সহকারী অধ্যাপক
২৮ অক্টোবর, ২০২০ ১১:১১ অপরাহ্ণ
বেসরকারি শিক্ষক পরিবারের দিনলিপি
বেসরকারি শিক্ষক পরিবারের দিনলিপি
#মুজিব_বর্ষে_শিক্ষা_জাতীয়করণ_অাবশ্যক
প্রজম্ম-১
"আসছ মাষ্টরের(শিক্ষক) ঘরে, দেখবা টেকা(টাকা) না থাকলে কি হইব, হাড়া(খাটুনি)
আছে৷"
আমার মায়ের কাছ থেকে শুনেছি মা যখন নতুন বৌ হয়ে সংসারে আসে একদিন রান্না করতে করতে আমার দাদি মাকে এ কথা বলেছেন ৷
আমার দাদা ছিলেন বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক৷ প্রথমে নোয়াখালীর চাটখিল হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন৷ পরে লক্ষ্মীপুরের দিঘলী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন৷
শুনেছি ,দাদার বাবা ছিলেন মূলতঃ কৃষক৷ সেই সাথে সিজনাল জিনিসপত্রের ব্যবসা করতেন৷ সাত মেয়ে ,এক ছেলে ছিল তাঁর৷ তিনি চেয়েছিলেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে দাদা তাঁর ব্যবসাটা ধরুক৷
কিন্তু দাদা চেয়েছিলেন পড়ালেখা করতে- শিক্ষক হতে৷ তাই একদিন ঘরে থাকা পাট বিক্রি করে বেরিয়ে পড়লেন৷ পরিবারের কাছে বেশ কয়েকবছর কোন খবর ছিলনা কোথায় ছিলেন৷
চাটখিল এক বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা করে BN পাস করে , বাড়িতে আসলেন৷ এরপর শিক্ষকতায় ঢুকলেন৷
তাই সবাই ডাকত BN স্যার. নাম ছিল সৈয়দ আহমেদ৷
বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা ভেতরে জর্জরিত হলেও বাহিরে ঠাট আর নাম - সুনাম আছে৷
দাদা-দাদির সংসারেও সেই অবস্থা ছিল৷ শিক্ষিত মানুষ, স্যার !সেই সুনামে দূরের দূরের আত্মীয়-স্বজনও বেড়াতে আসত৷ পাড়া - প্রতিবেশি আবদার নিয়ে আসত৷ আর এসবের বেশিরভাগ সামলাতে হত দাদীকে৷
স্কুল ছিল বাড়ি হতে দূরে, তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে রান্না-বান্না করার খাটুনিটা করতে হত৷ ফজর নামায পড়েই চুলা ধরাত৷ আবার বিকালে স্কুল থেকে আসার আগেই খাবার রেডি রাখা৷
দাদার বাবার অনেক সম্পত্তি ছিল৷ কোন ভাই না থাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে দাদাই সব পেয়েছেন৷
ফসল ঘরের খাবার রেখে উদ্ধৃত বিক্রি করতেন৷ তবুও তিন ছেলে চার মেয়ের সংসারে খুব জৌলস ছিল না৷ টানাটানির ঘানি ছিল৷
দাদার বাবা নাকি তাই মাঝে তিরষ্কার করত৷
শিক্ষক হিসাবে আমার দাদা বড় কাজ করেছেন সমাজের অন্যদের মাঝে শিক্ষার সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন৷ অনেককে নিজের খরচে পড়িয়েছেন৷
নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তুলেছেন৷ সামাজিক দায়িত্ব, কুসংস্কারমুক্ত করে গড়ে তুলেছেন৷
এখনও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া দাদার কোন ছাত্রের সাথে দেখা হলে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন দাদাকে৷
দাদার নাতনী হিসাবে সমীহ করেন আমাকে৷ তখন এক সুখ পাই৷
স্বাধীনতার যুদ্ধের ঝড়ে ভেঙ্গে যায় দাদার অনেক স্বপ্ন৷ বড় ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে শহীদ হয়৷ ছেলের কথা শুনে তিনিও স্টোক করেন৷( তখন শুনেছি কলিজা ধরেছে)৷ মারা যান এক মাসের ব্যবধানে৷
মেঝ ছেলে তখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভার্সিটি ভর্তির অপেক্ষা৷ ছোট ছেলে কুমিল্লা বোর্ডে মেট্রিকে সপ্তম স্ট্যান্ড করেন৷
মাস গুণে দিন যাওয়া বেসরকারি শিক্ষক, জমা অার কই?
ছোট ছেলে -মেয়েদের রেখে কোন ব্যাংক ব্যালেন্স ছাড়াই চলে গেলেন পারাপারে৷
অন্য সন্তানদের নিয়ে জীবন সাঁতরিয়ে কূলে উঠেছেন আমার দাদী৷
#প্রজম্ম-২
- নাত জামাই, ভেবে দেখ৷ ছেলে ভদ্র, মেধাবী৷ ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার৷ এটাও ভাল কিছু করতে পারত!বাবা বড় ভাই মারা যাওয়ায় পরিবারের দায়িত্বে পারেনি৷
- নানা, আপনার কথা মানলাম৷ ছেলে ভদ্র, মেধাবী সব ঠিক৷ ভাই কি করে তা দিয়ে লাভ নেই! ছেলে কী করে, সেটাই বড়! ছেলে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক৷ এখানে মেধাবী হয়েও লাভ নেই, কোন প্রমোশন নাই৷
তাই আমার মতামত যদি চান তো, বলব আমি রাজি নই৷ শিক্ষকদের সংসার চালাতেই মুশকিল, তারপর পারিপার্শ্বিক৷"
আমার নানুর মামা তথা আমার মায়ের নানা বেসরকারি শিক্ষক আমার বাবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে, আমার বিমানবাহিনীর এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিনিয়ার বড় খালু নিচের উক্তিটি করে প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন৷
মায়েরর নানা অনেকটা জোর করেই বেসরকারি শিক্ষকের কাছে মাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন৷
আমার নানুর বাড়ি ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়া বাড়ি৷ আমার দেখা একটা আদর্শ গ্রামের বাড়ী৷
শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, কাচারি ঘর, মোক্তব, প্রাইমারী স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, বড় মাঠ আছে বাড়ির সামনে৷ বাড়িটাও বেশ বড়৷ বেশীরভাগ সবাই শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার,প্রবাসী, সরকারি চাকুরিজীবি৷
তখন মোটামুটি লোকজন ছিল, বর্তমানে বেশিরভাগই শহরে৷
শুনেছি, আমার নানা টাইটেল পাস করার পর প্রথমে গ্রামের মাদরাসায় ঢুকে৷ নানার বড় ভাই তখন কলকাতা চাকুরি করতেন৷ উনি একদিন বাড়ি এসে শুনলেন নানা মাদরাসায় বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন৷ উনি, রাত্রে নানা বাসায় আসলে বললেন, ঢাকায় চল৷ ওখানে ব্যবসা ধরিয়ে দেব৷
এত চিৎকার করলে বাচ্চাদের নিয়ে, মাথা থাকবে না৷ কয় টাকা পাস? সেই থেকে নানাও মতিঝিল ব্যবসা করতেন ৷
অর্থবিত্ত পরিবার থেকে হঠাৎ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এসে আমার মাকে অনেক বিব্রত আর হোঁচট খেতে হয়েছে৷ আমার ধৈর্য্যশীল মা সব নীরবে সহে গেছেন৷
নিজের বোনেরা, চাচাতো বোনেরা অনেক দামী দামী ড্রেস আপ করে আসত৷ আর এজন্য আমার নানুর কাছে প্রায়ই মায়ের জিনিস নিম্ন মানের লাগত৷ প্রায়ই বলত, জামাইকে বলতে পারসনি আরেকটু ভাল দেখে কিনতে!
একবার আমার বড়খালাদের পাশের বাসায় গেল৷ যাবার আগেই বড় খালা বললেন, ওরা কেউ জিজ্ঞাস করলে বলবি, তোর হ্যাজব্যান্ড প্রধান শিক্ষক৷ ওরা উকিল পরিবারের শিক্ষক শুনলে নাক কুচকায়৷
অথচ, আমার বাবা ছিলেন সহকারি শিক্ষক৷ মা কোন উত্তর না দিয়ে নীরব ছিলেন৷
আমার মায়ের বিয়ের সময় গহনার দাম কম ছিল৷ আমার দাদী তাই আব্বুকে বলে, পাঁচ ভরির মত গহনা দিয়েছিল৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমার নানু বাড়ী হতে, গহনাগুলো হারিয়ে যায়৷
মা কান্না-কাটি করতেছিলেন৷ পাশের ঘরের মায়ের এক চাচা (নির্মম সত্য, তবে, আমাদের কাছে বেদনার কথা )আরেকজনকে বলতেছিলেন,
আহারে ! জিনিসগুলো হারিয়ে গেছে! মাস্টর মানুষ! বললেই কী আবার জোগাইতে পারবে?"
