সহকারী শিক্ষক
২৯ জুন, ২০২২ ০৮:০৬ অপরাহ্ণ
রাগ, পেরেক ও দেয়াল
রাগ, পেরেক ও দেয়াল
অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, অনেক কিছুই আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘটে না। আর তখন আমরা রেগে যাই। রাগের মাথায় অনেক সময় আমাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, আমরা ভুলে যাই কোনটা উচিৎ আর কোনটা অনুচিত।
রাগের মাথায় আমরা অনেক কিছু বলে ফেলি বা করে ফেলি, যা আমাদের আশেপাশের মানুষকে আঘাত করে, কষ্ট দেয়। মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে হয়ত আমাদের অনুশোচনা হয়, কিন্তু আমরা রাগের মাথায় মানুষকে যে আঘাত দেই, সেটা কি মুছে যায়?
এরকম একটা গল্প।
***
এক ছেলে, বয়স ১৩/১৪ হবে, সে খুব মেজাজ খারাপ করত। খুব তুচ্ছ ঘটনায় রেগে যেত, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। তবে ছেলেটির বাবা খুব বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। একদিন তিনি ছেলেকে ডেকে এক ব্যাগ বড় বড় পেরেক দিলেন। আর বললেন, তুমি যখনই রেগে যাবে তখনই বাড়ির উত্তর দিকের দেয়ালে একটা করে পেরেক গেঁথে দিবে।
প্রথম দিন ছেলেটা সেই দেয়ালে ৩৭টা পেরেক গাঁথল। দিন যত যেতে থাকল, তার নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাড়ল। সে দেখল রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চাইতে দেয়ালে পেরেক গাঁথাটাই বেশি কঠিন। দেয়ালে পেরেক গাঁথার সংখ্যাও কমতে থাকল। কয়েক সপ্তাহ পরে ছেলেটি মেজাজ পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারল, দেয়ালে একটা পেরেকও আর গাঁথতে হলো না।
সে তার বাবাকে বলল যে আজকে দেয়ালে তার একটাও পেরেক গাঁথতে হয় নাই। তার বাবা তাকে বললেন, এরপর যেদিন যেদিন তুমি মেজাজ পুরো নিয়ন্ত্রণে রাখবে, একবারের জন্যও রেগে যাবে না, সেদিন সেদিন তুমি দেয়াল থেকে পেরেকগুলি টেনে তুলবে।
দিন যেতে থাকল, সাথে সাথে দেয়ালে পেরেকের সংখ্যাও কমতে থাকল। অবশেষে একদিন ছেলেটা তার বাবাকে গিয়ে সংবাদ দিল যে দেয়ালে একটা পেরেকও আর নাই।
তখন তার বাবা তাকে হাত ধরে দেয়ালের কাছে নিয়ে গেলেন। বললেন, তুমি খুব ভাল কাজ করেছ আমার পুত্র। কিন্তু একটা জিনিস দেখো, দেয়ালে যে গর্ত হয়েছে সেগুলির দিকে তাকাও। এই দেয়ালটা আর কখনোই আগের মত হবে না। আমরা যখন রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলি তখন সেগুলিও এর মত ক্ষত তৈরি করে। তুমি একটা মানুষকে চাকু দিয়ে আঘাত করো, এরপর যতবারই বলো যে আমি দুঃখিত, ওই ক্ষতটা ওখানে থেকে যাবে।
***
আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। আমরা হয়ত চিন্তা করি না, রাগের মাথায় যে প্রতিক্রিয়া দেখালাম তা আসলে আরেকজনকে কতটা আঘাত করল।
আমাদের উচিৎ রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা। রাগের মাথায় কখনোই কাউকে কিছু বলা উচিৎ নয়। কেউ যদি আসলেই কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ডিজার্ভ করে, কারো যদি কড়া কোনো কথা প্রাপ্য হয়, সেটা ঠাণ্ডা মাথায়, চিন্তা করে বলা উচিৎ।
রাগের মাথায় কিছু বলে ফেললে আপনি হয়ত পরে অনুশোচনা করবেন, কিন্তু যা বলে ফেলবেন সেটা ফেরত নিতে পারবেন না।
সৌঃ সি বি