Loading..

খবর-দার

২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

ইএফটিতে বেতন : এমপিও সংশোধন নিয়ে শিক্ষকদের দুশ্চিন্তা বন্ধের উদ্যোগ চাই

ইএফটিতে বেতন পাওয়া খবর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের যতটুকু উচ্ছ্বসিত করেছে, এমপিও সংশোধনের জটিলতার বিষয়টি তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বলে মনে হয়। এমপিওশিটে নামের দু'-একটি অক্ষর সংশোধন করতে এক বস্তা কাগজের প্রয়োজন হবে কেন? নিয়োগের সময় যতগুলো কাগজ লেগেছে, সামান্য  সংশোধনীতে তার সবগুলো কাগজ ও নথীপত্রের প্রয়োজনীয়তা অযথা হয়রানি ছাড়া কিছু নয়। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পদে পদে হয়রানি করার মানে কী, তা কিছুতেই খুঁজে পাইনা।

সন্দেহ নেই, ইএফটি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসের এক-দুই তারিখে পূর্ববর্তী মাসের বেতন হাতে পাবার গ্যারান্টি দেবে। শিক্ষা খাতে সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। কিন্তু, তা শুরুর আগে এমপিও সংশোধনের যে দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে, তা সত্যি কষ্টকর। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে বা প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন পেতে চাইছেন বহুদিন ধরে। একটি সময়ে তারা ২০-২৫ তারিখে আগের মাসের বেতন পেতেন। এখন অবশ্য সেটি নেই। এখন ১০-১২ তারিখের দিকে পাওয়া যায়। সরকারি চাকরিজীবীরা মাসের এক-দুই তারিখে বেতন পান। তাদের মত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সঠিক সময়ে বেতন পেতে বহুদিন থেকে চেয়ে আসছেন।
 
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাও গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে লড়াই করে আসছে। শিক্ষকদের পাশে থেকেছে। অবশেষে  ইএফটির মাধ্যমে বেতনে সে চাওয়াটি পূরণ হতে চলেছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের মনে অন্যরকম আনন্দ তৈরি হয়েছে। সেই সাথে সরকারিকরণের পথটি আরও মসৃণ হতে চলেছে বলে তারা মনে করছেন। ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এ সরকারের আরেকটি উপহার বটে। কিন্তু, ইএফটিতে যাবার আগে এমপিও শীটে সংশ্লিষ্ট অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর নামের বানানে কিছু ভুল থাকায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এরকম ভুল প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের দু'-চার জন শিক্ষক-কর্মচারীর রয়েছে। সারা দেশের সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীর অর্ধেকের বেশির এই রকম নামের বানানে ভুল রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এই ভুলটি কে বা কারা করেছে ? এই ভুলের দায় শিক্ষক-কর্মচারীর নয়। এমপিও শিট শিক্ষক-কর্মচারী তৈরি করে দেননি। তারা সঠিক ও শুদ্ধ বানানে বাংলা ও ইংরেজিতে তাদের নাম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য নির্দিষ্ট ফরমে লিখে দিয়েছেন। এমপিওতে নামের বানান এদিক সেদিক করে কে প্রিন্ট করেছে ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এসব ভুল ইচ্ছে করেই কেউ না কেউ করেছে। কোন অবস্থায় এসব অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। এর দায় শিক্ষক-কর্মচারীগণ নিতে পারেন না। এর খেসারত কে দেবে? এখন ভুল সংশোধনের নামে আবার যদি সতের-আঠারটি ডকুমেন্ট চাওয়া হয়, তবে তা সত্যি একটি কষ্টদায়ক কাজ হবে। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হবেন। এটি সহজ পদ্ধতিতে সংশোধনের পথ শিক্ষা অধিদপ্তরকেই বের করে দিতে হবে। এসব ভুল তারাই করেছেন। সংশোধনের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের দুশ্চিন্তা করতে হবে কেন ? 


 
আমরা মনে করি, একদম সহজ উপায়ে এমপিও সংশোধন করা যেতে পারে। তাহলে নিরীহ শিক্ষক-কর্মচারীরা হয়রানি থেকে বেঁচে যাবেন। যাদের নামের বানানে এক দুই অক্ষরে ভুল আছে, সে ভুলটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা সভাপতির ফরওয়ার্ডিংয়ের আলোকে সংশোধন করে দেয়া যেতে পারে। সাথে এনআইডি কিংবা এসএসসি বা সমমান সনদ প্রয়োজন হতে পারে। আর বাকী সব কাগজ দিয়ে কী হবে ? এ ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, অনুমতিপত্র, স্বীকৃতিপত্র---- এইপত্র, সেইপত্র দিয়ে কী কাজ? সব আজে বাজে আর আলতু ফালতু ঝামেলা। আরেকভাবে সহজ উপায়ে এমপিও সংশোধন করা যেতে পারে। প্রত্যেক উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং একাডেমিক সুপারভাইজার আছেন। তাদের মাধ্যমে সে সব ভুল সংশোধনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। তারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল শিক্ষক-কর্মচারীর নামের বানানে ভুল আছে এবং শুদ্ধ বানান কি হবে, তা সংগ্রহ করে সুপারিশসহ সরাসরি ইএমআইএস সেলে পাঠাতে পারেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান তার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সরাসরি ইএমআইএসের ওয়েব সাইটে লগইন করে যাতে নামের বানানের ছোটখাট ভুলগুলো সংশোধন করতে পারেন, সে সুযোগটিও দেয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে এনআইডিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এনআইডিতে যার নামের বানান যে রকম আছে, এমপিওতে ঠিক সেই রকম হলে ভাল হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে নামের বানানে নানা সমস্যা আছে। কারো সার্টিফিকেট বাংলায়, কারো ইংরেজিতে। কারো একটি বাংলায় হলে আরেকটি ইংরেজিতে। আবার কারো বাংলা একটিতে নামের প্রথমে পুরো 'মোহাম্মদ' আরেকটিতে  সংক্ষেপে 'মো.'। অনুরুপ ইংরেজি একটি সনদে নামের প্রথমে পুরো' Mohammad/Muhammod/Muhammed আবার অন্যটিতে সংক্ষিপ্ত 'Md'. আবার Md এর পর ফুলস্টপ নিয়েও বিড়ম্বনা। কারও সেটি আছে, কারও সেটি নেই। এ জাতীয় ছোটখাট ভুলগুলো অভারলুক করা যায় কিনা, ভেবে দেখা প্রয়োজন। 

শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকরিতে এসেছেন। এখন ইএফটি চালু করার জন্য নতুন করে এসব কাগজপত্র টেনে লাভ নেই। সহজ উপায়ে যাতে এমপিও কপি সংশোধন করা যায়, সে বিষয়টি আগে নিশ্চিত করা দরকার। ইএফটির জন্য এমপিও সংশোধন করতে গিয়ে কেউ যেন কোন হয়রানির শিকার না হন, সেটি আমরা চাই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সকল শিক্ষক-কর্মচারীর নামের বানানে ভুল আছে, তাদের নামের বানানের ভুলরূপ ও শুদ্ধরূপ-এরকম দু'টি ছকসহ প্রয়োজনীয় তথ্যছক দিয়ে একটি ফরমেট সব প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কিংবা জেলা শিক্ষা অফিসারের ফরওয়ার্ডিংসহ শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ম্যানুয়্যালি এমপিও সংশোধন করে দেয়া যেতে পারে। যেহেতু, এখন সব কাজে এনআইডি তথা জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয় সেহেতু এর আলোকে এমপিওতে নামের বানান সংশোধন করলে বিষয়টি সহজতর হবে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি লাঘব হবে। অনলাইনে ঘরে বসে এনআইডির নামের বানানের সাথে মিল রেখে এমপিওতে নাম সংশোধনের সুযোগ দিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে এগিয়ে আসবে, এই আশায় আজ এখান থেকেই বিদায় নিচ্ছি।

লেখক : অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।