আসলেই বেসরকারি শিক্ষক বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি আর গহনা বানিয়ে দেওয়ার৷
আমার বাবা তাঁর কম বেতন, আর্থিক দৈন্যতা ছোটবেলায় কখনও আমাদের বুঝতে দেননি৷ আমরা কোন ভাইবোনও কখনও অন্যায় আবদার ও করিনি৷
এখন শুনছি, তখন বেসরকারি শিক্ষকদের ঈদে বোনাস দেয়া হত না৷ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসাবে, আমিই অনেক দৈন্যতা দেখেছি৷ ঈদে নতুন জামা কাপড় ত কেনা হত না৷ আমরা বড় দুই ভাইবোন ছিলাম তখন৷প্রায়ই দেখতাম আমার নানা নতুন জামা পাঠিয়ে দেয়৷
আমার চাচা তখন সপরিবারের লিবিয়া থাকতেন৷ ১৯৯২ সালে ঢাকায় এসে সেটেল হলে, ঈদের পর একদিন উনাদের বাসায় যাই৷ চাচা বুয়েট ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার৷ চাচী জিজ্ঞাস করলেন, ঈদে কোন জামাটা কিনলে?
বললাম, কোন জামা কিনিনি৷ আমার ছোট চাচাতো বোন আমার বাবাকে বলল, জেঠু আপনি আপুকে ঈদে জামা কিনে দেননি কেন?
আব্বু শুধু হাসল৷
এরপর থেকে আমার চাচা ঈদে সবার জন্য জামা কাপড় পাঠিয়ে দিতেন৷
আমার চাচা ইঞ্জিনিয়ার, মামা নিউজিল্যান্ডের ডাক্তার, নানা ব্যবসায়ী, ফুফা সেনাকর্মকর্তা, খালুরা বিমানবাহিনীতে এবং রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার৷ সেই সুবাধে সবার কাছ থেকে গিফট পেতাম৷ জামা কাপড় চলত৷
তাছাড়া আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বড় বাড়ি,পুকুর, ধানী জমি আছে৷
আম, জাম, কাঁঠাল, ডালিম, পেয়ারা, আমড়া, বরই, ডেউয়া, নারিকেল, সুপারি সহ বিভিন্ন ফলে ভরপুর আমাদের বাড়িটি৷ তেমন ফল কিনতে হয় না,বরং বিক্রি করে৷বড় বাগানে বড় বড় কাঠ গাছ ইত্যাদি ৷
তবু আমার মা মাঝে মাঝে বাবাকে খোঁচা দিত, সব বাচ্চাকে একত্রে জামা কাপড় দেওয়া লাগলে বুঝত!
আমার সাথের অন্য বেসরকারি শিক্ষকের ছেলে- মেয়েদের দেখতাম আরও করুন অবস্থা৷ একটা জামা গায়ে দিয়ে আসত স্কুলে৷ সেটা ছিঁড়লে আরেকটা নতুন কেনা হত৷
অবিবাহিত কিছু শিক্ষকদের ছাড়া অন্য শিক্ষকদের দেখতাম রংউঠা, ছিঁড়ে পরিত্যাক্ত না হওয়া পর্যন্ত একটা জামা পরতো৷ বিলাসিতার বালাই ছিল না৷
নিজে শিক্ষকতা করে এখন বুঝি৷ আমি স্যালুট জানাই সেইসব শিক্ষককে যাঁরা এত দীনতার মধ্যেও হাসিমুখে দেশ, জাতি গড়ার কাজ করছেন৷
সত্যিকারে বলতে কী, বর্তমান আমি নারী হিসাবে, বলি, নিজের পরিবারে অর্থনৈতিক দায়িত্ব কিছুটা কম। সেখানে একজন পুরুষ শিক্ষককে পুরো সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়;
প্রজন্ম -৩
ছোটবেলায চারিদিকে আত্মীয়-স্বজন সবার চাকচিক্য দেখে বেসরকারি শিক্ষক হব সে স্বপ্ন কখনো ছিল না । স্বপ্ন দেখতাম মামার মত ডাক্তার কিংবা চাচার মত ইঞ্জিনিয়ার হব। না হয় বিসিএস ক্যাডার ।
কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা বেসরকারি শিক্ষক বানিয়ে ছাড়ল ।
পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে ধাক্কাটা তাই আমিই পেলাম ।
"মেয়ে বড্ড অহংকারী হয়ে গেছিস, ভার্সিটি/ মেডিক্যালে কোথাও পরীক্ষা দিতে হবে না৷"
শিক্ষক বাবার মুখে এ কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ৷
বাবাই আমার আদর্শ৷
বাবাই আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন ।
আমি রাতে পড়ালেখা করতাম, বাবাও জাগতেন৷ আমার পড়ার ডিস্টার্ব হবে ভেবে মাকে কাজে সাহায্য করতেন৷
অবশ্য এ মানসিক ধাক্কাটার জন্য দু' বছর আগেই প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল! তবু চোখে ঝর্ণাধারা!
বাবা পাড়া গাঁয়ের মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক৷ বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণাতেই প্রথম হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম হয়েছি৷ এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে লেটার সহ স্টার মার্কস পেয়েছি৷
1997 এ এসএসসির পর নোয়াখালী মহিলা কলেজে এইচএসসি জন্য ভর্তি হতে চেয়েছি৷ ফরম এনে,বাবা বললেন, হোস্টেল খরচসহ মাসে চার হাজার লাগবে৷ বেতন পাই চার/ পাঁচ হাজার ,আরও চার বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলব?
এ প্রথম বাবার বেতন সম্পর্কে জানলাম৷ বিলাসিতা ছিলনা সত্য, কিন্তু বাবা আমাদের অভাব বুঝতে দেননি৷
অগত্য বাড়ী হতে ছয় কিমি দূরে, জনতা কলেজে ভর্তি হলাম৷ পিছনের সারির স্টুডেন্ট সহ সাতজন ছিলাম বিজ্ঞান বিভাগে৷
আমি ছাড়া আর কেউ ক্লাস করত না৷ বারোটার পর কলেজ খালি হয়ে যেত৷ বিজ্ঞানের স্যাররা দূরে হতে আসতেন, ক্লাস দেরিতে৷ কলেজের মহিলা পিয়ন বসে থাকত আমার জন্য৷ উনি রাগ হতেন৷ প্রাইভেট পড়ার সমর্থ নেই, আমাকে ক্লাস করত হত৷ দুপুরে নির্জন ছয় মাইল পথ হাঁটতাম 'আর চোখের জল মুচতাম৷
এইচএসসিতে রেজাল্ট বেশি ভাল হয়নি, ছয় নম্বরের জন্য স্টার মার্কস পাইনি৷
কোচিংয়ের সুযোগ হয়নি৷
তবু চেয়েছিলাম, মেডিক্যাল আর ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষাটা দেই৷ বাবার ধমকে থেমে গেলাম৷
ভর্তি হলাম নোয়াখালী সরকারি কলেজে ইংলিশ অনার্সে৷
শহরে বাসা না থাকায় আত্মীয়ের বাসায় পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকার পেইনফুল এক্সপিরিয়েন্স নিয়ে মাস্টার্স শেষ করলাম৷
প্রথম বুঝতে পারিনি। আব্বু খুব ব্যথিত ছিলেন আমাকে কোথাও ভর্তি পরীক্ষা না দিতে দিয়ে । ভাই বোন পাঁচ জনের পড়ার খরচ! তবে, গ্রামের মানুষ বলত পড়ার যে খরচ! বিয়ে দিয়ে দিন। তা করেননি । সাধ্যের মধ্যে আমাদের পড়ালেখা করিয়েছেন ।
মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েই গেস্ট টিচার হিসাবে জনতা ডিগ্রি কলেজে ডুকে গেলাম ৷ শুরু হল বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে যাত্রা ।
পরিচিত অনেকেই বলত, বীথি স্টুডেন্ট হিসেবে যত ভাল ছিল সে হিসেবে কিছু করতে পারেনি । লজ্জায় বলতে পারিনি তখন । আমাদের সামর্থ্য নেই।
আমার ভাইদের দুজনের একজন ও শিক্ষক হতে চায়নি। অন্য অনেক শিক্ষকদের সন্তানকে ও দেখেছি বেসরকারি শিক্ষকতা অপছন্দ করতে। তাছাড়া কেউ চাইলে ও বেসরকারি শিক্ষকদের তো পোষ্য কোটা নেই ।
নিজে এখন বেসরকারী শিক্ষক হয়ে বুঝি, আর্থিক দৈন্যতার জন্যই বাবা আমাকে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দেননি৷ শিক্ষকরা অন্যের সন্তানকে মানুষ করে, কিন্তু নিজের সন্তানকে অর্থাভাবে পারে না৷
তাই মুজিব_বর্ষে_শিক্ষা_জাতীয়করণ_আবশ্যক ।
অবশেষে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার "ছুটির দিনে" আমার বাবার লেখা হতে উদ্ধৃতি দিচ্ছি -
" আমি একজন শিক্ষক৷ সমাজের উচ্চপদস্থদের আর্থিক দিক দিয়ে তাল মিলিয়ে চলতে পারিনা সত্য, চারপাশের মানুষের কাছে যে সম্মান পাই, তা কম কিসের?"
সমাপ্ত