সহকারী শিক্ষক
০২ আগস্ট, ২০২১ ০৯:২০ অপরাহ্ণ
মানুষ যদি গাছ হতো
মানুষ যদি গাছ হতো
সমুদয় গাছ-ই গাছ নয়।গাছ মানে বৃক্ষ।বৃক্ষ
আবার কী?যে গাছ অক্সিজেন ত্যাগ করে কার্বন
ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে,ফল-ফুল,কাঠ,জ্বালনী,ছায়া,প্রকৃতির বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে (রোদ,বৃষ্টি,ঝড়)সেগুলো
হতে পারে।তবে গাছ তো গাছ-ই।যেমন-তৃণ,লতা,গুল্ম,ভেষজ উদ্ভিদ,বনজগাছ,ঔষধী গাছ,ফলজ গাছ
ইত্যাদি।একেবারে উদ্ভিদের দিকে তাকাই (যা মাটি ভেদ করে ওঠে তাকে উদ্ভিদ বলে)।দুর্বা দুর্বাকে ঘাসও বলা হয়,কিন্তু একে ভু-ত্বকের সাথে
পিষিয়ে মাড়ালেও আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।ভারী জিনিসের চাপা দিলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
থেকেও বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।বড় কোনো কাজে
বিশেষ ভুমিকা রাখে নতুন রাস্তার পাশে,বাধেঁর
পাশে লাগিয়ে ভুমিক্ষয় রোধ করে।এবার আসি – লতা,পাতা,গুল্ম,এদের কথা বা ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি
পাতা ,বাসকপাতা,তুলসী পাতা,স্বর্ণলতা,মেথি,আমগ্রুজ, জামগ্রুজ, আকন্দপাতা,ভেন্না পাতা,হরেক
রকম ভেষজ উদ্ভিদ।যার প্রত্যেক মুল্য ধন রত্নের চেয়েও ঢের বেশী।এতও উপকারী যে কেউ এদের
খাতির যত্নও সেভাবে করেনা।ঐ কাজের বেলা কাজী,কাজ ফু্রালে পাঁজির মতো।
পরের কথায় আসি –
ফলজ,বনজ,বৃক্ষের দিকে তাকালে দেখা যায় বট
গাছের ছায়ায় শ্রান্ত,ক্লান্ত দেহ স্বল্প সময়েই ঘুমিয়ে যায়। ইউকেলিপটাস, লিফটি,কড়ই,
ইত্যাদির নিচে-অসম্ভব? ছায়ায় যাওয়াও পাপ। এদিকে অর্জুন সেতো পরোপকারী যার জন্য তার
বেহাল দশা;ছাল থাকেনা। কিন্তু কই হার্টের রোগী জড়িয়ে ধরলেও আলিঙ্গনে নিষেধ করেনা।ফাগুনে
বা গ্রীষ্মে কৃষ্ণ চূড়া কারনা চোখে পড়ে? সেতো ‘ঋতুরাজ’ বসন্তকে ‘ঋতুরাজ’ হিসাবে জানান
দেয়।-আর আম,জাম,কাঠাল,লিচু,কৎবেল,কলা, নারকেল ইত্যাদির কথা না-ই বা বললাম। কিন্তু এরা
কাদের জন্য? কিসের জন্য ? সব মানুষ নামের জন্তুদের জন্য। সৃষ্টির সেরা প্রানীর জন্য।
তাহলে কি দাঁড়াল- গাছ-পালা,তরু-লতা,গাছ-গাছড়া সবার যদি এত মূল্য হয় তাহলে এদের এই দশা
কেন?হ্যাঁ, মানুষ তাদের মূল্য না দিলেও তারা তাদের মূল্য দেয়। গাছ মানুষের কাছে যায়
না ঠিকই; কিন্তু মানুষ গাছের কাছে যায়। গাছ-গাছড়া জায়গাতে থেকে মানুষ বা প্রানীকূল
বাচিঁয়ে রাখতে নিরন্তর চেষ্টা করছে। আর মানুষ! নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করছে। ঘর,সমাজ,দেশ,পৃথিবী
ধ্বংসের মূলে কারা? মূল্যবোধ জাগ্রত করুন,বিচার করুন আপনি কি ঐ আনাচে- কানাচের গাছ-গাছড়া?
না অর্জুন,আম,কাঠাল,লিচু,মেহগনি,আমলকি,বহেড়া,না কৃষ্ণ চূড়া?না কোন্টি-ই না। বড়াই করছেন
তো! পরিবারের প্রধান,প্রতিষ্ঠানের প্রধান, কলকারখানার প্রধান হয়ে তাইনা? আপনার পরিবারের
পাঁচ সদস্যের ছয়জন অন্য পথে,ভিন্ন পথে তাহলে আপনার অবস্থান কোথায়?ভাবুন তো? কি লাভ
আপনার প্রধান হয়ে? যদি অধিনস্তরা পাত্তাই না দেয় আপনাকে।হ্যাঁ,সক্কলে দেবে না এটাও
ঠিক;কিন্তু ৯৮% দেবেতো? দেবে কেন? আপনিতো কর্তা। কথায় আছে “কর্তার পাদে(বায়ুকম্প) গন্ধ
নেই”। তাছাড়া-কর্তারা মনে করেন অধীনস্থ বা সাধারণ মানুষ কোন মানুষ-ই না। প্রেমিক কবি
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর লেখনীতে কুলি-মজুর,উপেক্ষিত
শক্তির উদ্বোধন,সাম্য,মানুষ কবিতায় সাধারনদের জয়গান করেছেন।আর মানুষ- আপনি যদি মানুষ
হতেন,গাছের মত! তাহলে আপনার পরিবারে আত্মহত্যা, প্রতিষ্ঠানে দলীয় করণ,রানাপ্লাজা,রুপগঞ্জের
মতো প্রান হানি হতো না। আপনার মূল্য কত? কোথায়? মূল্যবোধ জাগ্রত করুন।দেখবেন গাছের
মতো আপনার ছায়ায় কত মানুষ সুশীতল হচ্ছে, জীবিকা নির্বাহ করছে আর আপনার গুনকীর্তনে দীর্ঘায়ু
কামনা করছে। “কর্তার ইচ্ছায় কর্ম” কথাটির তাৎপর্য বহুদূর। মানুষ, আপনি মনে করবেন না
যে, কথাটি দ্বারা স্বেচ্ছা-চারিতা বোঝায়। যাক বেশি কথা না-ই বাড়ালাম- মানুষ যদি গাছের
মতো হতে হয় বা হওয়া যায় তাহলে পরিবার,সমাজ,দেশ,গোটা দুনিয়াটা একটা ঘরে পরিনত হবে, আমরা
হব ঐ ঘরের একজন সদস্য। আসুন যে যে অবস্থানে
আছি বসের মতো (ইউকেলিপটাশ গাছ) না হয়ে লতা-পাতা,গাছ-গাছড়া ইত্যাদির মতো হয়ে বাড়ির
-সমাজের আনাচে-কানাচে যারা রয়েছে তাদের নিয়ে নতুন পৃথিবী গড়ে তুলি।
সারকথা/মূলপ্রতিপাদ্য- “মূল্যবোধ জাগ্রত করি গাছের মতো জীবন
গড়ি”।
ধন্যবাদান্তে-
মো.খলিলুর রহমান
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি)
বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়
লাল্মাই,কুমিল্লা
মোবাইল-০১৭১০৩৪০২২৬