Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০৫:৩১ অপরাহ্ণ

শিক্ষায় করোনার ধাক্কা সামলানোর উপায়

 মোছাঃসামছুন্নাহারঃ করোনা-পরবর্তী সময়ে আমাদের পৃথিবী, সমাজ আর আগের মতো হবে না। এখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, কিন্তু ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের করোনাভাইরাস আমাদের ঠিকই পরীক্ষা নিচ্ছে। পরীক্ষার বিষয় মানবিক গুণাবলি। এই পরীক্ষায় অনেক সমৃদ্ধ, সম্পদশালী দেশ পাস মার্ক পায়নি। কাজেই এই বৈশ্বিক সমস্যা সফলভাবে মোকাবিলা করতে আমাদের মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হতে হবে, কাজ করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি। মধ্যম কিংবা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে আমাদের জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো দক্ষ হতে হবে। এই দক্ষতা অর্জনের চাবিকাঠি হলো শিক্ষা।

তাই শিক্ষায় আমাদের জোর দিতেই হবে। আমাদের ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি; পৃথিবীর ২০০টি দেশের জনসংখ্যা আমাদের ছাত্রসংখ্যার থেকে কম। বিশ্বায়নের যুগে দেশে যোগ্য কর্মী না থাকলে বিদেশিরা আমাদের দেশের কাজ নিয়ে যাবে এবং এখন নিচ্ছেও। পত্রিকা মারফত জানা গেল, প্রতিবছর বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকদের ফি বাবদ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আমরা বিদেশে চলে যেতে দিচ্ছি। এই টাকায় মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে ১৫ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান করা যায়। আমাদের নিশ্চয়ই জ্ঞান-দক্ষতার অভাব রয়েছে, যার ফলে দেশের সব বড় প্রকল্পেই বিদেশি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি। দেশে অনেক মানুষ, কিন্তু যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের বড় অভাব। তাই নিজের দেশের কাজ নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আমাদের বিশ্বমানের শিক্ষা চাই। তবে বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য হঠাৎ করে তো আমরা যথেষ্ট পরিমাণে যোগ্য-অভিজ্ঞ শিক্ষক পাব না। আমরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তাহলে সমস্যাটি অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব। সরকার এখন টিভির মাধ্যমে এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন এ কথা বলে আসছি, সময়সূচি করে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের পাঠদান করানো সম্ভব। লকডাউনের ফলে আমাদের শিশু, কিশোর, তরুণেরা মাসের পর মাস পড়ালেখা ছাড়া থাকতে পারে না। এটি মানসিক বিকাশের জন্য অনুকূল নয়। এদের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে পাঠ্য বিষয়ের উপস্থাপনা তৈরি করে বছর ধরে পরিবেশন করা যেতে পারে। উপস্থাপনা তৈরির জন্যও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তা ২০ থেকে ২৫ লাখ ছাত্রের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে, তাদের মধ্যে জ্ঞানপিপাসা জাগাতে পারে এবং পাঠ থেকে যেন তারা আনন্দ পেতে পারে।

করোনার মতো মহামারি সমস্যায় যখন স্কুল-কলেজে উপস্থিত হওয়া নিরাপদ নয়, তখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার এই ধারাকে অব্যাহত রাখাই বড় সমাধান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা যে অনলাইনে কার্যকরভাবে দেওয়া যায়, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। এই পদ্ধতি আরও কার্যকর করার জন্য দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় যে কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা সমাধান করতে হবে। এই দুঃসময়ে শিক্ষাব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা জরুরি। উন্নত বিশ্বে দূরশিক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদেরও এই পথ অনুসরণ করতে হবে।

আমাদের তরুণ-কিশোরদের বুঝতে হবে যে জীবন গড়ার বেলায় পরিবার, সমাজ, দেশ ও সরকার কেবল পরিবেশ তৈরি করে দেবে। তাই করোনার দিনগুলোকে কাজে লাগাও। যে বিষয়গুলো শ্রেণিকক্ষে রপ্ত করা সম্ভব হয়নি, এখন তা শিখে নাও। অখণ্ড অবসরে পছন্দের বিষয়গুলো আত্মস্থ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করো। জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে শুধু নিজের জীবন গড়াই নয়, দেশ-সমাজের অগ্রগতিতেও অবদান রাখো।