Loading..

খবর-দার

০২ অক্টোবর, ২০২১ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববিদ্যালয় অচল, চুল কাটা নিয়ে কী হয়েছিল
img
MD.AMINUL ISLAM

সহকারী শিক্ষক

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ জন ছাত্রের চুল কেটে দেয়ার ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

ইতোমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়ামিন বাতেন তার তিনটি প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

চুল এত বড় কেন?
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর তারও চুল কেটে দেয়া হয়।

তিনি বলেছেন, গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। তাতে দুটি পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি না থাকায়, শিক্ষার্থীরা বিভাগে এর প্রতিবাদ করে।

আনুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি স্মারকলিপি লিখেও শেষে চেয়ারম্যানের ভয়ে সেটি জমা দেয়নি শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষার হলে ঢোকার মুখে চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বলছিলেন, কারা আন্দোলন করতে চেয়েছে তিনি জানেন।

তারা জানায়, এরপর হঠাৎ কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি একজনের চুলের মুঠি ধরে জিজ্ঞেস করেন চুল এত বড় কেন? এরপর চুল হাতের মুঠোয় ধরা যায় যাদের এরকম ১৪ জনকে আলাদা করে পরীক্ষার হলের বাইরে দাঁড় করানো হয়। এর মধ্যে বিভাগের একজন কর্মচারীকে কাঁচি নিয়ে আসতে বলা হয়।

ওই ছাত্র বলেন, ‘আমাদের যাদের দাঁড় করানো হইছিল, সবার চুল মুঠিতে ধরে কেটে দেন ম্যাডাম। কারো এক মুঠি, কারো আরো বেশি। তার মাথায় তিন জায়গায় এবড়োথেবড়ো করে চুল কেটে দেয়া হয়েছে।

এ সময় কথা বলতে বলতে ওই শিক্ষার্থী কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে শুনছি অনৈতিক কাজ করলে চুল এইভাবে কেটে দেয়। আমি সবাইকে কি বলবো, বলতে পারেন?’

তিনি জানিয়েছেন, এরপরও শিক্ষার্থীরা পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা দিতে যায়। কিন্তু কয়েকজন পরীক্ষা দিতে চাইছিল না, আমরা বিভাগের নিচে বসেছিলাম। কিন্তু উনি (চেয়ারম্যান) এসে খুব বকাবকি শুরু করেন, কেন পরীক্ষা বাদ দিয়ে নিচে বসে আছি সেজন্য। এই বকা পরীক্ষার হলেও চলতে থাকে।

এবড়োথেবড়ো করে কাটা চুল অনেকে এরপর নাপিতের কাছে কামিয়ে ফেলেন, এবং তার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিষয়টি এরপর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তারপরই মূলত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন এর আগেও শিক্ষার্থীদের ধমকাধমকি, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

তদন্ত কমিটি কী বলছে?
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ২৮ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং ওইদিন থেকেই পাঁচ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে।

কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা ফেরদৌস বলেছেন, ‘ঘটনার পর যখন ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে তখন ওই (অভিযুক্ত) শিক্ষকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, সেখানে তিনি ঘটনা স্বীকার করেছিলেন এবং দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন তো তিনি সরাসরি অস্বীকার করছেন সব অভিযোগ।’

অধ্যাপক ফেরদৌস বলেছেন, তদন্ত কমিটি, চুল কেটে দেয়া শিক্ষার্থী, ঘটনার সময় পরীক্ষার হলে উপস্থিত ওই বিভাগের অপর দু’জন শিক্ষক এবং কর্মচারীদের সাথে কথা বলেছে।

তিনি বলেন, ‘এখন আমরা সিসিটিভি ফুটেজের জন্য অপেক্ষা করছি। যাতে সত্যিকারের ঘটনার প্রমাণ জানতে পারবো আমরা এবং তখন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: আব্দুল লতিফ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারের মধ্যে যা ছিল তা করা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, এখন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা ঠিক করা হবে।