Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২৬ মে, ২০২৩ ০৮:২৭ অপরাহ্ণ

কারমাইকেল কলেজ,রংপুর।

১৯১৩ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল রংপুর এলে তাঁকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেয়া হয়। ঐ সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানেই অত্র অঞ্চলে একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হয়ে, তিনি জানান এটির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে তিন লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি রংপুর অঞ্চলের রাজা, জমিদার, বিত্তবান ব্যাক্তি ও শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে সভা ডাকা হয়। কথিত আছে, অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকা সভায় তৎকালীন দানশীল জমিদার ও বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ কে কত টাকা দিবেন তা মুখে বলে অঙ্গীকার করেন এবং কাগজে লিপিবদ্ধ করেন। এক্ষেত্রে টেপার জমিদার তার মুখে উচ্চারিত ১০,০০০ টাকা লিখতে গিয়ে টাকার অংকের জায়গায় ভুল করে ডান পাশে একটি শূন্য বেশী বসিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে তার টাকার পরিমাণ দাড়ায় এক লক্ষ টাকা। সভা শেষে সকলের লিখিত টাকার অংক যখন পড়ে শোনানো হচ্ছিল তখন অন্নদা মোহন রায় চৌধুরী (টেপার জমিদার) তার অঙ্গীকারকৃত টাকার অংক শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। কারও কারও মতে তিনি মূর্ছা গিয়েছিলেন। তবে তিনি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারকৃত টাকার অংকই দান করেছিলেন । এই দানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই কারমাইকেল কলেজে প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন দর্শনীয় মূল ভবনের ঠিক মাঝের হল ঘরটির তার নামানুসারে “অন্নদা মোহন হল” নামকরণ করা হয় । প্রতিষ্ঠার জন্য যারা অর্থ এবং জমি দান করেছিলেন তাদের ২৮ জন দাতার নাম পাথরে খোদাই করে লেখা আছে। কেউ কেউ নগদ অর্থ দান করেন। কেউ বা দান করেন জমি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য। সবচেয়ে বেশি জমি দান করেন, কুন্তির প্রসিদ্ধ জমিদার ও রংপুরের তৎকালীন সবচাইতে শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী, তারা দুই ভাই প্রায় সাড়ে চারশো বিঘা নিষ্কণ্টক জমি দান করেন।[৫]

১৯১৩ সালে রংপুরে গণ সম্বর্ধনায় গভর্নর লর্ড কারমাইকেল তিন লক্ষ টাকা সংগ্রহের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১৯১৬ সালের মধ্যেই সংগৃহীত হলো চার লক্ষাধিক টাকা। এর পর ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল রংপুরে এসে কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারেই কলেজটির নামকরণ করা হয় “কারমাইকেল কলেজ”। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মূল ভবন নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হয় জেলা পরিষদ ভবনে ।[৫] জার্মান নাগরিক ড. ওয়াটকিন ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ।

১৯১৭ সালে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক চালু করা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ১৯২২ সালে ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ১৯২৫ সাল থেকে শুরু হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে নতুনভাবে স্থাপিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর এটি তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৫]

১৯৬৩ সালের ১লা জানুয়ারী কলেজটি সরকারীকরণ করা হয় । এটিকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে ১৯৯৫ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রংপুরবাসীর দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত বছর থেকে আবারও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পাঠদান চালু করা হয়েছে।[৫]

ক্যাম্পাস[সম্পাদনা]

ক্যাম্পাস শহীদ মিনার, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর

৩০০ একর ভূমির উপর অবস্থিত কারমাইকেল কলেজের সুবিশাল ক্যাম্পাস। ছায়া সুনিবিড় এই বিশাল প্রাঙ্গনে একটি ক্যান্টিন, একটি সুদৃশ্য মসজিদ, একটি মন্দির, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন এবং বিশাল দুটি খেলার মাঠ। ক্যাম্পাসের দক্ষিণে রংপুর ক্যাডেট কলেজ, উত্তরে রংপুর রেল স্টেশন ও ঐতিহ্যবাহী লালবাগ হাট-বাজার এবং চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রাবাস।

বর্তমানে কলেজে শিক্ষার্থীর প্রায় ২৪ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য সাতটি আবাসিক হলে আসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র এক হাজার। ছাত্রীদের জন্য তিনটি ও ছাত্রদের জন্য রয়েছে চারটি আবাসিক হল।[৫]

ছাত্রীদের তিনটি আবাসিক হলঃ

  • তাপসী রাবেয়া হল
  • বেগম রোকেয়া হল
  • জাহানারা ইমাম হল

ছাত্রদের তিনটি হলঃ

  • জি এল ছাত্রাবাস
  • ওসমানি ছাত্রাবাস
  • সিএম ছাত্রাবাস (শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য)
  • কে বি ছাত্রাবাস (পরিত্যক্ত)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি