সহকারী শিক্ষক
২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১২:০১ অপরাহ্ণ
কি ঘটেছিল সেদিন রানা প্লাজায় ?
রানা প্লাজা ধস
তারিখ | ২৪ এপ্রিল ২০১৩ |
---|---|
সময় | ৮:৪৫ বাংলাদেশ সময়[১] |
অবস্থান | সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৫০′৪৬″ উত্তর ৯০°১৫′২৭″ পূর্ব |
মৃত | ১,১২৯ জন[২][৩] |
আহত | ২,৫০০ জনেরও বেশি [৪][৫] |
নিখোঁজ | ৯৯৬ |
সন্দেহভাজন |
২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল ৮:৪৫ এ সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে।[৮] ভবনের কয়েকটি তলা নিচে দেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এ দূর্ঘটনায় এক হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।[৩][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪] সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে।[৬][১০][১৫] ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।[১১] এর মাত্র পাঁচ মাস আগে ঢাকা পোশাক কারখানায় একটি বড় অগ্নিকান্ডের পর এই দুর্ঘটনাটি হয়, যেটি বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা।[১৬]
এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।[১৭][১৮][১৯]
প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]
ভবনটি রানা প্লাজা হিসেবে পরিচিত এবং এর মালিক সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।[৬] সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি। এতে ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা। দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল প্রথম তলায়।[২০]
গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ৫০০০ এর মত কর্মী কাজ করত। ২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। [২১]বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান, আলী আহমেদ খান, জানান যে ভবনের উপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল।[২২]
ধস[সম্পাদনা]
২৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে সত্ত্বেও, অনেক গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরের দিন কাজে ফিরতে বলা হয়, তাদের সুপারভাইজার ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষণা করে।[২০] ফাটল সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল।[২৩] ৯তলা ভবনটি সকাল ৯:০০ টার দিকে প্রথম তলা বাদে বাকি সবগুলি তলা ধসে পড়ে।[১০] ধসে পড়ার সময় ভবনটিকে প্রায় ৩০০০ কর্মী ছিল।[১১] প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং কাঁপনে তারা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেন। পরে বেরিয়ে দেখেন বিরাট এলাকা ধুলা বলিতে ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে।"[২৪]
ঐ সময় ভবনে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল নারী যাদের সাথের তাদের শিশু সন্তানও সেখানে নার্সারী সুবিধায় ছিল।[২৫]
প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেন। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়। [২৬]
এঘটনার পর উত্তেজিত পোশাক শ্রমিকরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবীতে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যপক আন্দোলন গাড়ি ও বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর চালায়।[২৭]
বিএনপি ও বামপন্থি দলগুলো এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবীতে ২রা মে সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে কিন্তু পরবর্তিতে হরতাল বাতিল ঘোষণা করে।[২৮]
তদন্ত ও গ্রেপ্তার[সম্পাদনা]
২৫ শে এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন ও ঐ ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারীভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আহ্বান করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় দায়ীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।[২৯] ২৭শে এপ্রিল এই ভবনের দুটি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দুজন প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়।[৩০] ২৮শে এপ্রিল এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব গ্রেপ্তার করে।