Loading..

সফলতার গল্প

বাতায়নের আলোয় হয়েছি আলোকিত
article

আমি মো. মিজানুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক, নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা।২০০১ সালের এপ্রিলের ১ তারিখ জকিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করি। সেই থেকে এই মহান শিক্ষকতা পেশায় ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিজের দায়িত্ব পালন করে  আসছি। সেখান থেকে ২০০১ সালের ২৫ আগস্ট বদলি  হয়ে স্ব জেলায় বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করি। প্রায় দেড় মাস পর ২০০১ সালের ১৮ অক্টোবর নবাব সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কুমিল্লায় বদলী হয়ে যোগদান করি।


শিক্ষকতা পেশায় দক্ষতা অর্জনের জন্য বিএড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে। তারপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষক প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে টট গ্রহণ করি। সেই সুযোগে ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শিক্ষা অফিসের আমন্ত্রণে আইসিটি বিষয়ে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাাই। দক্ষিণ কোরিয়ার যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জনাব রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার আমাকে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করেন তাই আমার উনার প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।


তারপর, এটুআই প্রজেক্টর এর কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রথমবার নিং এর সাথে যুক্ত হয়ে কনটেন্ট আপলোড করতে থাকি। একসময় শিক্ষকদের মধ্যে আয়োজিত কনটেন্ট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় আমি কুমিল্লা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক জনাব শামসুদ্দিন আহমেদ তালুকদার স্যারের উৎসাহে উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।


সেই থেকেই মূলত শিক্ষক বাতায়নের সাথে পথ চলা, তখন সালটা ছিলো ২০১১।


২০১৪ সালে কনটেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরা ৩৫ এর মধ্যে আমি ১৫তম হই।  শিক্ষক বাতায়নে ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ার জন্য যে ক্রাইটেরিয়া, কনটেন্ট আপলোড করা MIExpart স্কোর অর্জন মুক্তপাঠের স্কোর সেগুলো পুরোদমে অর্জন করি এবং ২০১৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক নির্বাচিত হই।


শিক্ষক বাতায়নে ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক মনোনীত হওয়ার পর থেকে আমি আমার জেলায় এটুআই তথা শিক্ষার সাথে জড়িত সকল কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে করেছি।WSIS Voting কার্যক্রমে জেলার শিক্ষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি। বিভিন্ন সময়ে জেলার অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদেরকে নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা/ কর্মশালার আয়োজন করে WSIS Voting  কার্যক্রম এগিয়ে নিই।


শিক্ষক বাতায়নে সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা অপশনটি চালু করার পর থেকেই আমি শ্রেণিভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে আপলোড করতে থাকি। তখন প্রতি সপ্তাহে ১জন সেরা কনটেন্ট নির্মাতা প্রকাশিত হতো শিক্ষক বাতায়নে সাইটে। প্রতি সপ্তাহে যারা সেরা কন্টেন্ট  নির্মাতা নির্বাচিত হতো আমি তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। আমি দিনরাত পরিশ্রম করা শুরু করি এবং ধারাবাহিকভাবে কন্টেন্ট আপলোড করতে থাকি।


একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর সেই দিনটি আমার জীবনে আসে এবং আমি সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হিসেবে নির্বাচিত হই।


২০২০ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন বিভাগে ফেসবুক লাইভ ক্লাস পরিচালনার মাধ্যমে অনলাইন স্কুল কার্যক্রম শুরু হয়, আমাদের কুমিল্লা জেলাটিও পিছিয়ে থাকেনি। আমি এবং আমাদের জেলার আরো কিছু অ্যাম্বাসেডর শিক্ষকদের নিয়ে Cumilla Online School চালু করি। বিষয়ভিত্তিক রুটিন ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে ক্লাস পরিচালনা করে থাকি। এক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করেছে কুমিল্লা সদর উপজেলার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক জনাব মহিমচন্দ্র বিশ্বাস,হোমনা উপজেলার হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মো. আমিনুল ইসলাম এবং দেবিদ্বার উপজেলার দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক জনাব আতিকুর রহমান।


মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের এম এইচ আহমেদ আপন, সদর দক্ষিণ উপজেলার চাঁদপুর জনতা হাইস্কুল এন্ড কলেজের ইনস্ট্রাক্টর জনাব পলাশ কান্তি মজুমদার উৎসাহ উদ্দীপনা ও সাহস  যুগিয়েছেন।


অনলাইন স্কুলটি পরিচালনায় প্রথমদিন থেকেই এডমিন হিসেবে রুটিন প্রস্তুত,ক্লাস রেকর্ড,শিক্ষকদের উৎসাহ দিয়ে রুটিনে যুক্তকরণ,রুটিন অনুসারে ক্লাস লাইভ করা, কার্যক্রম মনিটরিং ও মেন্টরিং এর দায়িত্ব কাধে তুলে নিই। শিক্ষকদের ক্লাস নিতে আগ্রহী করে তুলতে এক সময় নিজেই লাইভ ক্লাস শুরু করি।এই সময় আমার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় কুমিল্লা জেলায় বেশ কিছু শিক্ষক ICT4E জেলা অ্যাম্বসেরডর শিক্ষক মনোনীত হন।এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় Online School চালু করে।


এ সময় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকেও কুমিল্লা কেবল টিভির মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনার জন্য দায়িত্ব পাই এবং সেই অনুযায়ী রুটিন প্রস্তুত করি তৎকালিন শ্রদ্ধেয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মহোদয়ের সহায়তায় এবং অন্যান্য জেলা অ্যাম্বসেরডর শিক্ষকদেরকে নিয়ে মিটিং করি এবং সবার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের রেকর্ডিং ক্লাস, লাইভ ক্লাস সংগ্রহ করতে থাকি যা পরবর্তীতে কুমিল্লা কেবল টিভিতে প্রচার করা হয়


২০২১ সালের ১৬ই নভেম্বর আমার জীবনে আরেকটি অর্জন যুক্ত হলো! আমি শিক্ষক বাতায়নে সেরা অনলাইন পারফরমার নির্বাচিত হই।


পাশাপাশি মুক্তপাঠে বিভিন্ন কোর্স এ অংশগ্রহণ করে সার্টিফিকেট অর্জনসহ প্রায় ৪৫০০০০ স্কোর অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মুক্তপাঠের কর্মশালায় অংশ নিয়ে এর হালনাগাদ করার বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছি। কিশোর বাতায়নে ও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনসহ তাঁদের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে বিভিন্ন ইভেন্টে পুরস্কার এনে দিতে সক্ষম হয়েছি।


ব্রিটিশ কাউন্সিল এর Connecting Classroom প্রজেক্টে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করে। আমি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে যুক্ত করে বিভিন্ন প্রজেক্ট শেয়ারিং করে। এইকাজের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক আমাদের বিদ্যালয়টি ISA Full Award অর্জন করে যা আমার বিদ্যালয় এবং আমাকে আরও সমৃদ্ধ করে।


এখনও পর্যন্ত প্রাণের শিক্ষক বাতায়নের সাথে আছি। এই শিক্ষক বাতায়ন এনে দিয়েছে খ্যাতি সম্মান, দেশের সেরা সেরা গুণী শিক্ষকদের সাথে পরিচিতি করিয়েছে। 


কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় হাঁপিয়ে উঠেছি কিন্তু ছেড়ে দিইনি। শিক্ষকতা পেশায় যতদিন থাকবো শিক্ষক বাতায়ন প্লাটফর্মের সাথেই আছি। শিক্ষক বাতায়নের আরও সমৃদ্ধি কামনা করছি।



মো. মিজানুর রহমান

সিনিয়র শিক্ষক, 

নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,

কুমিল্লা ।

মন্তব্য করুন