Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

০২ জুলাই, ২০২১ ০১:১৩ অপরাহ্ণ

দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষা

সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশে দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল পদ্ধতির শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। যা এখন অধিক কার্যকর ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিক্ষা উপকরণ ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত এই শিক্ষা ব্যবস্থায় সরাসরি শ্রেণিকক্ষে বা পরীক্ষার হলে উপস্থিত না হয়ে ঘরে বসে এবং জায়গার মানুষ জায়গায় থেকে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর একে অন্যের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। এই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, অডিও ভিডিও, রেডিও, টিভি, মোবাইল, ইমেইল ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থা যে কোনো বয়স ও পেশার মানুষের জন্য আনন্দদায়ক ও সহজবোধ্য।

মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে এবং জীবনমান উন্নয়নে ক্রমাগত জীবনযুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। সবাই এখন অনেক বেশি কর্মব্যস্ত। কর্মব্যস্ততার যুগে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া অনেকের পক্ষে কষ্টকর। তা ছাড়া সবার মেধা ও যোগ্যতায় একই মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সুযোগ হয় না। প্রত্যেকেই নিজের সুবিধামতো সময়ে এবং পছন্দের বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করতে আগ্রহী। দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কোনো একটি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষক একই সঙ্গে দেশময় শিক্ষাসেবা পৌঁছে দিতে পারেন। ভালো শিক্ষকের পাঠদান সবার জন্য নিশ্চিত করে জ্ঞানের সমবণ্টন হয়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী নিজের সুবিধামতো কম্পিউটারের সাহায্যে প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা ই-মেইল ইউজার আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট সাইটে ব্রাউজ করতে পারে। শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় সব উপাদান সেখানে থাকে। প্রযুক্তিবান্ধব হওয়ায় গুণগত মানসম্পন্ন লেটেস্ট তথ্য পাওয়া যায়।

একজন মানুষ সারাদিন কাজ করে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সে বই নিয়ে বসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে শুয়ে বসে শরীর-মন শিথিল করে বার বার ভিডিও দেখে, অডিও শুনে লেখাপড়া এবং জ্ঞান অর্জন করতে পছন্দ করে, যা দূরশিক্ষণ পদ্ধতির শিক্ষাব্যস্থায় সম্ভব। এই শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়ার খরচও কম এবং সেশনজট নেই। ফলে যে কোনো বয়স ও পেশার মানুষের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় মুক্তজ্ঞান চর্চা হয়; একমুখী শিক্ষার পরিবর্তে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই শেখার সুযোগ রয়েছে।

আমাদের সীমিত সম্পদ এবং জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী একসঙ্গে বসে ক্লাস করার প্রয়োজনীয় জায়গা, একই সময়ে অধিক শিক্ষা উপকরণের ব্যবহারও সম্ভব নয়। গরিব দেশে ল্যাবরেটরি, শ্রেণিকক্ষ ও বাসস্থানসহ ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির অর্থ নেই। দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজ নিজ উপকরণ দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ ও মহামারিতে এই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি গোড়ার দিকে পাঠসামগ্রী, অডিও, ভিডিও, রেডিও এবং টিভির মাধ্যমে শিক্ষাদানে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ই-বুক, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ওপেন বাংলা ওয়েব টিভি, ওপেন বাংলা ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপ, মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল মাক্রো এসডি কার্ড, অডিও ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ইন্টার অ্যাকটিভ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ও ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমাল ও নন-ফরমাল শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত শিক্ষাসেবা পাচ্ছে। লক্ষ্য করা গেছে বাউবির শিক্ষাব্যবস্থায় কেউ নিজের কর্মস্থলে বসে, গাড়িতে, নৌকায়, আকাশপথে, কেউ রান্নাঘরে, ক্ষেতে-খামারে কাজের ফাঁকে দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থানে বসে লেখাপড়া করতে পারছে।

প্রযুক্তি এখন হাতের নাগালে, প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল, ড্রইংরুমে রয়েছে শিক্ষা উপকরণ। একটু মনোযোগী হয়ে সেগুলোর ব্যবহার করে ঘরে বসে শিক্ষালাভ করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা আইসিটি ব্যবহার করে পাঠগ্রহণ এবং শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা ক্লাসে এক অন্যের যুক্তি খণ্ডন করে শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে দূরশিক্ষণ ও ভার্চুয়াল শিক্ষার ব্যাপক সাড়া জেগেছে আমাদের দেশে যা শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। যে দূরশিক্ষণ পদ্ধতির শিক্ষা একসময় মানুষের কাছে স্বপ্ন ও বিলাসিতা মনে হয়েছে, আজ তা সময়ের চাহিদা এবং পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবন ও পৃথিবীর চেহারা।।


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি