Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

২৯ মার্চ, ২০২০ ০৫:২৬ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হল-নির্মলেন্দু গুণ, আবৃত্তি: মুহাম্মাদ আসআদুল্লাহ

আমাদের কলেজে ছোট পরিসরে মুজিব বর্ষের সূচনা অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। সে অনুষ্ঠানে আমি কবি নির্মলেন্দু গুণের “স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হল” আবৃত্তি করেছি।সে অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে পালিত হওয়ার কারণ সবার জানা। তা হলো করোনা ভাইরাস।

ছোট পরিসরে হয়েছে তাতে কি?

প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানও তো বৃহৎ পরিসরে, এমনকি কোটি জনতার মাঝেও ছড়িয়ে দিতে পারি। তাই না?

আর এ জন্য আমি সেই অনুষ্ঠানের আবৃত্তি করা কবিতাটির ডিজিটাল রুপ দিলাম।

আর প্রিয় বাতায়নের মাধ্যমে আপনাদের কাছে নিবেদন করলাম। তখন দেখেছিল শ’খানেক শিক্ষার্থী আর এখন দেখবে অগনিত জনতা।

সে ‍অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ জনাব মো. মুসফিকুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারি অধ্যাপক জনাব মো. রেজাউল করিম, বক্তব্য রাখেন সহকারি অধ্যাপক জনাব মাসুদা রহমান ও প্রভাষক মুহাম্মাদ আসআদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে সকল শিক্ষক ও শ’খানেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। অনুষ্ঠান শেষে প্রীতি ভোজের আয়োজন করা হয়।

 

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হল-নির্মলেন্দু গুণ

আবৃত্তি: মুহাম্মাদ আসআদুল্লাহ

 

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে

লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে

ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’

 

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,

এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷

তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে

ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?

 

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত

কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ

কবির বিরুদ্ধে কবি,

মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,

বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,

উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,

মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷

 

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,

শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি

একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে

লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷

সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷

না পার্ক না ফুলের বাগান, এসবের কিছুই ছিল না,

শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত

ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷

আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল

এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷

 

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে

এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,

লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,

পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷

হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,

নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে

আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷

একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল

প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’

 

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,

হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’