Loading..

প্রকাশনা

২০ জুন, ২০২১ ০৯:৫১ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ - পশ্চিমাঞ্চলে সামাজিক বৃক্ষরোপণ পরিবেশ ভারসাম্য রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
 দক্ষিণ - পশ্চিমাঞ্চলে সামাজিক বৃক্ষরোপণ পরিবেশ ভারসাম্য রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মোঃ জাকির হোসেন রিয়াজ
সহকারী অধ্যাপক
সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট।

একটি দেশের পরিবেশ রক্ষায় ও অর্থ সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখাতে শতব্য ২৫ ভাগ বনভূমি রাখা অপরিহার্য । ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ ভাগের'ও কম । গ্রামীণ বনায়ন রয়েছে ৭ ভাগ । আবার যে পরিমান বনভূমি আছে তা দিন দিন উজাড় হচ্ছে । পরিণামে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে । বিভিন্ন গবেষনা প্রতিবেদনে দেখা যায় , প্রতি বছর পৃথিবী থেকে ৩২ মিলিয়ন একর বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে । জাতিসংশের তথ্য মতে , গত ১০ বছরে বিশ্বে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল । সেই হিসেবে প্রতি মিনিটে ধ্বংস হচ্ছে প্রায় আট হেক্টর বনভূমি । সৰুজ বৃক্ষ ও বনভূমি কমে যাওয়ার কারণে কার্বন - কাই - অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন । পরিসংখ্যানে দেখা যায় , ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বায়ুমন্ডলে নির্গত কার্বন - ডাই - অগাইডের পরিমান ছিল প্রায় ২০০ কোটি মেট্রিক ল টনেরও কম , আর বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি ৪৬৫ মেট্রিক টনের বেশি । গত ১০০ বছরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ৬০-৭০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে ৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে । দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় বনভূমি আমাদের নেই । সরকারি হিসেবে ১৬ ভাগ , হলেও বাস্তবে বনভূমি পরিমাম মাত্র ৭,৭০ % । আর ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে মাত্র ৫ শতাংশ । দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমান মাত্র ৩.৫ শতাংশ । তাই সময়ের প্রয়োজনে গাছ লাগানো এখন সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে , বিশ্বের বনভূমি উজার হতে হতে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে । এর ফলে বিশ্ব পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে । ১৯৯২ সালের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন ব্রাজিলের রাজধানী শহর রিওডি . জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত হয় পরিবেশ বিষয়ক বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন । শিল্পোন্নত দেশসমূহ মোট ১৭০ টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন । তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে , বিশ্বজুড়ে যে সর্বনাশা বৃক্ষ নিধন চলছে তা এ বিশ্বকে এক কঠিন সমস্যায় ফেলবে । প্রতি সেকেন্দ্রে উজার হচ্ছে , এক একর পরিমাণ বনভূমি । এ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । একই সঙ্গে বৃক্ষনিধন ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বিশ্বকে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখতে হবে । সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই দেশকে বদলে দেয়া সম্ভব । কবির আহবান- “ মানুষ তুমি গাছের পক্ষে দাড়াও মানুষ তুমি বৃক্ষমুখী হও , গভীর নিঃসর্গ তোমাকে অভিবাদন জানাবে । ” গাছের প্রাণ মানে দেশের প্রাণ । গাছের অস্তিত্ব মানে প্রাণের অস্তিত্ব , প্রাণীর অস্তিত্ব । যে অঞ্চলে যত গাছপালা , সেই অঞ্চল তত বেশি প্রাণবন্ত । গাছ ধৈর্য্যের প্রতীক , ধীরস্থির সাধনার প্রতীক , জীবনের সার্থকতার প্রতীক । শান্তি , সহিষ্ণুতা আর প্রশান্তির যে নীরব অভিব্যক্তি তা মানুষের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত করে । ফলদ , বনজ , ভেষজ প্রতিটি বৃক্ষেরই সামগ্রিক পরিবেশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে , একটি বয়স্ক বৃক্ষ তার জীবদ্দশায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ও জীবজগতে যে অবদান রাখে তাহলো- ক ) মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা বৃদ্ধি করে ৫ লাখ টাকার । খ ) বায়ু দূষণমুক্ত করে প্রায় ১০ লাখ টাকার । গ ) জীব ও জন্তুর খাদ্যের জোগান দেয় ৪০ লাখ টাকার । ঘ ) বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে বৃষ্টিপাতের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রায় ৫ লাখ টাকার । ঙ ) গাছপালা নির্ভর প্রাণীর আবাসন সংস্থান করে প্রায় ৫ লাখ টাকার । চ ) জীবনির্ভর জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রায় ৫ লাখ টাকার । " বৃক্ষশূন্যতা যে কী ভয়াবহ তার জ্বলন্ত উদাহরণ আফ্রিকার অঞ্চল । বৃক্ষশূন্য , পানিশূন্য এলাকার মানুষ চলে গেছে অন্য এলাকায় । বাংলাদেশে এর অশুভ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে । অতিবৃষ্টি , অনাবৃষ্টি , ঘূর্ণিঝড় , জলোচ্ছাসতো লেগেই আছে । পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত ও হুমকীর সম্মুখীন । বর্তমান পরিবেশ দূষণ মানব সভ্যতার জন্যে বিরাট হুমকি স্বরূপ । এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী Peter Walliston বলেছেন- Environmental pollution is a great threat to the existence of living beings on the earth . আধুনিক সভ্যতার কর্মনাশা স্রোতে আরণ্যক পরিবেশ আজ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে । দক্ষিণ - পশ্চিমাঞ্চলে উপকুলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প সামাজিক বন বিভাগ বৃক্ষরােপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । বৃক্ষরােপণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে শুধু পরিবেশের সুরক্ষা নয় , নিজের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি নিজের ভাগ্যও পরিবর্তন করা যায় । এর অনেক নজির রয়েছে দেশে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের ( বিবিএস ) হিসাবে দেখা যায় , গাছ থেকে মােট দেশজ উৎপাদন অর্থাৎ জিডিপিতে ১২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার মূল্য সংযােজন হয় । দেশের ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮ টি পরিবার গাছ লাগিয়ে নিজেদের জীবন বদলানাের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকেও পুষ্ট করে চলেছে । গ্রামীণ জনপদগুলাের অনেক পরিবার গাছকে দেখেন বিপদের বন্ধু হিসেবে । এ ব্যাপারে সবাইকে সম্পৃক্ত করা গেলে এবং গ্রামের পাশাপাশি শহরে , সড়কের ধারে , পাহাড় ও চরাঞ্চলে গাছ রােপন সংরক্ষণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ও জনগণ সমৃদ্ধ হবে । এ জন্যে প্রয়ােজন সরকারের সুনিশ্চিত কর্মসূচি । সরকারের সামাজিক বন বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় সামাজিক বনায়ান বিশেষ করে রাস্তা , খাল , বিল , নদীর পার্শ্ববর্তী রাস্তায় ব্যাপক বনায়ন করেছে যা পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।বৃক্ষ আমাদের যেভাবে সহযােগিতা করে গ্রীণ হাউস প্রভাবকে প্রশমিত করে , মাটিতে জৈব পদার্থ যােগ করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় , খাদ্যের যােগান দেয় , বিশুদ্ধ বাতাস দেয় , দূষিত বাতাস শােষণ করে ও এর বিষাক্ততা থেকে জীবজগতকে রক্ষা করে , ঔষধের উপাদান সরবরাহ করে , জ্বালানি , খুটি ও গাে খাদ্যের যােগান দেয় , প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমিত করে , প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায় , আসবাবপত্রের জন্য কাঠ সরবরাহ করে , মানুষের আপদকালে বীমা তুল্য কাজ করে , লবনাক্ততা হ্রাস করে । তাছাড়াও গাছ অক্সিজেন তৈরি করে যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজন ; বাতাসের অতিরিক্ত কার্বন - ডাই - অক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ নির্মল রাখে ; মাটি পরিস্কার অর্থাৎ মাটির বিষাক্ত পদার্থ ও মাটির অন্যান্য ক্ষতিকার পদার্থ শুষে নিয়ে মাটিকে পরিস্কার রাখে ; বাতাস পরিস্কার রাখে , বাতাসের ধূলিকণা ধরে রাখে , তাপ কমায় এবং বায়ু দূষণকারী পদার্থ যেমন- কার্বন - মনােক্সাইড , সালফার ডাই - অক্সাইড , নাইট্রাস অক্সাইড , শােষণ করে ; ছায়া দেয় এবং আবহাওয়া ঠাণ্ডা রাখে ; মাটির ক্ষয় রােধ করে । গাছের শিকর মাটিকে বেধে রাখে এবং গাছের পাতা বাতাসের গতি ও বৃষ্টির গতিকে দমিয়ে রাখে যা মাটির ক্ষয়রােধে সহায়তা করে ; যখন আবাসন গৃহে সৌন্দর্য বাড়ানাের কাজে ব্যবহার করা হয় তখন তাঁর মূল্য অনেক বেড়ে যায় । তাই গাছ আবাসন সম্পদের মূল্য বাড়ায় মাটির মধ্যে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে ; মাটির অভ্যন্তরে পানির উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে ; প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে যে পনি ছাড়ে দেয় তাতে পরিবেশ শীতল থাকে , মেঘ ও বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ; আমাদের বন্যা , আকস্মিক বন্যা , খরা , লবণাক্ততা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে । পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরােপণের গুরুত্ব : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়ােজন । আমাদের রয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র ১০ ভাগ বনভূমি এবং ৭ ভাগ গ্রামে গঞ্জে রােপিত সৃজিত বনভূমি । পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় আমরা যে সমস্যা গুলাের মধ্যে রয়েছি বা সম্মুখীন তা- বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উত্তরাঞ্চল মরুময় হয়ে যাচ্ছে । কার্বন - ডাই - অক্সাইডের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে , বাতাসে জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর ক্লোরােফ্লোরাে কার্বন , মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাচ্ছে । বায়ুমন্ডলে ওজন স্তরে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে । ফলে ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে চলে আসছে । তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে মেরু অঞ্চল , এন্টার্টিকা মহাদেশের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মরুময়তা , অনাবৃষ্টি অসময়ে বৃষ্টি , অতিবৃষ্টি , প্লাবন , বিলম্ব বৃষ্টি হচ্ছে । জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী ০২ দশকের মধ্যে সারা বিশ্বের ৬০০ মিলিয়ন মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে । বর্তমানে বার্ষিক ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । ২০৩০ সাল নাগাদ হবে ৩৪০ বিলিয়ন ডলার । গবেষকদের মতে , জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি সুতিগ্রস্থ দেশ হবে বাংলাদেশ । একটি গাছ ০১ বছরে আমাদেরকে যা দেয় তা হলাে ১০ টি এয়ারকন্ডিশনার সমপরিমান শীততাপ তৈরি করে , ৭৫০ গ্যালন বৃষ্টির পানি শােষণ করে এবং ৬০ পাউন্ডের বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেয় । ০১ গ্রাম পানি বাষ্পীভবনে ৫৮০ ক্যালরী সৌর শক্তি ব্যয় হয় । ০১ টি বড় গাছ দিনে ১০০ গ্যালন পানি বাতাসে ছেড়ে দেয় । ০১ হেক্টর সবুজ ভূমি থেকে উদ্ভিদ প্রতিদিন গড়ে ৯০০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ৬৫০ কেজি অক্সিজেন দান করে সালােকসংশ্লেষন প্রক্রিয়াকালে । ০১ টি মাঝারী আকৃতির আম গাছ ৪০ বছরে ১৪ লাখ টাকা মূল্যের অক্সিজেন তৈরি করে । ০৫ হেক্টর পরিমান বনভূমি থাকলে ৩-৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা হ্রাস হয় , ভূমিক্ষয় রােধ এবং বাতাসে আদ্রতা বাড়ায় । বৃক্ষরাজি ৮৫-৯০ % শব্দ শােষণ করে , শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে । এক লাখ ইট পোড়াতে ২৫০০ মন জ্বালানি কাঠ দরকার হয় । আমাদের দেশে প্রতি বছর রান্নার জন্য প্রায় ১০৭ কোটি মন জ্বালানি কাঠ দরকার হয় । বিভিন্ন জরিপের মতামত : এক জরিপে দেখা যায় , ফিনল্যান্ডে ৭৪ % , মায়ানমারে ৬৪ % , জাপানে ৬৩ % , সুইডেনে ৫৫ % , কানাডাতে ৪৫ % , যুক্তরাষ্টে ৩৪ % এবং ভারতে ২০ % । আর বাংলাদেশে মাত্র ০৯ % মতান্তরে ১৭ % বনায়ন আছে । অথচ কমপক্ষে ২৫ % বনভূমি থাকা প্রয়ােজন । একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক প্রায় ২৫০ গ্রাম সবজী এবং ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়ােজন । বাংলাদেশে আমরা মাথা পিছু ৪০-৪৫ গ্রাম করে ফল পেয়ে থাকি । সাধারণত মানুষের মেধা বিকাশের শতকরা ৪০ ভাগ হয়ে থাকে মাতৃগর্ভে এবং অবশিষ্ট ৬০ ভাগ বিকাশ হয়ে থাকে জন্মের ০৫ বছরের মধ্যে । ভিটামিন - এ এর অভাবে প্রতি বছর প্রায় ত্রিশ - চল্লিশ হাজার শিশু রাতকানা রােগে অন্ধত্বের স্বীকার হয় । অথচ পুষ্টি যােগান এবং রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফলগাছের রয়েছে ব্যাপক অবদান । গাছ - খাদ্য দেয় , অক্সিজেন দেয় , জ্বালানি দেয় , আসবাবপত্র ও গৃহনির্মাণের সামগ্রী দেয় । আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে । জীবন রক্ষার নানা ওষুধ দেয় । প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাসগৃহ রক্ষা করে । তাই বৃক্ষ ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যায় না ? পরিবেশ সংরক্ষণঃ পরিবেশ সংরক্ষণে গাছের অবদান অপরিসীম । ১. প্রতিদিন বাতাসে সঞ্চিত হওয়া ক্ষতিকর গ্যাস ও বিষাক্ত পদার্থ শােষণ করে বায়ু দূষণমুক্ত রাখে । ২.কার্বন - ডাই - অক্সাইড গ্যাসকে অক্সিজেনে পরিণত করে । ৩. গ্রীণহাউসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে । ৪. নদ - নদীর উৎসগুলাের পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় , ভূমিক্ষয় রােধ করে এবং বন্যার প্রকোপ থেকে আমারদের রক্ষা করে । ৫. কৃষি জমির গুণাগুণ রক্ষা করে , জমির উর্বরতা সংরক্ষণ করে । ৬. তাপ ও প্রবল বাতাস থেকে ফসল , প্রাণী ও জনগণকে রক্ষা করে এবং আশ্রয়দান করে । ৭. প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহায়তা করে । ৮ . মাটির তলদেশের পানির স্তর উপরে টেনে সেচযন্ত্রের নাগালে রাখতে সহায়তা করে । ৯. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায় । গাছপালা ও বনভূমি নির্মূল করার ফলে প্রকৃতিতে প্রয়ােজনের তুলনায় অক্সিজেন হ্রাস পাচ্ছে এবং কার্বন - ডাই - অক্সাইড উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । পরিবেশে কার্বন - ডাই - অক্সাইডের বৃদ্ধির ফলে বায়ুতে মিশ্রিত হচ্ছে ক্লোরােফ্লুরাে কার্বন নামক অতীব ক্ষতিকর এক প্রকার গ্যাস । এ গ্যাস ধ্বংস করছে । ছাকুনি হিসেবে অতিবেগুনী রশ্মি পরিশ্রুতকারী ওজন স্তরকে । আর এ অকস্মাৎ গ্রীণ হাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে । আর এর প্রতিক্রিয়ার ধ্বংসাত্মক প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের অস্তিত্ব আজ হুমকীর সম্মুখীন । গ্রীণ হাউস গ্যাস ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সাথে সাথে সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনী রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে চলে আসছে । এতে ক্যান্সার রােগ বৃদ্ধি পাচ্ছে । মেরু অঞ্চলের বরফগলা শুরু হওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ভূপৃষ্ঠের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে মরু অঞ্চলের সৃষ্টি হচ্ছে । বন্যা , ঝড় - ঝঞা ও জলােচ্ছ্বাসের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে । কার্বন - ডাই - অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে বিগত শতকে পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ সে : যদি অব্যাহতভাবে গ্রীণ হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বাড়তেই থাকে তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ১.৫০-৩০ সে :। খরা , বন্যা , ঘূর্ণিঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিবে । আর এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলাে বেশি বেশি বৃক্ষরােপণ ।
ভূমি ক্ষয়রােধে বৃক্ষরােপণঃ ভূমিক্ষয় রােধে গাছপালা বিশেষ অবদান রাখে । ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ হলাে বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত । গাছপালা এ দুটির গতিকে কমিয়ে দিয়ে ভূমিক্ষয় রােধ করে । পরীক্ষায় দেখা গেছে , প্রতি হেক্টর বন থেকে প্রতিবছর ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ গড়ে প্রায় ১-২ টন । সেখানে সমপরিমাণ সমতল ভূমি থেকে ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫০ টন । অর্থাৎ , বৃক্ষই এ ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার । পরিবেশ বিপর্যয় বাড়ছে । অথচ , পরিবেশ মানব সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরবে মােহান্ধ মানুষ পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করেছে । দূষিত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করায় গােটা জীব জগতের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন । নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলাফল ভয়াবহ । বৃক্ষশূন্যতার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দেশের নিচু এলাকা তলিয়ে যাবার আশঙ্কা । বর্তমানে বিশ্বে মােট বনভূমির পরিমাণ ৪০৬.৮৫ কোটি হেক্টর বিশ্বে জনপ্রতি বনভূমির পরিমাণ ০.৬৪ হেক্টর । পৃথিবীর মােট আয়তনের বনভূমির দ্বারা আবৃত ৩১.১০ শতাংশ । বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫০ একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । ইন্দোনেশিয়ায় মােট স্থলভাগের ৬৭.০৫ % জাপানের ৬৬.৫৮ % বনভূমি রয়েছে । বাংলাদেশের মােট বনভূমির পরিমাণ ২.৫৬ মিলিয়ন হেক্টর । কিন্তু নানাবিধ কারণে সকল বনভূমি বৃক্ষাচ্ছাদিত নয় । বৃক্ষাচ্ছাদিত বনভূমির পরিমাণ ৮.৯৮ % । গাছ আমাদের জীবনের প্রতীক । পরিবেশ উন্নয়ন , দারিদ্র বিমােচন , পুষ্টি সরবরাহ , কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । জীবনকে স্বস্তি এবং শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়ােজন হয় গাছপালার । দোলনা থেকে কবর কিংবা চিতা সব জায়গায় গাছপালার অবাধ ব্যবহার । গাছপালা প্রাণিকুলের জীবন ধারণের প্রধান সহায় । প্রচুর গাছ লাগানাের মাধ্যমে দেশকে সবুজে - শ্যামলে , ফুলে - ফলে ভরিয়ে তুলতে চাই । ফিরে আসবে সেই হারানাে রুপ । যে রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন
‘ এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে - সবচেয়ে সুন্দর করুণ ;
যেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভম্বরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল ;
যেখানে গাছের নাম ; কাঁঠাল , অশ্বথ , বট , জারুল , হিজল ;
সেখানে ভােরের মেঘে নাটার রঙ্গের মতাে জাগিছে তরুণ ;
বৃক্ষরােপণ করবে হ্রাস ঝড় , ঝঞা , জলােচ্ছাস । অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ পৃথিবীকে সবুজে - শ্যামলে ভরে দিয়েছে । প্রাণপ্রদায়ী বৃক্ষরাজি । এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযােগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য । মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ । বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু - আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে ; অকৃপণ তার দান । কেবল পরিবেশ সংরক্ষণেই নয় , পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্যে বৃক্ষরােপণের ভূমিকার তাৎপর্য অনস্বীকার্য । মানুষের পরম উপকারী বন্ধু বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়তাে । সে আমাদের যেমন অনেক উপকার করে তেমনি তার সৌন্দর্যে হৃদয়মন হয়ে ওঠে আপুত । অথচ , “ দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য , লও এ নগর । " -কবির এ রােদন আজ অরণ্যরােদনে পরিণত হয়েছে । কেননা অরণ্য দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কুঠারের আঘাতে । এ হচ্ছে মানুষের আত্মঘাতী কর্ম । কারণ বৃক্ষ পৃথিবীর আদিপ্রাণ । যা মৃত্তিকা থেকে তাদের প্রাণরস আহরণ করে , নিজেকে সঞ্জীবিত করে , পত্র , পুষ্প ও ফলে সমৃদ্ধ করে ভরে তুলেছে এ ধরণীকে । জীবনধারণের জন্যে অক্সিজেন দিয়ে বৃক্ষ প্রতিদানে নির্মমভাবে নিধন হচ্ছে । ফলে সবুজে - শ্যামলে ভরা পৃথিবীতে নেমে এসেছে পরিবেশ বিপর্যয় । যেহেতু বৃক্ষ রক্ষা মানে নিজেদের জীবনকে রক্ষা করা । তাই একটি সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্যে সকলকে এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিৎ যে , “ লাগাব বৃক্ষ , তাড়াব দুঃখ , চলাে সবাই গাছ লাগাই না হয় জীবন রক্ষা নাই । ” দেশ ও জাতির স্বার্থে বৃক্ষরােপণকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে । গাছের প্রতি মমত্ববােধ জাগিয়ে তুলতে হবে । বৃক্ষও মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করার মাধ্যমে আমাদের দেশকে বদলে দিতে হবে । বৃক্ষ নিধন নয় , বরং বৃক্ষরােপণই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব । আর প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রােপণকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশ হয়ে ওঠবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়নাভিরাম এক অকৃপণ ঔদার্য । বৃক্ষরােপণের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের বাসযােগ্য পৃথিবী গড়ে তােলা সম্ভব । কবি সুকান্ত বলেছিলেন ,
“ এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান ;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ , মৃত আর ধ্বংসস্তুপ পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের ।
চলে যাব তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ ।
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল ,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার ।
মানুষের কল্যাণে গাছ স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি । খরা , অতিবৃষ্টি , অনাবৃষ্টি , বেশি ঠাণ্ডা , বেশি গরম , ঝড় - ঝঞা , বন্যা , বায়ু দূষণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা বন্ধ করতে পারি না । কিন্তু অধিক সংখ্যক গাছ - গাছালিই এগুলাের আন্তবলীলা , ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে । তাই গাছ লাগানােকে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে । আসুন ; যার যেখানে সুযােগ আছে গাছের চারা লাগাই , অন্যকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করি , পরামর্শ দেই গাছ লাগানাের । সুজলা , সুফলা হয়ে উঠুক পৃথিবীর মানচিত্রে ক্ষুব্ধ আমার এই জন্মভূমিটি ! সুবজ শ্যামলিমায় ভরে উঠুক কানায় কানায় , কমে যাক প্রাকৃতিক দুর্যোগ , মানুষের মনে আসুক চিরসুন্দর , অকৃত্রিম , অনাবিল হাসি । আসুন , আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- ‘ গাছ লাগিয়ে ভরবাে দেশ , বদলে দেব বাংলাদেশ । ( তথ্য সূত্রঃ বৃক্ষরােপণের গুরুত্ব- মােহাইমিনুল রশিদ , দৈনিক পূর্বকোণ , প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরােধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরােপণ ২৬-০৯-২০১৪ ইন্টারনেট রিপাের্ট )

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি