Loading..

মুজিব শতবর্ষ

২২ আগস্ট, ২০২১ ০৫:১৪ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব তিনি শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, তিনি বাঙালি জাতিকে অনন্যসাধারণ ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে হাজার বছরের বাঙালির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তো বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ, চেতনা ও দর্শনের নামÑ একটি ইতিহাস। তিনি শুধু বাঙালির নয়, তিনি বিশ্ববরেণ্য, বিশ্বনন্দিত ‘বিশ্ববন্ধু’।

তার আগমন ঘটেছিল মধুমতি নদীর তীরের অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। নিভৃত পল্লীর ছায়া ঢাকা গাঁয়ে, কাশফুলের সুভ্রতার মোহমুগ্ধ বাঁকে, মাটির ভালোবাসায়, বাতাসে বিকশিত হয়েছে তার প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বায়ুর কোমল পরশ শরীর ভেদ করে মর্মে জাগিয়েছে পরম দেশপ্রেম, দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, হৃদয়ে জাগিয়েছে বলিষ্ঠ শপথে শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার ঐকান্তিক চেতনা ও প্রেরণা। তাই তো তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে বাঙালি জাতির জন্য এনে দিয়েছেন মহান স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে বহু খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ এসেছেন; কিন্তু এমন করে কেউ বাঙালিকে জাগাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু তার নেতৃত্বের সম্মোহনী শক্তির এক জাদুকরী স্পর্শে ঘুমন্ত ও পদানত বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। অতঃপর বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে পরাধীনতার গ্লানি থেকে জাতিকে মুক্ত করে তিনি এনে দিয়েছেন রক্তিম লাল-সবুজের পতাকাখচিত স্বাধীন-সার্বভৌম এক বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা।

তাই তো ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়?’ তিনি অপকটে সে প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ সাংবাদিক আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার দুর্বল দিকটা কী? বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’ তাই তিনি কখনোই মনে করেননি যে, এ বাঙালিই একদিন তাকে হত্যা করবে। তিনি চেয়েছিলেন তার এ বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু ঘাতকের সেই নির্মম বুলেটের আঘাত তার স্বপ্নকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। ১৯৭৫-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসক ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা এ দেশ শাসিত হওয়ায় সে সময় বাংলাদেশের অগ্রগতি তো দূরের কথা, তারা সমগ্র বাংলাদেশকে ভয়াবহ সংকট ও ঝুঁকির মধ্যে নিমজ্জিত করে রেখেছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বিঘিœত হয়েছে বারবার। তারই ফলে জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ গড়তেই তার সুযোগ্য মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হাল ধরেছেন শক্ত হাতে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহিদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’ ফলে আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ও মুজিববর্ষ তথা সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। তবে বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা কতদূর এগিয়েছি, তা তার জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষে সঠিকভাবে নিরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা জরুরি। তাহলে আমরা আত্মবিশ্লেষণধর্মী, ক্রিয়াশীল, চিন্তাশীল ও অগ্রগামী জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তার প্রকাশ ও প্রসার ঘটিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করতে পারব।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন ও সাফল্য অনেক। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা শুধু বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেই সীমাবদ্ধ নয়; বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’-এর অর্থ ব্যাপক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই সোনার মানুষ তৈরি করা অতীব জরুরি। সোনার মানুষ বলতে বোঝায় সৎ, আদর্শবান, নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, নির্মোহ, নিরহঙ্কার ও নির্ভীক এবং মাধুর্যসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।

কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আর্থিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতেই সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।"

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি