Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:৩০ অপরাহ্ণ

জলবিদ্যুৎ তৈরি হয় যেভাবে

ভরযুক্ত বস্তু মাত্রই তার মাঝে রয়েছে শক্তির উপস্থিতি। কিন্তু আমরা সবচেয়ে সহজে কাজে লাগাতে পারি গতিশীল বস্তুর শক্তি। অর্থাৎ গতিশক্তি।

আমাদের এই গ্রহের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পানি। প্রচুর পানি অবিরত বয়ে চলছে পৃথিবীর বুক চিড়ে। তৈরি করেছে সাগর মহাসাগর, নদী ঝর্ণাসহ আরও নানা কিছু। পৃথিবীর ঘূর্ণন, বায়ুমণ্ডলীয় তাপ-চাপের হ্রাস-বৃদ্ধি, ভূ-সংস্থান ইত্যাদি নানা কারণে ঢেউ তৈরি হচ্ছে প্রবাহমান পানিতে। সমুদ্র বা স্রোতস্বিনী নদীতে কখনো নামলে ঢেউয়ের শক্তি নিশ্চয়ই টের পেয়েছেন।

পানির ঢেউয়ের এই শক্তিকে মানুষের কাজে লাগানোর ইতিহাস অনেক পুরোনো। শত শত বছর ধরে মানুষ পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শস্য মাড়াই, আটা তৈরির মতো পরিশ্রমের কাজগুলো করেছে। আধুনিক যুগে মানুষ আরও একধাপ এগিয়ে তৈরি করছে জলবিদ্যুৎ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পৃথিবীর মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৬.৩৪ শতাংশের জোগান এসেছে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এমন ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পাঁচটিই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।প্রবাহিত পানির শক্তিটা আসে মূলত অভিকর্ষ (মানে, পৃথিবীর মহাকর্ষ) থেকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে সূর্যের তাপে বা উদ্ভিদের প্রস্বেদনের কারণে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় আকাশে। ওপরে উঠে আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে জলীয়বাষ্প। পরিণত হয় পানির কণায়। এরপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে আবার পৃথিবীর বুকে। তাপমাত্রা অনেক কম হলে জলীয়বাষ্প বরফে পরিণত হয়ে তুষার আকারে ঝড়ে পড়ে। বৃষ্টি বা তুষারপাত বেশি হয় উঁচু এলাকাগুলোতে। ফলে এসব পানি গড়িয়ে তৈরি করে নদী। সবশেষে এসে পড়ে সমুদ্রে। পুরো ব্যাপারটিকে বলা হয় পানিচক্র।

এই যে উঁচু এলাকা থেকে থেকে বৃষ্টির পানি নদী বা সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে, এর কারণ মহাকর্ষ। আমরা সবসময় শুনি, পানি উঁচু স্থান থেকে নিচু জায়গার দিকে প্রবাহিত হয়। কথাটি কিন্তু পুরোপুরি সত্যি নয়।

পানি বা যেকোনো তরলই মহাশূন্যে কোনো পাত্র ছাড়াই একজায়গায় জমা হয়ে থাকে। ভেসে বেড়ায়। কারণ সেখানে মহাকর্ষের টান বা অভিকর্ষজ ত্বরণ নেই। উঁচুনিচু ব্যাপারটা বিজ্ঞানের ভাষায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কম-বেশি ছাড়া আর কিছু না। ভূপৃষ্ঠের যে অংশটি কেন্দ্র থেকে যত দূরে, অর্থাৎ উঁচুতে, সেই অংশের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান তত বেশি। একইভাবে যে অংশটি কেন্দ্রের কাছাকাছি বা নিচুতে, সেই অংশের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান তত কম।

তাই পানি বা যেকোনো তরল মূলত বেশি অভিকর্ষজ ত্বরণ থেকে কম অভিকর্ষজ ত্বরণের দিকে চলে। পানি পায় গতি। ভরযুক্ত কোনো বস্তু গতিশীল হলেই তৈরি হয় গতিশক্তি। এভাবেই প্রবাহিত পানিতে আসে শক্তি।


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি