Loading..

নেতৃত্বের গল্প

০৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৭:০২ অপরাহ্ণ

সফলতার গল্প

আসসালামুআলাইকুম ও আদাব । আমি মোসাঃ ইয়াসমীন আখতার বানু , প্রধান শিক্ষক ,মধ্য আলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ । আজ আমি আমার সুদীর্ঘ বাইশ বছরের শিক্ষকতা জীবনের নানা অভিজ্ঞতার সুতোয় গাঁথা সফলতার গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি । ২০১৮ সালে বর্তমান বিদ্যালয়টিতে যোগদান করে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমার কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ।

                        জরাজীর্ণ , পিছিয়ে পড়া ও নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টিতে না ছিল অবকাঠামোগত উন্নয়ন , না ছিল ভাল রেজাল্ট , না ছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড । কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়া, প্রাণহীন অবস্থা বিরাজ করছিল । অনেকটা মন্থর গতিতে চলছিল বিদ্যালয়ের কার্যক্রম । বর্তমানে তিন কক্ষ বিশিষ্ট জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টিকে মেরামত করে লাল - সবুজের সাজে সজ্জিত করি । প্রাক প্রাথমিক শ্রেনিকক্ষ চমৎকার ভাবে সজ্জিত করি ।  অবশেষে দেশ দরদী , শিশুবান্ধব , জননেত্রি মাননীয় প্রধান মন্ত্রির কল্যাণে আমার বিদ্যালয়ে চারতলা ফাউন্ডেশনের দুই তলা ভবন স্থাপিত হয় ।কৃতজ্ঞতা দেশনেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রির প্রতি , যিনি আমার বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছেন । বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রত্যেকটি জাতীয়দিবস আমরা যথাযোগ্য মর্জদায় উৎযাপন করি । শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, নেতৃত্বগুন , সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটানো ইত্যাদির জন্য আমি তাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিই । আমি আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি , চিত্রাঙ্কন , অভিনয় ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের আন্তরিকতার সাথে শেখায় । ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে বিদ্যালয়, উপজেলা , জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও পুরুস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে । শিক্ষার্থীদের পুরুস্কার প্রাপ্তির পর তাদের চোখে - মুখে যে আনন্দের দিপ্তিরাশি ফুটে ওঠে সেটিই আমার একটি বড় পুরুস্কার হিসেবে ধরে নিই । আমি আমার সহকর্মীদেরও একই ভাবে অনুপ্রাণিত করি এবং তাঁরাও একই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুস্কার লাভ করছে । শিক্ষার্থীদের আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য , উৎসব ইত্যাদি সম্পর্কে ধারনা দিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করি । তারা নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব ,পহেলা বৈশাখ, ক্লাস পার্টি ইত্যাদি আয়োজনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং নানা আনন্দ আয়োজনে মেতে ওঠে । তারা বাহারি সাজে সজ্জিত হয় এবং দেখে মনে হয় বাংলার সব আনন্দ এখন আমার বিদ্যালয়ের ঘরে । তাদের হাসি খুশি মুখগুলো দেখে প্রান জুড়ায় । মনে হয় যেন তাদের চোখগুলোয় লুকিয়ে আছে হাজারো স্বপ্ন । খেলাধুলায় ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পুরুস্কার পায় । বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার আপ ট্রফি অর্জন করে । আমি এইভাবে উৎসব , আনন্দ , আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সুকুমারবৃত্তি গুলোর উন্মেষ ঘটিয়ে তাদের চিত্ত কে প্রসারিত করি এবং  ধীরে ধীরে আনন্দের মাধ্যমে শিখন কে নিশ্চিত করে তাদের বিদ্যালয়মুখী করে লেখাপরায় আকৃষ্ট করি এবং ফলাফল হিসেবে সমাপনি পরিক্ষা-২০১৯ এ শতভাগ শিক্ষার্থী পাস , ৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ এবং ১ জন শিক্ষার্থী উপজেলায় ৩য় স্থান অধিকার করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে ।

এইভাবে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমারও কিছু স্বপ্ন পূরণ করেন । জাতীয় শিক্ষা পদক- ২০১৯ এ আমি জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হই । করোনাকালীন বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম ও  শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবপোর্টাল  শিক্ষক বাতায়নে নিরলস ভাবে কাজ করার জন্য ২০২১ এ এটুআই কত্তৃক জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হই । শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০২১ এ উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হই । অনলাইন প্লাটফর্মে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনেক পুরুস্কার প্রাপ্তি ঘটে । এমনি  করেই আমার ছোট্ট ছোট্ট প্রাপ্তি গুলোকে সারথি করে প্রাথমিক শিক্ষার অতন্দ্র প্রহরি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি । আমি আপনাদের দোয়া ও শুভকামনায় আরও কাজ করে যেতে চাই । ধন্যবাদ ।