরে নূরুল আমীনের বাসভবন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভের পর ১৯৫৭ সালে একুশ দফার এক দফা অনুযায়ী বর্ধমান হাউস বাংলা একডেমিতে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের ভেতরে সে কালে একটি পুকুর (উত্তর পূর্বকোণে) ছাড়াও একটি জঙ্গলাকীর্ণ পুরাতন কবরস্থান ছিলো, যা এখন নেই।[৮]

আবাসিক পরিবেশ[সম্পাদনা]

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল (পরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল), জগন্নাথ হল এবং মুসলিম হল (পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) নিয়ে। হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রুপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, ছাত্রদের উপদেষ্টারূপে এবং অনুশীলনী ক্লাস নিবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্বাবধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল, মুসলমান ছাত্রদের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছিল।

ঢাকা হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এফ. সি. সি. টার্নার। শুরুতে একমাত্র ঢাকা হলেরই নিজস্ব ভবনে ছিল; কার্জন হল মিলনায়তনটি তার অধিকারভুক্ত ছিল সে কারণে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষাবহির্ভূত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দেশ বিভাগের পর ঢাকা হলই ছিল প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন মহান গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল ঢাকা হলের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের শাহাদাতবরণের বিনিময়ে। [৯]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ মুসলিম হল”। এ হলের প্রথম প্রভোস্ট নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ্‌র নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসন্তিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথম প্রকাশিত হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার

প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্র্যাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নং বাংলো ‘চামেরি হাউস’-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিসেস পি. নাগ এই হাউসের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উইমেনস হাউস চামেরি হাউসে ছিল পরে ১৯২৮ সালে তা ১০ নং বাংলোতে (বর্তমানে এস্থানে বিজ্ঞান গ্রন্থাগার অবস্থিত) স্থানান্তরিত হয়। ঐ সময় চামেরি বাংলোটিকে মুসলিম হলের এক্সটেনশন করা হয়। পরবর্তীকালে যে কোন বাংলোতেই হোক না কেন তাকে “চামেরি হাউস” বলে ডাকা হত। ১৯৩৮ সালে মেয়েদের হোস্টেল পুনরায় চামেরি হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৪০ সালের ১ জুলাই অবিভক্ত বাংলার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হকের নামানুসারে “ফজলুল হক মুসলিম হল” প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) যে অংশে সলিমুল্লাহ হলের বর্ধিতাংশ ছিল সেখানে ফজলুল হক হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভবনে সামরিক হাসপাতাল স্থাপিত হলে ১৯৪৩ সালে ফজলুল হক হল বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়, পূর্বে যা ছিল ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হোস্টেল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফজলুল হক হলের প্রথম প্রভোস্ট আর প্রথম দুইজন হাউস টিউটর কাজী মোতাহার হোসেন এবং আব্দুস সামাদ।

১৯২০-এর দশক

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি