প্রভাষক
২৩ আগস্ট, ২০২০ ০৫:০৬ অপরাহ্ণ
কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
কচুশাক বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি শাক, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কচুশাক
খুবই জনপ্রিয়। বাড়ির উঠোনের কোণে, ধানের ক্ষেতের আইলে, বিলের ধারে যত্রতত্র বিনা
যত্নে জন্মে বলে কচুশাক সহজেই পাওয়া যায়, কিনে খেতে হয় না। কচুশাক
বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও তরকারি বেশি জনপ্রিয়।
ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুটকি মাছ দিয়ে কচু শাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই
জনপ্রিয়। খুব বেশি সহজলভ্য বলে কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু এই
কচু শাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।
কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উত্স, রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর
অভাবে হওয়া সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাছাড়া কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ
কমে গেলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে
রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও। তাই মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা
রাখে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়।
আসুন আমরা জেনে নেই কচু শাক এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণের কথা।
কচুশাকের পুষ্টিগুণ
কচু শাকে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমূহ। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে- ৬.৮
গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন
বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬
কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।
উপকারিতাঃ
আসুন এবার জেনে নেই কচু শাক এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণের কথা-
·
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে
আয়রন থাকে তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই
চলে।
·
কচুশাকে ভিটামিন এ থাকে
যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে
দেয়।
·
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে
ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা কচুশাক খেতে পারেন।
·
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তাছাড়া
ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক
খাওয়ানো উচিত।
·
আমাদের শরীরে অক্সিজেনের
সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকের
আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে
উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
·
কচু শাকের সব চেয়ে বড়
উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও
ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
·
কচু শাকে বিদ্যমান নানা
রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজ
লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য
কচু বা কচুশাক খেতে পারেন।
তাছাড়া
কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচুশাক
এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের
ঝুঁকিও কমে।
সতর্কতা
কচু শাক বা কচু খেলে অনেক
সময় গলা চুলকায় কারন এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর
রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু
বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
আগানগর ডিগ্রি কলেজ,
বরুড়া, কুমিল্লা।
[সুত্রঃ অনলাইন
ডেক্স]