Loading..

ব্লগ

রিসেট

০৭ নভেম্বর, ২০২২ ১০:২৮ অপরাহ্ণ

"আসুন মোবাইল ফোনের ১০ টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিই"

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। একাধিক গবেষণায় ভিত্তিতে হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদদের বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে মোবাইল ফোনের নানা ক্ষতিকর দিকসমূহের কথা। আসুন জেনে নেই মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি।

১. ঘাড় ব্যাথা

দীর্ঘসময় মাথা ঝুঁকিয়ে মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকার কারণে দেখা দিতে পারে ঘাড় ব্যাথার সমস্যা। অত্যধিক গেম আসক্তি, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেশি দিতে গিয়ে অনেক সময়ই মোবাইল ব্যবহারের সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।

ফলে মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়ে ব্যাথা দেখা দেয়। এজন্য যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রেখে ব্যবহার করা উচিৎ।

২. চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া

গবেষকদের মতে এ বিষয়টি ‘এপিজেনেটিক্স’ সম্পর্কিত বিষয়। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার একধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দেয়।

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে মোবইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে। মার্কিন ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, মোবাইলের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

স্ক্রিনের ফন্ট সাইজ বড় করে, চোখ থেকে অন্তত ১৬ ইঞ্চি দূরে রেখে এবং একটু পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে সবুজ গাছপালার দিকে তাকানোর মাধ্যমে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর সব সময় মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখার চেস্টা করবেন।

৩. কানে কম শোনা

মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে দেখা দিতে পারে শ্রবণশক্তি হ্রাস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। দৈনিক ২-৩ ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৩-৫ বছরের মধ্যে আংশিক বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কানে হেডফোন লাগিয়ে যত্রতত্র চলাফেরায় প্রতিনিয়ত অনেক দূর্ঘটনা ঘটছে। পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হওয়া ট্রেন, বাসসহ নানা যানবাহনগত দূর্ঘটনার বিরাট সংখ্যক কানে হেডফোন লাগিয়ে চলাফেরার কারণে হচ্ছে।

প্রয়োজন অতিরিক্ত সাউন্ডে গান না শোনা, সব সময় হোডফোন গুঁজে না থাকা এবং দীর্ঘসময় মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা কমিয়ে আনা সহ সর্বোপরি সচেতনতাই হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।

৪. অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি

২০১৬ সালের ১৬ জুনে dscout ব্লগের এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, গবেষণায় দেখা গেছে- সাধারণ একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর স্ক্রিনে ট্যাপ, ক্লিক ও সোয়াইপের পরিমাণ গড়ে ২ হাজার ৬ শ ১৭ বার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪ শ ২৭ বার। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে টাইপিংয়ের ফলে আঙুলের জয়েন্টে ব্যাথা হয়।

এমনকি এর ফলে আর্থরাইটিসের সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বসার ভঙ্গি, কাঁধ ও কানের মাঝামাঝি ফোন রেখে কথা বলা এবং অতিরিক্তত ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ মেসেজ টাইপিংয়ের কারণে বিভিন্ন ধরনের শারিরীক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে মেসেজ টাইপিং না করার এবং সঠিক পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৫. শুক্রাণু কমে যাওয়া

মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হওয়া হাই ফ্রিকোয়েন্সীর ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের বিভিন্ন কোষ ও পুরুষের প্রজননতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। মোবাইলের ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ঘনত্ব কমানো ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।

ফোন ব্যবহারের পর প্যান্টের পকেটে বা জামার সাইড পকেটে রেখে দেয়ার সময় মোবাইল যথেষ্ট উত্তপ্ত থাকার ফলে এটি অন্ডকোষের চারপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়। যার ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য প্যান্টের পকেটে বা শরীরের স্পর্শকাতর কোন অঙ্গের বেশি কাছে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬. নোমোফোবিয়া

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে সব সময় মোবাইল আছে কিনা, নাকি হারিয়ে গেলো এমন একটা ভয় তৈরি হয়। এই রোগের নাম নোমোফোবিয়া তথা নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া। যুক্তরাজ্যের ও ভারতের তরুণরা যথাক্রমে ৫৩ ও ২৯ শতাংশ এ রোগের শিকার।

এছাড়াও মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের উপরও যার প্রভাব পড়তে দেখা যায়। মোবাইল নির্ভরতা যথাসম্ভব কমিয়ে আনাই হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।

৭. হঠাৎ রিংটোন শোনা

মনের উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা থেকে মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীরা আকস্মিক রিংটোন বা ভাইব্রেশন বেজে উঠার শব্দ শুনতে পান। অর্থাৎ তাদের কাছে মনে হয় যে, কেউ বোধহয় কল করলো বা কোন নোটিফিকেশন আসলো। অথচ বাস্তবে এমন কিছু হয়নি।

অনেক ব্যবহারকারী অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে এমন সমস্যার কথা বুঝতেও পারেন না। মোবাইল থেকে দূরে থাকা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৮. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ব্যবহারকারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। একই সাথে অস্থিরতা ও অমনোযোগীতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তখন ব্যবহারকারী সহজে এ সমস্যা উপলব্ধি করতেও পারেন না।

নিজের অজান্তেই কারো সাথে অশোভন আচরণ করে ফেলেন। এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হলে অতিরিক্ত মোবাইল-আসক্তি কমিয়ে আনতে হবে।

৯. চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের তড়িৎ চিন্তাশক্তি কমে যায়। সৃজনশীল মেধা কমে যাওয়ার ফলে কোন কিছুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও নকলের আশ্রয় নেয়ার ফলে দিনদিন দেশের মেধাবী ছাত্ররা নৈতিক অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

মোবাইলে গেইমস ও সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির প্রতি আসক্তির ফলে শিশু-কিশোররা পানাহার ও দৈনন্দিন কাজকর্মে অমোনোযোগী হয়ে পড়ছে। মার্কিন ভাইরাসবিজ্ঞানী ড. ডেভরা ডিভাস মনে করেন, মোবাইলের তরঙ্গ রশ্মি শিশুদের স্বাস্থ্যক্ষতির কারণ হচ্ছে।

জাপানের ডকোমো ফাউন্ডেশন পাঁচটি দেশে জরিপ করে ৭০ শতাংশ শিশুর পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনকে দায়ী করেছে। তাই নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোনভাবেই শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেয়া যাবে না।

অনেক সময় শিশুর কান্না বা রাগ ভাঙ্গাতে অভিভাবকরা মোবাইলে কার্টুন বা গান চালিয়ে শিশুর হাতে দেন। যা পরবর্তীতে প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

১০. পর্নো-আসক্তি

মোবাইল ফোন সুলভ হওয়ায় বর্তমানে সব বয়সী মানুষের কাছেই এটি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। আকাশ সংস্কৃতির ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরুণরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠনের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, রাজধানী ঢাকার ৭৭ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি-আসক্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্নধরনের শারিরীক সমস্যার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং এর ফলস্বরূপ পর্নোগ্রাফি-আসক্তি অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই শিশু-কিশোরদের পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। ঘরের মোবাইলে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক রাখতে হবে।

মোবাইল ফোনের অন্যান্য ক্ষতিকর দিক

  • শিশু-কিশোরদের মধ্যে পারিবারিক মূল্যবোধ বিনষ্ট ও মা-বাবার উপদেশ না মানার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
  • মোবাইলের কারণে অতিরিক্ত সেলফি তোলা বা সেলফিটিস নামের নতুন একটি মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়েছে।
  • মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও ফসলি জমিতে যে টাওয়ারগুলো নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ফলে মানব শরীরের পাশাপাশি গাছপালা, ফলফলাদি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
  • স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি।
  • আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ব্রেন, মাথা বা গলার টিউমারের কারণ হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ও হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন