Loading..

খবর-দার

০৫ জুলাই, ২০২০ ০৮:২৮ অপরাহ্ণ

করোনায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে

করোনায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে


বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু করোনার এই ক্রান্তিকালে বিক্রির প্রবণতা বেড়ে চলছে। গত ১৫/২০ বছরে শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও কলেজ বিক্রি হয়েছে। 

সর্বশেষ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে কম্পিউটার কম্পোজ করা সাদা কাগজের একটি বিজ্ঞাপন দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে। বিজ্ঞাপনে লেখা- 'ফার্নিচারসহ স্কুল বিক্রি হবে। ফোন করুন- ...।'

বিজ্ঞাপনদাতার নাম তকবীর আহমেদ। তিনি মোহাম্মদপুরে বেড়িবাঁধের ঢাকা উদ্যান এলাকার নবীনগর হাউজিং ৪ নম্বর সড়কে অবস্থিত 'ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলে'র প্রতিষ্ঠাতা। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে তিনি শিশুদের এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। করোনাকালে বিদ্যালয়ের টিউশন ফিসহ সব রকম আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থ সংকটে পড়ে তিনি বিদ্যালয়টি এখন বিক্রি করে দিতে চান।

জানা গেল, তকবীর আহমেদ এক মাস ধরে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে তার স্কুলটি বিক্রির বিজ্ঞাপন সংবলিত পোস্টার নিজ হাতে সেঁটে চলেছেন।

চোখে অশ্রু নিয়ে তকবীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, স্কুল বিক্রি না করলে চলব কী করে? চার মাস ধরে স্কুলের কোনো আয় নেই। প্রতি মাসে ভবনের ভাড়া দিতে হয় ৪৬ হাজার টাকা। ৫০ হাজার টাকা আছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। আছে আরও অন্যান্য খরচ। মার্চ মাস থেকে বাচ্চারা (ছাত্রছাত্রী) কোনো টাকা-পয়সা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন দিয়েও তো কোনো লাভ হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ফলাফল শূন্য। তিনি জানান, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিলে তিলে তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আড়াইশ' শিক্ষার্থী রয়েছে। ১২ জন শিক্ষক ও দু'জন কর্মচারী রয়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ, বাসাবাড়িতে যাদের বাবা-মা কাজ করে, গার্মেন্ট শ্রমিক, সিএনজি অটোর ড্রাইভার, ট্যানারি শ্রমিকের সন্তানরা তার বিদ্যালয়ে পড়ে। তারা কোনোভাবেই করোনাকালে টিউশন ফি দিতে রাজি নয়।

ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, পড়ে আছে স্কুলের শূন্য আঙিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তারা বিক্রি করে দেবে। কিছু তো করার নেই। সবকিছু ছেড়ে হয়তো পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যেতে হবে।

রাজধানীর মিরপুর ও শাহআলী এলাকার আরও দুটি স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মিরপুর কাজীপাড়ার শাইনিং স্টার স্কুলও। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হেলাল উদ্দিন তার পরিচিতজনের কাছে সে কথা জানিয়েছেও। তবে যোগাযোগ করা হলে পরিচয় পেয়ে হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল জানান, তারা বিক্রি করবেন না।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে দেশের প্রায় ৬০ ভাগ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে বেকার হয়ে পড়বেন প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। সরকারের আর্থিক সহায়তা না পেলে এই ১০ লাখ পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়বে।

তিনি বলেন, অতীতে কখনও সরকারের কাছে বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করিনি আমরা। সর্বশেষ গত সপ্তাহে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন। উপমন্ত্রী বলেছেন, তাদের দাবিটি শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলাপ করবেন। এবং পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাবেন।