Loading..

ম্যাগাজিন

০৪ এপ্রিল, ২০২২ ০১:৪৬ অপরাহ্ণ

ঘুরে এলাম ময়মনসিংহ জেলার ঐতিহাসিক মুক্তাগাছা রাজবাড়ি।


১৬৪ তম কাব স্কউট ইউনিট লিডার স্কিল কোর্সের ৪০ জন প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে চালু হল ২৮ মার্চ ২০২২ ইং। স্থান, আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষন কেন্দ্র, মুক্তাগাছা,  ময়মনসিংহ। তৃতীয় দিনে ছিল আমার পছন্দের একটা ইভেন্ট অভিযান। আমার কাছে অভিযান খুব ভাল লাএকককিিগে।শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রোগ্রামটি করতে  ভল লাগে,তারা খুব উপভোগ করে।আজ সব এডাল্ট লিডাররা অভিযানে বের হব তাই বারবার ভাবছিলাম কোথায় নিয়ে যাবে। বারবার ভাবছিলাম মুক্তাগাছার বিখ্যাত রাজবাড়ী নিয়ে গেলে ভাল হত।অনেকে বল্ল, না অত দূরে নিবেনা।যাই হোক তিনটা বাজতেই অভিযানে বের হলাম তখনো পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়েনি।যতই হাটছি ততই মনে হচ্ছে রাজবাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।এখানে আসার আগে নেট দুনিয়া ঘেটে মুক্তাগাছা নামের ইতিহাস ও রাজবাড়ির লোকেশন সহ খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনে দেখার আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল। অনেকদিন ভেবেছিলাম মুক্তাগাছা রাজবাড়ী যাব কিন্তু সময় হচ্ছিলনা। স্কাউটিং আমার সে ইচ্ছটা পূরন করে দিল। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির কথা কে না জানে।তবে মুক্তাগাছা নামের ইতিহাস হয়তো অনেকের অজানা। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ শেষে মুক্তাগাছার জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ৪ সন্তান নিয়ে বগুড়া থেকে নৌকাযোগে আলাপসিং পরগনার বিনোদবাড়ির আয়মন নদীর রাজঘাটে আসেন।তখন রেওয়াজ মতে রাজা বাদশারা এলাকায় আসলে প্রজারা তাদের সাধ্য মত নজরানা দিতেন। মুক্তা নামে একজন গরীব কর্মকার জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীকে নিজ হাতে তৈরী পিতলের একটা গাছা নজরানা হিসেবে উপহার দেন। গাছা হচ্ছে দীপাধার বা প্রদীপ।
জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীকে সব নজরানা থেকে পিতলের গাছাই বেশী আকর্ষণ করেছিল। তাই জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য কর্মকার মুক্তা এবং গাছা একত্র করে বিনোদবাড়ি এলাকার নাম পরিবর্তন করে “মুক্তাগাছা” রাখেন।
সেখান থেকেই আজ অবধি বিনোদবাড়ি মুক্তাগাছা নামে সর্বত্র পরিচিত।
সেই শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর রাজবাড়ি আজ জীর্ণশীর্ণকায় হয়ে মুক্তাগাছা রাজবাড়ি নামে সাক্ষ্য বহন করছে।
মুক্তাগাছার রাজবাড়ী(Muktagachara Rajbari) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ী। ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছার রাজবাড়ির অবস্থান। মুক্তাগাছার তদানীন্তন জমিদার বৃটিশ রাজন্য কর্তৃক প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন বিধায় জমিদারের বাসভবন রাজবাড়ী হিসেবে আখ্যায়িত হতো।
জমিদার আচার্য চৌধুরী বংশ শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন।
মুক্তাগাছার জমিদারির মোট অংশ ১৬টি। অর্থাৎ ১৬জন জমিদার এখানে শাসন করতেন।
বাড়ির বেশ মুখে রয়েছে বিশাল ফটক। ফটক পেরিয়ে ভেতরে গেলে জীর্ন প্রায় বাড়িটির পরতে পরতে সৌন্দর্যে চোখে জুড়িয়ে যাবে।
প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপনা শৈলীর অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীন।
বাড়িরটি ভেতরে গেলে দেখা পাবেন একতলা একটি ভবনের। লোহার পাত আর কাঠের পাটাতন দিয়ে করা ছাদ- চমৎকার। তাছাড়া লোহার পাতের নানা রকম নকশা এ বাড়ির চারপাশে দৃষ্টি এড়াবেনা। এখানে রয়েছে একটি রঙ্গমঞ্চ।
দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরটির দেখা পাবেন রাজবাড়ি প্রবেশ মুখেই। রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের নির্মিত অসাধারণ এক দুইতলা রাজপ্রাসাদ, রানীর অন্দরমহল।
এখানকার লম্বা লম্বা করিডোরেও আছে ভীষণ মুগ্ধতা। তাছাড়া আরও আছে লাইব্রেরি, দরবার হল, কাচারিঘর, লক্ষীপূজা আর দূর্গাপূজার ঘর।
রাজবাড়ির পেছনে রয়েছে একটি গোপন সূরঙ্গ। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই আরও দুটি রাজবাড়ি আছে। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ- এর মধ্যে একটি, অন্য বাড়িটি ছিল সে সময়কার হাতিশালা। বর্তমানে যা আমর্ড ব্যাটেলিয়ান পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অভিযানের কার্যক্রম শেষে ঘুরে ঘুরে মিলিয়ে নিলাম বর্ণনার সাথে মিল অমিলগুলো।আর আমার গ্রুপের সকলের সাথে ছবি তুলতে ভূল করিনি বিভিন্ন স্পটে।সবমিলিয়ে দারুন সময় কাটল।আপনিও সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক স্থাপনাটি।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি