Loading..

খবর-দার

২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৫৩ অপরাহ্ণ

পানি বাহিত রোগ ও প্রতিকার

পানিবাহিত রোগ সারা বিশ্বেই আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অনুন্নত বিশ্বে শিশুদের পানিবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে।

প্রতিবছর বিশ্বে পানিবাহিত রোগে ১৫ লাখ লোক আক্রান্ত হয় এবং অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, সর্বোপরি স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে ৮ লাখ ৪২ হাজার লোক অকালে মৃত্যুবরণ করছে।

এই অকাল মৃত্যু রোধ করতে পারে নিরাপদ পানি পান করা, দক্ষ মল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, স্যানিটারি ল্যান্ট্রিন ব্যবহার করা এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য সামান্য এক ফোঁটা নোংরা পানিতে ৫ কোটিরও বেশি ব্যাকটেরিয়া বাস করতে পারে।

মল বা বিষ্ঠা রোগের খনি-দূষিত পানি, নখ, মাছি, মাটি ইত্যাদির মাধ্যমে জীবাণু খাদ্যে যায়- সেই খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে একজন সুস্থ ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত হয়। বাতাসের মাধ্যমেও রোগ ছড়ায়।

ভাইরাস : যা সাধারণ মাইক্রোস্কপের সাহায্যেও দেখা যায় না। ভাইরাস হেপাটাইটিস এ এবং ই (জন্ডিস), পলিওমাইলাইটিস, রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ইত্যাদি।

ব্যাকটেরিয়া : টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বর, রক্ত আমাশয়, ই, কলাইজনিত ডায়রিয়া, কলেরা, ফুডপয়োজনিং ইত্যাদি।

পরজীবী বা প্রটোজয়া : অ্যামিবিয়াসিস, জায়ারডিয়াসিস, ডায়রিয়া, আমাশয় রোগ হয়।

কৃমি : গোলকৃমি, সুতাকৃমি, ফিতা কৃমি, আলপিন বা কাঁটার মতো কৃমি, নিকাটর আমেরিকানা, স্ট্রংলিলয়েড স্টারকরালিস, ইন্টারবিয়াস ভারমিকুলারিস, ট্রাইসুরিয়াস ট্রাইসুরা ইত্যাদি ছাড়া আরও কিছু পরজীবী পেটের মধ্যে বাস করছে যার কারণে পেট ব্যথা, পেটের অসুখ, বদহজম ইত্যাদি হয়।

লেপ্টসপাইরাল : উইলসডিজিজ করে।

শ্বাসকষ্টের কারণ ও প্রতিকার

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চারটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যেমন- সাবান, নিরবিচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ পানি, হাত জীবাণুমুক্ত করতে আলকোহলমিশ্রিত উপাদান, গ্লাভস এবং জীবাণুমুক্ত ধারালো সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব। ৪৮ শতাংশ ডায়রিয়া ৫০ শতাংশ নিউমোনিয়া প্রায় ১৬-২১ শতাংশ অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগ কমানো সম্ভব শুধু হাত ধোয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে।

স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বোঝাতে হবে স্যানিটেশন, হাইজিন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ পানি পান করা, ডিটারজেন ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়ার উপকারিতা বিষয়ে। স্বাস্থ্য শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

ডায়রিয়া হলেই এন্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। অন্তত ৩ দিন শুধু প্রতিবার বাথরুম থেকে এসে অর্ধ থেকে ১ গ্লাস খাবার স্যালাইন অথবা যে পরিমাণ পায়খানা বা বমি হবে সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ০ থেকে ২ বছর ১ থেকে ২ আউন্স, ২ থেকে ৪ বছর ২ থেকে ৪ আউন্স, ৪ থেকে ৬ বছরের বয়সে ৪ থেকে ৬ আউন্স পরিমাণ খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, চালের স্যালাইন ইত্যাদি। ৬ বছরের পর থেকে যে পরিমাণ পায়খানা বা বমি হবে। সে পরিমাণ খাওয়াতে হবে।

আহারের ব্যাপারে এক সময় বেশকিছু খাবার বিধিনিষেধ ছিল। এখন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে গুরুপাক খাবার না খেয়ে লঘুপাক খাবার খাওয়া উত্তম। রক্ত আমাশয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার জরুরি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে এক কোর্স এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তাদের গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপদ পানি সরবরাহ, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিশ্চিতের জন্য জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নিরাপদ পানি সরবরাহ, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন।