সহকারী শিক্ষক
১২ জুলাই, ২০২০ ১০:২৩ অপরাহ্ণ
শিক্ষকের ভূমিকা
শিক্ষকের ভূমিকা:
১৯৯২ সাল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। ছোট ওয়ান-বড় ওয়ান, ওয়ান, তারপর ক্লাস টু পেরিয়ে ক্লাস থ্রি (তৃতীয় শ্রেনি) তে পড়ি। ক্লাসের ৩৮জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আমার রোল ছিল ৩২। যদিও আমি নিয়মিত পড়তে বসতাম কিন্তু ক্লাসের পড়া স্যারদের নিয়মিত দিতে পারতাম না। এজন্য ক্লাসে স্যারদের বকুনিও খেতাম অনেক। বিশেষ করে ইংরেজি ক্লাস। ইংরেজিকে ভীষণ ভয় পেতাম তখন। তাছাড়া বাড়িতে পড়ানোর মত তেমন ছিল না। বাবা নামমাত্র লেখাপড়া জানলেও মা ছিল একেবারেই নিরক্ষর। একদিন আমাদের ক্লাসের ইংরেজি শিক্ষক শ্রী ধীরেন্দ্র নাথ ঠাকুর স্যার ক্লাসের পর আমাকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে আমার বিস্তারিত শুনে তাঁর কাছ থেকে সুবিধাজনক সময়ে পড়া বুঝিয়ে নিতে পরামর্শ দিলেন এবং বাড়িতে পড়ার একটি কৌশল শিখিয়ে দিলে। তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা ও ভালো কাজে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহ দিতেন। সেদিনের স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তারপর থেকে যখন কোনো বিষয় বুঝতাম না তা নোট করে রাখতাম। বিশেষ করে ইংরেজি পড়ার সময় কোনো শব্দের উচ্চারণ কিংবা অর্থ বুঝতে না পারলে ছোট চিরকুটে লিখে পকেটে রাখতাম। বাইরে বের হয়ে পড়া জানা পরিচিত বড়দের যখন যার দেখা পেতাম চিরকুটে লিখে নেওয়া শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ জিজ্ঞাসা করতাম, শব্দের পাশে তা লিখেও নিতাম। বাড়িতে এসে পড়ার সাথে মিলিয়ে নিতাম। এভাবেই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্যারের পরামর্শ ও সহয়োগিতায় সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়তে সক্ষম হই। তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩৮জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই। এটাই আমার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরে থেকে আর ইংরেজি ভীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্যারদের আচার-আচরণ, স্নেহবাৎসল্য, সহযোগিতামূলক মনোভাব, সততা ও শ্রদ্ধাবোধ, সর্বপরী তাঁদের আদর্শ আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। ভাবতাম বড় হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হব। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যখন হাইস্কুলে উঠলাম, তখন স্যারদের দেখে ভাবতাম বড় হয়ে হাইস্কুলের শিক্ষক ই হব। তারপর এভাবেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের দেখেও ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতাম।
২০০০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগ, ২০০২ সালে এইচএসসি দ্বিতীয় বিভাগ, ২০০৬ সালে বি.এ (অনার্স) দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ২০০৭ সালে এম.এ (বাংলা) দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই। অতপর, এনটিআরসিএ-এর আওতায় ২০০৯ সালে ৫ম শিক্ষক নিবন্ধনে প্রভাষক (বাংলা), ২০১২ সালে ৮ম শিক্ষক নিবন্ধনে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) এবং ২০১৩ সালে ৯ম শিক্ষক নিবন্ধনে সহকারী শিক্ষক শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে উত্তীর্ণ হই।
সৌভাগ্যক্রমে ২০১৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে কর্মরত আছি। আসলেই আমি ধন্য মহান পেশায় যুক্ত হতে পেরে। কৃতজ্ঞতা জানাই ঐসব স্যারদের প্রতি যাঁরা আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছে, অনুপ্রাণিত করেছে। যাঁদের পাথেয় অনুসরণ করে আজ আমি এতটা পথ আসতে পেরেছি।
তাই আমিও স্বপ্ন দেখি, আমার কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাগুলোর যথাযথ বিকাশ সাধনের, যারা রাত পোহালেই বিদ্যালয়ে ছুটে আসে মনের আনন্দে। আশ্রয় নেয় আমাদের (শিক্ষকদের) ছায়তলে। সকল শিক্ষকের ভূমিকা হোক শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ। পেশাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলি স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ। শেষ অবধি যেন শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে পারি সে প্রত্যাশায়-
মো: হোসেন আলী
সহকারী শিক্ষক
পূর্ব পয়ড়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম।