Loading..

ম্যাগাজিন

০৮ জুলাই, ২০২২ ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ব্রেইন স্ট্রোক করলে মাথার ভেতরে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি লাগার কারণ কী? এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

স্ট্রোক

শরীরের অন্যান্য কোষের মতো মস্তিষ্কের কোষেরও অক্সিজেন, পুষ্টিদ্রব্যের প্রয়োজন। এগুলো সরবরাহের দায়িত্ব যে রক্তের তা তো জানা আছেই। রক্ত প্রবাহিত হয় রক্তনালির মাধ্যমে।

মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের রক্তনালি ফেটে গেলে অথবা ব্লক হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশের টিস্যুতে অক্সিজেন, পুষ্টিদ্রব্যের ঘাটতি পড়ে। ফলস্বরূপ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ও-ই অংশের কোষের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনাকেই বলা হয় স্ট্রোক।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ

সাধারণত তিন ধরনের স্ট্রোক হয়ে থাকে।

১) ইস্কেমিক স্ট্রোক

প্রায় ৮৭% স্ট্রোক এই ধরনের।

প্লাক অথবা রক্ত জমাট বাধার জন্য মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে থাকা ধমনীর কোন একটা অংশ ব্লক হয়ে যেতে পারে। ফলে এই অংশ দিয়ে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। নির্দিষ্ট কোষসমূহে অক্সিজেন, পুষ্টিদ্রব্যের ঘাটতি পড়ে যায়, এতে দেখা দেয় ইস্কেমিক স্ট্রোক।

২) হেমোরেজিক স্ট্রোক

মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের ধমনী ছিড়ে গেলেও নির্দিষ্ট কোষসমূহে অক্সিজেন, পুষ্টিদ্রব্য পৌঁছাতে পারে না। এর কারণে দেখা দেয়া স্ট্রোকের নাম হেমোরেজিক স্ট্রোক।

৩) ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক

আগের দুই ধরনের থেকে একটু ভিন্ন ধরনের যা 'মিনি স্ট্রোক' নামেও পরিচিত।

বেশ অল্প সময়ের জন্য ধমনীতে ব্লক তৈরির জন্য মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে সেটিকে ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হতে। [1] তবে এটি হতে পারে ভবিষ্যৎ এর বড় কোন স্ট্রোকের সংকেত।

কারও স্ট্রোক হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবো?

কোন সংকেত না দিয়েই হুট করেই স্ট্রোক হয়ে যায়, তাই এটি খুবই ভয়ংকর বলা চলে।

স্ট্রোকের লক্ষনের বিষয়ে 'FAST' নামের একটা কৌশলের কথা বলা হয় যা কিছুটা হলেও বুঝতে সাহায্য করবে আমাদের পাশেই কেউ সমস্যাতে পড়লো কিনা।

F (face): মুখের এক অংশ অবশ হয়ে পড়া বা হাসি দেয়ার সময় মুখের হাবভাবে অস্বাভাবিকতা।

A (arms): সন্দেহভাজন লোকটাকে তার হাত উপরে তুলতে বলা। তিনি যদি হাতে উপরে তুলতে না পারেন বা তুলতে পারলেও সাথে সাথে পড়ে যায় তো বুঝতে হবে অবস্থা সংকটজনক।

S (speech difficult): একটা কথা বলে সন্দেহভাজন মানুষটিকে পুনরায় সেটা বলতে বলুন। যদি কথা জড়িয়ে ফেলে তবে ভয়ের।

T (time): যতো দ্রুত সম্ভব উপরের লক্ষন দেখা দেয়া মানুষটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন।

এছাড়াও হতে পারে একটা বা দুইটা চোখেই হঠাৎ দেখতে সমস্যা হওয়া, এক বা দুই হাতের আঙুলের অসাড়তা, হাটতে সমস্যা হওয়া, বমি বমি ভাব কিংবা মাথা ব্যথা।

কোন অসুবিধা মনে হলেই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে হাজির হতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

স্ট্রোকের সম্ভাব্য কারন

  1. অতিরিক্ত ওজন
  2. ধুমপান
  3. মদ্যপান
  4. উচ্চ রক্তচাপ
  5. শারিরীক পরিশ্রমের অভাব
  6. হৃদরোগ
  7. বংশগত
  8. ডায়বেটিস
  9. কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া

অন্যান্য আরও অনেক কারনে হতে পারে। স্ট্রোক সচারাচর বেশি বয়সের মানুষের হয়ে থাকলেও এর নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। এমনকি মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেও ঘটে যেতে পারে।


সামান্য কিছু ধারনা দেয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র।

স্ট্রোকের ফলে মাথার অভ্যন্তরের কোষ বা টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় মারা যায়, সেহেতু মাথা ব্যথা কিংবা মাথার ভেতরে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি লাগাটা স্বাভাবিক।

সমস্যা আচ করতে পারলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে চলে যান। আশেপাশের কারও এমনটা দেখলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

তবে ডাক্তারের কাছে নেয়ার আগ পর্যন্ত কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা নিতে পারেন:

  1. কিছু খেতে দিবেন না
  2. এক পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিতে পারেন। মাথা, কাধ একটু উঁচু রাখবেন
  3. শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে নজর রাখুন
  4. জ্ঞান থাকলে কথাবার্তা বলে রোগীকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন
  5. হাত পা নাড়াচাড়া করাতে না পারলে জোর করবেন না
  6. নিজে আক্রান্ত হলে অন্যের সাহায্য নিন
  7. সর্বাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন

স্ট্রোক এতো দ্রুত ঘটে থাকে যে সময় নষ্ট করা মোটেও উচিত নয়, এক সেকেন্ডেরও অনেক দাম।

ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক দেখা দিলেও ঢিলেমি করবেন না। এখান থেকেই ক্রিটিকাল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

স্ট্রোকের কারনগুলা দেখলেই বুঝতে পারবেন এটি থেকে বেচে থাকতে আপনাকে কি করতে হবে— খাবার সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এক কথায় স্বাস্থ্য সম্মত, নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতে হবে। বংশগত হিস্ট্রি থাকলে একটু বেশি সতর্ক থাকবেন।

আর অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি