Loading..

খবর-দার

২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষায় সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টিভিতে দেখলে পাঁচ বছরের কন্যা মাহফি বলে উঠে, ‘পাপা-পাপা শেখ হাসিনা ‘দিদন’। ‘দিদন’ তার দাদি-শ্রদ্ধা, ভালবাসার ব্যক্তিত্ব। ‘দিদন’ দেখতে প্রধানমন্ত্রীর মতো। প্রধানমন্ত্রীকে ভালবেসে তিনি ‘দিদন’ বলে সম্বোধন করেন। আমার ব্যাখ্যা ভুল হতে পারে। তবে এটা ঠিক, শিশুর শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আন্তরিকতা, সরলতা অকৃত্রিম। সব মানুষকে শিশুরা ভালবাসে না, সকল মানুষও শিশুদের সমান গুরুত্বও দেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের ভালবাসেন। শিশুদের সান্নিধ্যে অনুষ্ঠান করেন। তাঁর শাসনামলে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সরকারী খরচে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য প্রত্যেক উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে উৎসব পালিত হয়, যার নাম পাঠ্যপুস্তক উৎসব। পাঠ্যপুস্তক উৎসব যেমন বাংলাদেশের জন্য নতুন, তেমনি এক সঙ্গে এত বই বিতরণের দৃষ্টান্তও বিশ্বে অভিনব, অনন্য। প্রতিবছরের প্রথমদিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উদ্ভাবনী অনুষ্ঠানটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের নিয়ে করেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি ভাবেন শিশুরা কীভাবে আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করবে, ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, শিশুদের ভালবাসার শেখ হাসিনা দেশের জনগণেরও মাথা উঁচু করে চলার প্রেরণা। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ বিশ^ব্যাংক যখন অর্থ বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংককে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন, দেশের অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সে চ্যালেঞ্জে তিনি জয়ী হয়েছেন, প্রিয় বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার উদ্যোগ, সাহস ও প্রেরণায় দেশের অর্থে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। বাংলাদেশের এই সামর্থ্য শুধু অর্থনীতির অঙ্কে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের বর্তমান প্রজন্মকে, দেশের জনগণকে নতুন করে আত্মবিশ্বাসী করেছে। সততা এবং সক্ষমতার ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নবপ্রাণে সঞ্চারিত হয়েছে। অথচ, এক যুগ আগেও বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের প্রায় শীর্ষ স্থানে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে তুলে এনেছেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস রোধে তাঁর কয়েকটি যুগান্তকারী উদ্যোগও দেশ এবং দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স’ এর এক গবেষণায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের অন্যতম সৎ শাসকের স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নিয়মানুবর্তিতা, জীবনদর্শন ও শাসনের সংস্পর্শে এসে অনেক নেতা-কর্মী, আমলা সততার জীবনবোধে অভ্যস্ত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের উদ্দীপনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে (১৯৯৫-৯৬ খ্রিষ্টাব্দ ) দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। তাঁর নেতৃত্বে গত দশ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ১১.৩ শতাংশে। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বয়স্কভাতা’, ‘বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাভাতা’, ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘গৃহায়ন’, ‘আদর্শ গ্রাম’, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচীসহ অনেক মানবিক ও সৃজনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। দেশের দুর্যোগকালীন সময়েও তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছেন। করোনা দুর্যোগে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনাসহ ৫০ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৪০০ টাকা করে দিয়েছে তাঁর সরকার। তাঁর নির্দেশে সরকারী খরচে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিক্ষাকে আমি খরচ মনে করি না; আমি মনে করি এটি একটি বিনিয়োগ, জাতিকে গড়ে তোলার বিনিয়োগ।’ তাঁর শাসনামলে রাষ্ট্রের দরিদ্র ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিসহ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়ক কর্মসূচী চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশই কোন না কোন প্রণোদনা, বৃত্তি বা শিক্ষানুকূল ভাতা পেয়ে থাকে। শিক্ষকতা পেশাকে শেখ হাসিনা একটি মর্যাদাশীল পেশা মনে করেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদমর্যাদা প্রদান করেছেন। একটি সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি রাজনীতিবিদ না হতেন তাহলে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতেন। একজন লেখক, সম্পাদক, গবেষক ও দার্শনিক শেখ হাসিনার রয়েছে কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিকদের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা। তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করেন, নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান কিংবা নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েও শেখ হাসিনা সহজ-সাধারণ বাঙালী নারীর মতো বিলাসিতাহীন জীবনযাপন করেন।

মহামারী করোনা পরিস্থিতি ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জন্য সরকারী খরচে প্রস্তুতকৃত ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। এ বছর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা হলো ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্ধ শিক্ষার্থীর জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক এবং প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ী, দাখিল, মাধ্যমিক (বাংলাভার্সন), মাধ্যমিক (ইংরেজী ভার্সন), কারিগরি, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক। এ দৃষ্টান্তও বিশ্বে বিরল। রাজনীতির প্রভাবশালী নিয়ামক, মহান শিল্পী, জীবন্ত কিংবদন্তি শেখ হাসিনা বিশ্বেও অন্যতম বুদ্ধিভিত্তিক, দক্ষ ও সেরা প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতিসহ অর্জন করেছেন পঞ্চাশের অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বাংলার মানুষ মনে করে, শেখ হাসিনা প্রত্যহ-প্রতি মুহূর্ত দেশের কল্যাণে অবিচল ও উন্মুখ থাকেন। তিনি দেশিকোত্তম ব্যক্তি, সর্বোত্তম পথ নির্দেশক, দেশ হিতব্রতী যোগ্যশাসক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বার মন্ত্রোচ্চারণের মতো বলেছেন, ‘দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারাবিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু না।’ সে স্বপ্নেই আজকের শিশুরা গর্ব করে বলে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’

লেখক : ড. মুহম্মদ মনিরুল হক,  গবেষক।