Loading..

ম্যাগাজিন

০৩ জুলাই, ২০২২ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ছেলেমেয়েরা “প্রযুক্তিতে আসক্ত” এমন বিশ্বাস যে কারণে সমস্যাজনক

ছেলেমেয়েরা “প্রযুক্তিতে আসক্ত” এমন বিশ্বাস যে কারণে সমস্যাজনক
.

ভুল কথা বার বার বলতে থাকলে সেটা একসময় গিয়ে সত্যে পরিণত হয়। ‘প্রযুক্তিতে আসক্ত’ কথাটা এই বিষয়ের একটা ভালো উদাহরণ।

এটাকে কুযুক্তিও বলতে পারেন। এর আরেকটা বাজে দিক হলো এটা আসক্তির ভুল ব্যাখ্যাও তৈরি করে।

অ্যাডিকশন বা আসক্তি মানে হলো কোনো জিনিসের উপর এক প্রকারের বাধ্যবাধকতামূলক নির্ভরশীলতা যা ব্যক্তির ক্ষতি করে।

কেউ চাইলেই এই আচরণ বা অবস্থা থেকে বের হতে পারে না। নিউরো সায়েন্টিস্ট মার্ক লিউয়িস-এর মতেঅ্যাডিকশন হলো যখন সব বাদ দিয়ে ব্রেইন শুধু একটা জিনিসের উপরই মনোনিবেশ করে।

নেশা বা আসক্তি একটা রোগ। হুট করে কোনো জিনিসের অতি ব্যবহারকে আসক্তি বলা যাবে না। এটাকে বড়জোর খারাপ অভ্যাস বলতে পারেন।

বছরের পর বছর ধরে এই কথাটা চলছে। অনেক ছেলেমেয়ে তো মা-বাবার মুখ থেকে শুনতে শুনতে এখন বিশ্বাসই করে ফেলেছে তারা মোবাইল বা কম্পিউটারের প্রতি আসক্ত।

কিন্তু খোঁজ করলে দেখা যাবে নেশাগ্রস্ততার কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে নাই। তারা ঠিকঠাক চলাফেরাজীবনযাপনখাওয়া-দাওয়াপড়াশুনা সবই করছে। তাহলে তারা আর মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে আসক্ত হয় কীভাবে?

সব জিনিস সবাইকে আসক্ত করে না। চাইলেই সবাই পরিমিত ভাবে এর ব্যবহার করতে পারেএকদমই নিরাপদ বিষয়টা। আসক্তি নির্ভর করে কে ব্যবহার করছেকতটা করছে তার উপর। আসক্তি একদমই ব্যবহার্য বস্তুর উপর নির্ভরশীল না।

তাহলে যখন কেউ কোনো জিনিসে অভ্যস্ত হয় তার সেই অভ্যাসকে কেন আমরা অভ্যাস না বলে আসক্তি বলিএর উত্তর দায়িত্ব না গ্রহণ করার সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিবারের সঙ্গে একত্রে টিভি দেখাকে আমরা গুড বিহেভিয়রের উদাহরণ হিসাবে দেখিকিন্তু একা নেটফ্লিক্স দেখলে বলি স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে।  রকম বলা সহজ। এই রকম বলতে কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয় না।

যেকোনো আচরণের ক্ষেত্রেই এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কী শব্দ আমরা ব্যবহার করছি তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন জীবন যাপনের ধরন পাল্টে দিতে পারে এই শব্দগুলি।

২০১৫ সালের একটা গবেষণায় দেখা গেছেঅংশগ্রহণকারীদের শারীরিক নির্ভরশীলতার গুরুত্ব প্রায় তারা নিজেরা কী পরিবর্তন করতে সক্ষম তার সমান। মনে রাখবেনঅ্যালকোহল ব্রেইনের ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করেফোন বা ল্যাপটপের সে ক্ষমতা নেই। ফোন হাত থেকে রাখতে না পারাকে বড়জোর বদঅভ্যাস বলা যেতে পারে। আসক্তি না।

কিন্তু প্রযুক্তি কী আমাদের ব্রেইনকে বদলে দিচ্ছে নাএটা কি কোকেনের মতই ডোপামিন পাঠায় না ব্রেইনে?

এই ধরনের ভুল এবং চমক দেওয়া কথাবার্তা শুধু তারাই বলতে পারে যাদের গবেষণার ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই।

প্রতিটা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজপিয়ানো বাজানো থেকে শুরু করে নতুন ভাষা শেখা পর্যন্তপ্রতিটা জিনিসই ব্রেইনকে সংযুক্ত করে। ডোপামিন সেই শেখাকে আরো দীর্ঘমেয়াদি  ভালো করে। এর একটাও আলাদা ভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারেরই কেবল বিষয় নয়।

তবে যাদের আগে আসক্তি ছিল বা কোনো অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডার আছে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। আর এর বাইরে যারা আছেন তারা কখনো ফোনে আসক্ত হবেন না।

প্রযুক্তি বিরোধী চিন্তার কিছু বড় সমস্যা আছেযা আমাদের সামাজিক জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা মানে আবিষ্কার থেকে দূরে থাকা। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কার এবং সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তিকেই যদি দূরে সরিয়ে রাখেন বা ক্ষতিকর মনে করেন তাহলে এগুলি থেকে বঞ্চিত হবেন আপনি। একই সঙ্গে এই আবিষ্কারগুলির যে পজিটিভ ফল সোসাইটিতে তৈরি হতে পারে তা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো ভালো ভালো মাধ্যম এবং পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে। যাতে প্রতিদিনই যোগাযোগ আগের দিনের থেকে বেশি দ্রুত হচ্ছে। প্রযুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলে এই দ্রুত যোগাযোগ প্রক্রিয়া থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন এবং তা আপনার অজানাই থেকে যাবে।

প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় দিক হলো অপচয় রোধ এবং সময় বাঁচানো। তার পক্ষে না থাকা মানে প্রকারান্তরে অপচয়ের পক্ষে থাকা।

টেক কোম্পানিগুলির এইক্ষেত্রে এগিয়ে আসা দরকার। যারা একদমই #প্রযুক্তি নির্ভর এবং অতি ব্যবহার করছে তাদেরকে জানানো যে তারা অতিব্যবহার করছে। ‘ইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ’ পলিসি থাকতে পারে এক্ষেত্রেঅতি ব্যবহারকারিদের এটা দিয়ে তারা সতর্ক করতে পারে বা নিয়ম করে দিতে পারে।

এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উচিত প্রযুক্তির অতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে কী কী করা যেতে পারে সে বিষয়ে গবেষণা করে এর একটা সমাধান দেওয়া। বার বার “আসক্ত’ “আসক্ত” বলে বলে আমরা আসলে যা করা উচিত তা না করার চর্চার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি।

এটা ঠিকপ্রযুক্তির কিছু খারাপ দিক আছে। কিন্তু তা শুধু প্রযুক্তিরই আছে এমন না। পরিমিত ব্যবহার এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই একমাত্র র্বতমানের এই তীব্র প্রতিযোগিতার বিশ্বে এগিয়ে থাকা যাবে। তা কীভাবে করা যায় সেটাই কাজের চিন্তা হতে পারে।

আপনি কি প্রযুক্তিকে ক্ষতিকর বা আসক্তির বিষয় মনে করেন?

সৌঃ সি বি

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি