Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

Blended Learning ( ব্লেন্ডেড লানিং )

·         ব্লেন্ডেড একটি ইংরেজি শব্দ  কথাটার বাংলা অর্থ হল মিশ্রণ। বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের মহামারীতে দাঁড়িয়ে যখন চারিদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে , তখন ব্লেন্ডেড লার্নিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তা বলাই বাহুল্য। চলুন আমরা জানি ব্লেন্ডেড লার্নিং কী?

           ব্লেন্ডেড লার্নিং লো  অফলাইন এবং অনলাইন শিক্ষার মিশ্রণ।

 

·         শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার পুরো পৃথিবীতে তুমুল জনপ্রিয়  তাইফেস টু ফেস লার্নিংএবংঅনলাইন টিচিংএর সমন্বয়ে ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেল অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়েছে বেশিরভাগের কাছে আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গুগলমিট, জুম, ফেসবুক ব্যবহার করেও পাঠদান করা হয়। এছাড়াও গুগল কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন জিনিস শিখে থাকি এটাও শিক্ষার এক ধরণের অনলাইন পদ্ধতি।

 

·         কোনো শিক্ষক যখন তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসে গুগল করে বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে, বা ইউটিউবে ক্লাস লেকচারের সাথে রিলেভেন্ট কিছু ভিডিও দেখিয়ে ড়ান তখন সেটা বেশি কার্যকরী হয়। ব্লেন্ডেড লার্নিং মূলত ট্র্যাডিশনাল টিচিং অর্থাৎ ফেস টু ফেস টিচিং মেথডের সাথে -লার্নিং অর্থাৎ অনলাইন টিচিং -এর সমন্বয়ে একটি হাইব্রিড টিচিং মেথড   

·         ব্লেন্ডেড লার্নিং বাংলাদেশের জন্য এখন আর শুধু বিকল্প নয় বরং একটি প্রয়োজনীয়তা। গত দেড় বছরে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, বুঝেছি। এখন আমাদের ডিজিটাল দক্ষতা, শিক্ষাগত উদ্ভাবন, মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ, বিভিন্ন ধরণের ইন্টারেকশন, এনগেজমেন্ট, মূল্যায়ন কৌশল, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, সহায়তা কাঠামো, ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহিতা ইত্যাদির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক নীতি এবং চর্চায় সেগুলো যোগ করতে হবে। 

১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে এক যোগে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখতে সরকার নানা রকমের উদ্যোগ গ্রহন করে সেই উদ্যোগের সঠিক বাস্থবায়নের জন্য আইসিটিতে দক্ষ শিক্ষকগণ এগিয়ে আসে কারণ তাঁরা বুঝতে পারে যে এই মুহুর্তে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প আর কোন কিছুই নেই যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি ছিল একেবারেই নতুন বিষয় তবুও আইসিটি এক্সপার্ট শিক্ষক অনলাইনে পাঠদান করার জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স , ইউটিউব ভিডিও, গুগলের সহায়তা এবং নিজে নিজে বিভিন্নভাবে রিসার্স করে নিজেদের জ্ঞানের ঝুলিকে আরো সমৃদ্ধ করে আবিষ্কার হয় জুম, ফেসবুক গুগলমিটের মত আরো অনেক ভার্চুয়াল ফ্লাটফর্ম যার মাধ্যমে রেকর্ড ক্লাশ, লাইভ ক্লাশ শুরু হয় পরর্তীতে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যুক্ত করে জুম এবং গুগল মিটের মাধ্যমে পাঠদান শুরু হয় যা ব্যপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে 

কিছুদিন এভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলার পর আইসিটি অগ্রগামী শিক্ষকগণ নিজেদের প্রযুক্তিগত স্কিলকে অন্যদের মধ্য বিলিয়ে দিতে শুরু করে যাতে করে অধিক সংখ্যক শিক্ষকের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে পাঠ ঘাটতি অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হয় সেই সাথে শুরু হয়ে কিভাবে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সেই সকল অনলাইন ক্লাশে যুক্ত করা যায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে  শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠকার্যক্রমের যে অভিজ্ঞতা পেয়েছে তাতে করে নিঃসন্দেহে -লার্নিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে

কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে কীভাবে শিক্ষকরা তাদের  শিক্ষা কৌশলকে ব্লেন্ডেড শিক্ষায় রুপান্তর করেছেন তা হলো-

অনলাইনঃ

§  গুগলমিট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যুক্ত করে অনলাইনে পাঠদান;

§  এটুআই এর তত্বাবধানে কিশোর বাতায়ন  ঘরে বসে শিখি পেজের মাধ্যমে পাঠদান;

§  জুম (zoom) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যুক্ত করে অনলাইনে পাঠদান;

§  এলাকা ভিত্তিক/ কিংবা স্কুল ভিত্তিক আলাদা আলাদা ফেসবুক গ্রুপ পেইজ ব্যবহার করে ফেইসবুকের মাধ্যমে লাইভ রেকর্ড ক্লাশ প্রচার;

§  Accelerated Remedial Lesson Plan (অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা) অনুসরণ করে অনলাইন পাঠদান।

অফলাইনঃ

§  ওয়ার্কশীট/এসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অগ্রগতি যাচাই ;

§  মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের সাপোর্ট;

§  সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার;

§  বাংলাদেশ বেতারে পাঠ সম্প্রচার;

 প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে সব স্কুল কলে খুলে দেওয়া হয় এবং শুরু হয় সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সরকার যথাযত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী  বর্তমানে পাঠকার্যক্রম চলমান রেখেছেন সরাসরি পাঠদান চালু হওয়ার পরও সরকার -লার্লিং এর মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রমকে অব্যহত রেখেছেন কারন এই ১৮ মাসে আমরা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছি যে স্কুল খোলা হলেও -লার্ণিং এর প্রয়োজনীতায়  কোন অংশে ভাঁটা পড়বে না শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন নয় শুধুমাত্র সপ্তাহের নির্দিষ্ট  কয়টা দিনে সরাসরি পাঠে অংশ নেয় এবং বাকি দিনগুলোতে চলে অনলাইন ফ্লাটফর্ম ব্যবহার করে পাঠদান এতে করে সময় এবং স্বাস্থবিধি মানা দুটোতেই শিক্ষার্থীরা উপকৃত  হয়  

কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার পর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে কীভাবে শিক্ষকরা তাদের  শিক্ষা কৌশলকে ব্লেন্ডেড শিক্ষায় রুপান্তর করেছেন তা হলো

·         বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর আবির্ভাবের কারণে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লেন্ডেড এবং অনলাইন শিক্ষায় যে উন্নতি করেছি তা অবিশ্বাস্য, যেটা অন্যথায় -১০ বছর সময় নিতে পারতো। অবশ্যই এটি একটি ইতিবাচক দিক। এখন আমাদের কাজ হল নীতিগুলি অনুশীলনে আনা এবং বৈশ্বিক শিক্ষাব্যাবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয়ভাবে সেই অনুশীলনগুলিকে শক্তিশালী করা যাতে ভবিষ্যতে কোনো দুর্যোগকালীন সময়ে আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু বন্ধ করে বসে থাকতে না হয়।