Loading..

ম্যাগাজিন

১৭ মার্চ, ২০২০ ০৮:৫৮ অপরাহ্ণ

মামার সুর(ছোটগল্প)


মামার সুর

জহির 


ঘুম থেকে জেগেই আমি মামাকে দেখেলাম। আহ! কি আনন্দ আমার। ছোট বোন মিলি সেজেগুজে রেডি।

মামা বাড়ি যাবো ভাবতেই আনন্দ লাগছে আমার।

রিক্সায়, ট্রেনে, গাড়ীতে আবার পদ্মাসেতুতেও চড়বো। মজার সে কথা সজিবকে বলছিলাম। সে আমার কাছের বন্ধু।

বাবা আমাকে জলদি রেডি হতে বললেন। আমি জানতাম মামা আমাদের নিতে আসবেন। তাই জামা কাপড় আগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। মিলি , আমি, বাবা, মা, মামা আর কাজের মেয়ে সখিনা সবাই মিলে রেলযোগে পদ্মাসেতু হয়ে রাজশাহী মামার বাড়ি পৌছলাম। 

আসলে বলতে ভুলে গেছি, এটা ছিল গরমের ছুটিতে তমা আপুর গায়ে হলুদ আর বিয়ের দাওয়াত। বড় মামার সবচেয়ে আদরের ছোট মেয়ে।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের শুরুতে ছোট মামার গান সেকি মা-মা-মা...তীব্র চিৎকার! চমকে ওঠে সবাই। কাঁচা আমের শরবত গলা দিয়ে নামতে গিয়ে যেন আটকে যায়।

আমি বললাম, ‘মামা, তোমার এ সুর আজকের মতো বন্ধ রাখা যায় না?’

কেন?

না মানে! আমরা বলছি। আচ্ছা, তুমি শুধু মা মা মা করছ কেন বলো তো?

মামা মুচকি হাসলেন। হারমনিয়ামটা ঠেলে কিছুটা দূরে সরিয়ে বললেন, ‘শোন, গান হলো সাত সুরে বাঁধা। সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি। তো “মা” স্বরটা আমার গলায় ঠিকমতো উঠছিলনা না। তাই ওটা একটু শান দিয়ে শুরু করছিলাম আর কি। গান কি এতই সহজ? কষ্ট করলে তবেই না কেষ্ট মেলে।’


তোরা কি জানিস না আমি একবার দেশাত্মবোধক গান গেয়ে পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছিলাম?

ছোট মামার সেই পুরস্কারের গল্প এ বাড়ির সবারই মুখস্থ। সেটা মামার স্কুলজীবনের ঘটনা। ঈদের পর পাড়ায় পুনর্মিলনী-জাতীয় একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। তারই একটা পর্বে ছিল দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতা। আরও কয়েকজনের সঙ্গে মামাও নাম দিয়েছিলেন। তবে এটা ভাবেননি যে শেষ পর্যন্ত সত্যিই তাকে গাইতে হবে। যখন তার নাম মাইকে ঘোষণা করা হলো, মামা অনুষ্ঠান থেকে পালানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু বন্ধুবান্ধব থাকলে যা হয়, সবাই মিলে ধরে তাকে মঞ্চে তুলে দিল। তখন দেখা দিল আরেক ভয়াবহ সমস্যা, ভালো-মন্দ তো পরের কথা, মামার কোনো গানই মনে পড়ছিল না! উপস্থাপক ও বিচারকদের বারবার অনুরোধের মুখে মামা শেষ পর্যন্ত একটি গান গেয়েছিলেন। আর সেটা ছিল আমাদের জাতীয় সংগীত। এদিকে ঘটনাচক্রে অন্য তিন প্রতিযোগীর কেউই উপস্থিত ছিল না। ফলে একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে মামা একটা পুরস্কার পেয়েছিলেন বটে! মামা অবশ্য গল্পটা অনেক রং চড়িয়ে বলেন।

ছোট মামার বিয়েটা ছিলো অনেকটা এরকমই। সেটা না হয় আরেক দিন বলবো। অনেক আনন্দ মজা করে ছুটির দিনগুলি কাটিয়ে স্কুল খোলার আগের দিন আমরা সবাই বাসায় পৌছলাম।

 


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি