সহকারী প্রধান শিক্ষক
০৮ আগস্ট, ২০২০ ১২:০২ অপরাহ্ণ
মাশরাফির একটি আড্ডা
তিনি ভীষণ আড্ডাপ্রিয়। খেলার ফাঁকে-কাজের ফাঁকে পরিবার, সতীর্থ,
বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, পরিচিত সাংবাদিকেরা তো বটেই। আধা পরিচিত যে কারও সঙ্গে
তিনি চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারেন। এভাবে তিনি কতই আড্ডা দেন। তবে চৈত্রের এ
দুপুরে বিসিবির একাডেমি ভবনের জিমনেসিয়ামের ওয়াশরুমের সামনে মাশরাফি যে
আড্ডাটা দিলেন, সেটিকে নিছকই আড্ডা বলা যায় না। আড্ডাচ্ছলে তাঁর পুরো
অধিনায়কত্বই যেন পর্যালোচনা করলেন। আবার ভবিষ্যতের দুরবিনে চোখ রেখে
জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে তাঁর কত স্বপ্নের কথা। সমস্যাটা হচ্ছে,
আড্ডাটা তিনি দেননি লেখার উদ্দেশে। মাশরাফিকে তাই উদ্ধৃতি করে কিছু লেখার
উপায় নেই। তবে আড্ডাচ্ছলে বলা তাঁর কথাগুলো এতই মূল্যবান, বারবার শুধু কানে
বাজে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কীভাবে
বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক হয়েছেন, সেটির অনেক ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ চলে আসবে
সামনে। তবে মাশরাফি মনে করেন, তাঁকে সাহসটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল ২০১৫
বিশ্বকাপের সাফল্য। বিশ্বকাপ থেকে ফিরে বাংলাদেশ টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজ
খেলেছিল দেশের মাঠে। বাংলাদেশ জিতেছে প্রতিটি। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ
আফ্রিকার মতো ভীষণ শক্তিশালী দলগুলো বাংলাদেশ থেকে যেতে হয়েছে সিরিজ হারের
স্বাদ নিয়ে। নিজেদের মাঠে খেলা হয়েছে বলেই নয়, অধিনায়ক মাশরাফিকে ভীষণ
আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল আসলে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাটা।
এই সাফল্য পরের সিরিজগুলোয় অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছিল তাঁকে।
পেরেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে নিজের অনেক পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিতে।
পেরেছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ক্ষুরধার ক্রিকেটীয় ভাবনার সঙ্গে তাল
মেলাতে।
অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য তিনি অনেকই পেয়েছেন। তবে এত সাফল্যের
ভিড়ে মাশরাফির কাছে বড় আফসোস হয়ে আছে ২০১৯ বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে নিজে
ভালো করতে পারেননি। দলও পৌঁছাতে পারেনি অভীষ্ট লক্ষ্যে। মাশরাফির লক্ষ্য
ছিল অন্তত সেমিফাইনাল খেলবেন। সেটি না হওয়ায় এবং নিজের ব্যক্তিগত
পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় আজও মন খারাপ হয় মাশরাফির। কদিন আগে তাঁর কাছে
(অধিনায়ক হিসেবে) বিদায়ী সিরিজের জার্সি কিংবা টুপি চাইলেন এক সাংবাদিক।
মাশরাফি জানালেন, সতীর্থরা সব নিয়ে গেছেন। নাছোড় সাংবাদিক এবার ২০১৯
বিশ্বকাপে ব্যবহৃত তাঁর জার্সি-টুপিও চাইলেন। রসিকতার সুরে মাশরাফির উত্তর,
‘নিয়েন না। আপনার লেখা খারাপ হয়ে যেতে পারে! আমার কোনো সতীর্থ চাইলে বলি,
নিস না, পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যেতে পারে।’
রসিকতা
হলেও মাশরাফির হৃদয়ের রক্তক্ষরণটাই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ কথায়। ‘ইশ, ওই
ম্যাচে আমি যদি এমন বোলিং করতে পারতাম, তামিম যদি ৩০-৩৫ রান ফিফটিতে রূপ
দিতে পারত, তাহলেই ম্যাচটার গল্প অন্য রকম হতে পারত আর টুর্নামেন্টে আমাদের
অবস্থান...’—২০১৯ বিশ্বকাপের দুঃখ কিছুতেই ভুলতে পারেন না মাশরাফি। ভুলবেন
কী করে, বড় স্বপ্ন নিয়ে যে নিজের শেষ বিশ্বকাপটা খেলতে গিয়েছিলেন। আপাতত
স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়লেও মাশরাফি আশাবাদী, ভারতে হতে যাওয়া ২০২৩
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে। তাঁর আশা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল,
মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ দলের চার সিনিয়র খেলোয়াড়কেই এ বিশ্বকাপে পাবে
বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফউদ্দিন, লিটন দাস, সৌম্য সরকাররা তত দিন
হয়ে উঠবেন আরও পরিণত, আরও দুর্দান্ত। ভারতের মতো অনেকটা চেনা কন্ডিশনে
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে ভারসাম্যপূর্ণ এক দল নিয়ে। ভবিষ্যতে চোখ রেখে
মাশরাফি দিব্যি দেখতে পারছেন, সেমিফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ!
তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জিতেছে ৫০টি ওয়ানডে। সাফল্যের বিচারে তিনিই
দেশের সেরা অধিনায়ক। মাশরাফির ছেড়ে দেওয়া ওয়ানডে অধিনায়কত্বের ব্যাটনটা
উঠেছে তামিম ইকবালের হাতে। পঞ্চপাণ্ডবের তিনজন লম্বা মেয়াদে বাংলাদেশ দলের
নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তামিম সেটি পেলেন ক্যারিয়ারের ১৪ বছরে এসে।
অধিনায়কত্বের উত্তরসূরি হিসেবে বাঁহাতি ওপেনারকে দেখে মাশরাফি খুশি।
তামিমের যে গুণটি তাঁকে ভীষণ আশান্বিত করছে, সতীর্থদের সঙ্গে মিশতে
পারার ক্ষমতা। সতীর্থরাও তামিমের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পছন্দ করেন। এই
সূত্র কাজে লাগিয়েই তো মাশরাফি সফল হয়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দর্শন ছিল,
সতীর্থদের মধ্যে এই মনোভাবটা তৈরি করা যে ‘ভাইয়ের জন্য খেলব।’ মাশরাফি
এভাবেই সেরাটা বের করে নিয়ে এসেছিলেন সতীর্থদের কাছ থেকে। তামিম কি পারবেন?
উত্তরটা সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে মুঠোফোনে চোখ রাখেন
মাশরাফি। মুঠোফোনের ঘড়ি বলছে, কথায়-আড্ডায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। এবার
তাঁকে ঘরে ফিরতে হবে।