Loading..

খবর-দার

০১ জুলাই, ২০২০ ১২:৩২ অপরাহ্ণ

স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন

একদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামে বড় ধরনের চাপে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দফা উত্থান-পতন হওয়া পেঁয়াজ ও রসুন এখন তুলনামূলক কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার বেশ অস্থির। চাহিদা বাড়লেই পণ্যের দাম হুটহাট করে বেড়ে যাচ্ছে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমে যাচ্ছে। এর আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে এত অস্থিরতা দেখা যায়নি।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর যে কয়টি পণ্যের দামে ব্যাপক উত্থান-পতন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি পণ্য পেঁয়াজ ও রসুন। গত সাড়ে তিন মাসে অন্তত ১০ বার এই দুটি পণ্যের দাম উঠা-নামা করেছে। তবে বর্তমানে পণ্য দুটি সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে।

আর চলতি বছরের মার্চের শুরুতে রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের কেজি। কয়েক দফা দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে।

কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র‌্যাব। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।

তবে রোজার আগে আবারও অস্থির হয়ে উঠে পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দফা দাম বেড়ে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় পৌছে যায়। এরপর রোজার মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৪৫ টাকায় নেমে আসে। এ পরিস্থিতে ঈদের আগে আবার দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয় পেঁয়াজের কেজি। তবে ঈদের পর দাম কমে পেঁয়াজের কেজি আবার ৪০ টাকায় নেমে আসে।

মালিবাগের হাজীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বলেন, বর্তমানে আমরা খুব কষ্টে আছি। করোনার কারণে আয় তেমন নেই। অন্যদিকে সবকিছুর দাম বাড়তি। এখন পেঁয়াজ-রসুন হয়তো কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চাল, ডাল, আলুর দাম তো অনেক। চাল, ডাল, আলুর দাম কম থাকলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষগুলো অন্তত দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।

রামপুরার বাসিন্দা শহীদ বলেন, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কমেছে, এটা ভালো সংবাদ। তবে এটা কদিন স্থির থাকে তা দেখার বিষয়। গত কয় মাস ধরেই তো দেখছি দাম কমার পরেই হুটহাট আবার দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম এখন অনেক বেশি। অথচ বেশিরভাগ মানুষের আয়েই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষগুলো এখন বেশ কষ্টে আছে।

মালিবাগের হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, অনেক দিন ধরেই ব্যবসা করছি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম এমন উঠানামা আমি আগে কখনও দেখিনি। কখন কীসের দাম বাড়ছে-কমছে আমরাও ঠিকমতো তাল মিলাতে পারছি না। ফলে মাঝে-মধ্যে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। কিছু দিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এই পেঁয়াজ কেনা পড়ছে ৩৫ টাকার ওপরে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী রাজু বলেন, পেঁয়াজ-রসুনের দাম করোনার মধ্যে অন্তত ১০ বার উঠা-নামা করেছে। তবে এখন পেঁয়াজ-রসুন সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এর থেকে দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম। বরং গত কয়েক মাসের চিত্র বলছে- যে কোন সময় আবার পেঁয়াজ-রসুনের দিম বেড়ে যেতে পারে।

এমএএস/জেডএ/জেআইএম