Loading..

খবর-দার

১৫ জুন, ২০২২ ০২:৪৯ অপরাহ্ণ

উদ্বোধন ঘিরে বিশেষ সতর্কতা সারাদেশে

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্য কিংবা গুজব যাতে কেউ ছড়াতে না পারে, সে জন্য সাইবার প্যাট্রোলিং পুরোপুরি সজাগ। প্রস্তুত ডগ স্কোয়াড; তৈরি হয়ে আছে পুলিশের বিশেষ অস্ত্র এবং কৌশল ইউনিট-সোয়াট। পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ হাজার সদস্য থাকবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায়। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কড়া নজর। পুরো আয়োজন পরিপাটি করতে কে কী দায়িত্ব পালন করবে তার তদারক করছে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি দল। ২৫ জুন পদ্মা সেতুর আশপাশ এলাকা ও রাজধানীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা হয়েছে আলাদা ছক। এই পটভূমিতে সেতু উদ্বোধন নির্বিঘ্ন করতে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই সারাদেশে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) হায়দার আলী খান বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে আগেও নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল। শুরু থেকে অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজেদের অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধন ঘিরে মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরাও উচ্ছ্বসিত। এ ধরনের একটি মহা আয়োজন সুন্দরভাবে শেষ করতে দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। সেতুর উদ্বোধনস্থল ছাড়াও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে গেছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। গতকাল পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো হয় এ নির্দেশনা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপর এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর পাড়ে প্রথমে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী প্রথম টোল দিয়ে সেতু পার হবেন। সেতুর দক্ষিণ পাড়ে মাদারীপুরে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। উদ্বোধন ঘিরে লঞ্চ ও নৌকায় বিপুল সংখ্যক লোকের জমায়েত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, জনসভাস্থলে অন্তত ১০ লাখ লোক উপস্থিত থাকবে। জমকালো উদ্বোধন ঘিরে এরই মধ্যে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) থাকবে বিশেষ নিরাপত্তায়। এ ছাড়া থাকবে পুলিশের বোমা নিষ্ফ্ক্রিয়করণ দল, সোয়াট, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), নৌ পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া মোতায়েন করা হবে র‌্যাব সদস্যদের। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা পুলিশকে সহযোগিতার জন্য দেশের অন্যান্য ইউনিট থেকে সেখানে রাখা হবে বাড়তি ফোর্স।

নিরাপত্তা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, সেতু উদ্বোধনের কারণে ২৫ জুন মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে মাঝিরকান্দি, কাঁঠালবাড়ী ও বাংলাবাজার ফেরিঘাট বন্ধ থাকবে। এই পথে যাতায়াতকারীদের ওই দিন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচল করতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক ভিআইপি ব্যক্তি পদ্মা সেতু এলাকায় যাবেন। ঢাকা থেকে সেতু এলাকা পর্যন্ত তাঁদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি আয়োজন থাকছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। এ ব্যাপারে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে অনেক গাড়ি ঢাকায় ঢুকবে। আবার ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর পথে বাড়বে যান চলাচল। এ কারণে কোন গাড়ি কীভাবে ঢাকায় ঢোকানো হবে তা ঠিক করে রাজধানীর আশপাশ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ডিএমপির একটি সমন্বয় সভা হয়েছে। সামনে আরেকটি সভা আছে। সেটা গাড়ি প্রবেশ-বাইরের রুটগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন হাতিরঝিল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে কর্মসূচি আছে, সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি চলছে।

জমকালো আয়োজনের ঘোষণা এসেছিল আগেই। ৬৪ জেলায় থাকবে ডিজিটাল ডিসপ্লে। সেতু উদ্বোধনের আগে-পরে ও অনুষ্ঠানের দিন যাতে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতীতেও নানা সময় বড় ধরনের উৎসব আয়োজন ঘিরে রয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনার নজির। শুরু থেকে পদ্মা সেতু ঘিরে যেহেতু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল, তাই এই আয়োজন নিয়ে থাকছে তীক্ষষ্ট নজরদারি। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড, একাধিক ট্রেনে পরপর আগুনের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা, তা নিয়েও তদন্ত চলছে। এদিকে সেতু উদ্বোধনের আগেই আগামী মঙ্গলবার পদ্মা-উত্তর ও পদ্মা-দক্ষিণ নামে দুটি থানা উদ্বোধন করা হবে।

পুলিশের ট্রাফিকের ওয়ারী বিভাগের ডিসি সাইদুর রহমান বলেন, সেতু চালু হলে দোলাইরপাড়, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, চানখাঁরপুল এলাকায়ও গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। যানবাহন উড়াল সড়ক হয়ে এসব এলাকায় নামবে। গাড়ির চাপ দেখে দুর্ভোগ লাঘবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর পোস্তগোলা সেতুতে দীর্ঘকাল ধরে সনাতনি যে টোল তোলা হচ্ছে, তা আর থাকছে না। ওই রুটের অন্য একটি সেতুর টোল প্লাজায় পোস্তগোলা সেতুর টোল নেওয়া হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন দেশি-বিদেশি অতিথি :পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে অনুষ্ঠেয় সুধী সমাবেশে দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দেবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করবে সেতু বিভাগ। অন্যদিকে কাঁঠালবাড়ী প্রান্তে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জনসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি থাকবে। সেখানে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন সকাল ১০টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে নামফলক উন্মোচন ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এর পর গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টায় মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেবেন। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করা হবে। মাওয়া প্রান্তে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তথা সুধী সমাবেশে কাদের আমন্ত্রণ করা হবে তার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের নাম রয়েছে আমন্ত্রণের তালিকায়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিদেরও নামও রয়েছে।

কাঁঠালবাড়ী প্রান্তের জনসভা আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরেশোরে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক এবং জনসভাস্থল পরিদর্শন করে এ প্রস্তুতিকে এগিয়ে রাখছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ ওই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সমন্বয়ে এ প্রস্তুতি চলছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, কাঁঠালবাড়ীর জনসভা ঘিরে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটানো হবে। চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন জানিয়েছেন, এ জনসভাসহ অন্যান্য আয়োজন হবে বর্ণাঢ্য ও ঐতিহাসিক।