সহকারী অধ্যাপক
০২ মার্চ, ২০২২ ০৮:৫৬ অপরাহ্ণ
জিরার ১০টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ জানুন
জিরার উপকারিতাগুলো
লিভার Liver ভালো রাখে জিরা
আমাদের লিভার ভালো রাখতে হলে লিভারের ভেতর হতে ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থ বের করে দিতে হবে। কেউ যদি নিয়মিত জিরা পানিতে ভিজিয়ে জিরার পানি খেয়ে থাকে, তাহলে জিরার পানি শরীরে ডায়াজেস্টিভ এনজাইমের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে লিভারের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যার ফলে লিভার তার কার্যক্ষমতা পুনরায় ফিরে পায় এবং লিভার ভালো থাকে।
জিরা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে
আমাদের শরীরে যখন ইলোকট্রোলাইট এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকে তখন কিন্তু আমাদের ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ভোর বেরা একগ্লাস করে জিরা পানি নিয়মিত খান, তাহলে শরীরের ইলোকট্রোলাইট এবং পটাশিয়ামের মাত্রা বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলে এমনিতেই ব্লাড প্রেসার লো হতে বা কমতে শুরু করবে। সুতরাং ব্লাড প্রেসার কমাতে প্রতিদিন সকালে একগ্লাস জিরা পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
জিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
জিরাতে রয়েছে যতসামান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে আয়রণ। জিরা খাওয়ার পর আমাদের শরীরে আয়রণের ঘাটতি পূরণ হয়। আয়রণ শরীরের প্রবেশের পর আমাদের রক্তে লোহিত কণিকা বৃদ্ধি করে। ফলাফলসরূপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জিরা খাওয়ার পর পূর্বের চেয়ে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে অন্য যেকোনো রোগ-বালাইকে সহজেই গ্রাস করে ফেলতে পারে।
শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে জিরা বেশ উপকারক একটি মশলা এবং প্রাকৃতিক উপাদান। জিরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে এনার্জি বৃদ্ধি পায়। এতে করে আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা অলসতা এবং ক্লান্তি ভাব খুব সহজেই দূর হয়।
হজম শক্তি বাড়াতে জিরা
আমাদের অনেকেরই বদ-হজম জাতীয় রোগটা আছে। তাদের শরীরের দূষিত গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে বদ হজমের সৃষ্টি হয়। আপনার যদি এই জাতীয় সমস্যা থাকে তাহলে আজ থেকেই জিরা খাওয়া শুরু করুণ। কীভাবে খাবেন? প্রতিদিন সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে পরিমত জিরা ভিজিয়ে রাখুন এবং সকাল বেলা সেই জিরা পানি খেয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত পান করুন। এতে করে আপনার বদ-হজম দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
জিরা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
জিরাতে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলোনিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ। প্রতিদিন যখন আমরা খাবারের সাথে জিরা পানি পান করি, তখন উক্ত উপাদানগুলো আমাদের ত্বকের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর টক্সিনগুলো বের করে দেয়। টক্সিন জাতীয় পদার্থগুলো বের হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকের মধ্যে টান টান ভাব চলে আসে এবং পূর্বের চেয়ে ত্বকের সৌন্দর্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে জিরা খুবই উপকারি।
ওজন নিয়ন্ত্রণে জিরা
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে জিরা বেশ উপকারি একটি মশলা এবং প্রাকৃতিক ঔষধ। জিরা থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার আমাদের দেহে প্রবেশের পর শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দেয়। এতে করে খাদ্য খুব দ্রুত হজম হতে শুরু করে। পাকস্থলিতে হজম ঠিক মতো হলে স্বাস্থ্য বাড়ার কোনো রকম আশঙ্কা থাকে না স্বাভাবিকভাবে। এছাড়াও ফাইবার খাবারকে পেটে অনেকক্ষণ ধরে রাখে। ফলে বার বার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে না। এতে করে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হয় না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে জিরার
জিরাতে থাকা ফাইবার খাদ্য হজমে বেশ উপকারক একটি পদার্থ। মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য হয় হজমে সমস্যা থাকার কারণে। কিন্তু জিরা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা শরীরের ফাইবারের ঘাটতি দূর করতে পারি। এবং ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় জিরা রাখতে হবে।
চুলকে সুন্দর করে
দূষিত পরিবেশে কিংবা অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আমাদের চুলের অবস্থা খুবই বাজে রকম একটা অবস্থা হয়। এমতোবস্থায় চুল রক্ষার্থে আমরা নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু আশানুরূপ কোনো রকম ফলাফল পাই না। তবে আমরা জিরা থেকে এই উপকারটি পেতে পারি। প্রথমে জিরাকে স্বভাবে পাউডার করে নিতে হবে। এরপর ১চা চামচ জিরার পাউডারের সাথে একটি ডিম মিক্স করতে হবে। এবার মিশ্রণটিকে ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ১-২বার করুণ। এবার চুলগুলো ধুয়ে ফেলুন। এবং এখন দেখুন চুল গুলো পূর্বের চেয়ে অনেক স্মার্ট এবং সিল্কি ভাবে চলে আসছে। এভাবে চুলের কাটকে ফটিয়ে তোলা যায়।
জিরা অনিদ্রা দূর করে
মেলাটনিন নামক হরমোনের কারণে আমাদের মধ্যে ঘুমের অনুভূতি হয়। যখনই আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটনিন ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা চলে আসে বা বান্ধকতা হয়, তখন আমাদের প্রতিদিনের ঘুমে বিঘ্নতা ঘটে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদের রাতের বেলা ঠিক মতো ঘুম আসে না। তাদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পরামর্শ হলো প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা পূর্বে একটি কলার সাথে জিরার পাউডার মিক্স করে খেয়ে ফেলুন। এতে করে এগুলো মস্তিষ্কে মেলাটনিন ক্ষরণ করতে সহায়তা করে। ফলে কয়েক ঘন্টা বা মিনিটের মধ্যে ঘুম চলে আসে। তাই যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রা জনিত রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য সলিউশন হচ্ছে জিরার সাথে কলা মিক্স করে খাওয়া।
গোটা জিরা খাওয়ার উপকারিতা
অন্য সব জিরার মতো গোটা জিরারও রয়েছে বেশ অনেকগুলো উপকারিতা। বাংলাদেশে যদিও গোটা জিরা পাওয়া যায়, তবে অনেকেই এর সাথে অপরিচিত। কিন্তু উপকারিতার দিক দিয়ে এটি অনেক এগিয়ে অন্য সব জিরার চেয়ে। গোটা জিরার খাওয়ার কিছু উপকারিতা হলো-
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য গোটা জিরা খুবই উপকারি
- চুলকে সুন্দর রাখে
- হজমে সহায়তা করেজিরার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
জিরার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
অপকারিতা হিসেবে জিরার খুব কম কিছুই আছে। আমরা জানি সব কিছুরই আলাদা আলাদা অপকারিতা রয়েছে। তেমনি কেউ যদি অতিরিক্ত জিরা খেয়ে থাকে তার ক্ষেত্রেও কিছু ক্ষতিকর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে জিরার কিছু অপকারিতা হলো-
অতিরিক্ত জিরা খেলে পাতলা-পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
বেশি জিরা খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেহে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে
উপরোক্ত যথসামান্য কিছু ক্ষতিকারক দিক ছাড়া এমনিতে জিরার কোনো অপকারিতা নেই।
সূত্র: https://banglatip.com/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE/